দিনের বেলা যেন মেলা লাগে উক্ত এলাকার দিশা জনকল্যাণ কেন্দ্র বা চবকা এলাকায়। ক্যামেরা দেখে মুখ লুকিয়ে পালায় তারা।
তৃণাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়,আসানসোল- সকাল হলেই এ পাড়ায় শোনা যায় " মেয়ে চাই, মেয়ে আছে "। শুনলে অবাক হতে হয়। সভ্য শিক্ষিত সমাজে এ হেন ভাষা মোটেই সুখকর নয়। এমন ভাবেই ডাকেন মধ্যবয়স্কা মহিলারা। শুধু তাই নয় , এও বলেন যে দরদাম বাইরে হবে না। ঘরের ভিতর। পছন্দ হলে ঠিক আর পছন্দ না হলেও কোনো সমস্যা নেই। তবু বাবু একবার দেখে তো নাও। তবে এই ব্যবস্থা কিন্তু মেয়ে বিক্রির জন্য নয়। শুধু পেটের টানে। এমনটাই বলছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটি থানা অন্তর্গত লছিপুর যৌন পল্লীতে।
শুধু তাই নয়। আমাদের গোপন ক্যামেরায় উঠে এল অনেক বিষয়। একজন তো বলেই ফেললেন-এই সময় করোনা লকডাউন আবার পুলিশের ভয়ে গ্রাহকরা থাকতেই চায় না। মেয়ে(Sex workers) আছে অনেক। তবে সাধারণ মেয়েরা গ্রাহক প্রতি ১৫০ টাকা পায় আর সুন্দরী হলে ৩০০ টাকা। কারণ ৩০ শতাংশ দিতে হয় বাড়ির মালিককে। তবে কাজ পায় সব মেয়েই।
দিনের বেলা যেন মেলা লাগে উক্ত এলাকার দিশা জনকল্যাণ কেন্দ্র বা চবকা এলাকায়। ক্যামেরা দেখে মুখ লুকিয়ে পালায় তারা। কেউ বা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। তবে শুধু কি পরপুরুষ কে সুখ দিতে বা অর্থ উপার্জনের জন্য এই ব্যবসা ? খোলসা করে বললেন এক যৌন কর্মী। ভাঙা টালির ঘরে বসে বললেন স্বামী র ব্রেন টিউমার। ছেলেরা বড়ো কিন্তু কাজ নেই। কাজ করে না তারা। তাই সমস্ত সংসার টানতে হয় তাদের। আর এই ব্যবসায়ী হাতিয়ার। বিয়ের প্রস্তাব এলেও আর নয়।
আগে ভালো ছিল। ব্যবসা হত। এখন গ্রাহক আসেই না। কোনোমতে সংসার চলে। তবে বিয়ে আর নয়। সংসারের অনেক দায়িত্ব আছে। দেশে ছেড়ে এসেছে ছেলে পুলে কে। যদিও এলাকার সমাজকর্মী তথা দুর্বারের দায়িত্বে থাকা মর্জিনা বলেন - যে সময়ে ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। করোনার ভয়ে আসছে না গ্রাহক। তাই হাইওয়ের ধারে রাতের অন্ধকারে যেতে হয় মেয়েদের।
প্রসঙ্গত, এই যৌনকর্মীদের কথা শুনলেই সমাজে কেমন যেন উচ্ছলতা তৈরি হয়। কিন্তু নিজের শরীর বিক্রি করে পরপুরুষকে সুখ দিয়ে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন আর তা দিয়ে সংসার চালানো কত দুর্বিষহ তা মুখ ফুটে বলতে চান না এরা। লক ডাউন-করোনা কেড়েছে ব্যবসা, পুলিশের ভয়ে আসে না গ্রাহক। ফলে অন্ধকারে এই পল্লী ছেড়ে রাস্তার ধারে বা জঙ্গলেও সময় দিতে হয় তাদের।
কিন্তু নিজেদের শরীর বিক্রি করে যারা সংসারের কথা ভাবে , তাদের কথা কে ভাবে। এমনটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে এই যৌন কর্মীদের মধ্যে। কারন বেশিরভাগ মেয়েই সংসারে অত্যাচারিত হয়ে এসেছে এই ব্যবসায় । তাই কষ্ট হোক এখানেই কিন্তু সাংসারিক অশান্তি আর সহ্য করতে নারাজ তারা। তাই বিয়ের কথা উঠলেও মুখ ফিরিয়ে নেন তাঁরা।