মুর্শিদাবাদ জেলার ৭ পুরসভার এবার নির্বাচন হয়েছে। এগুলি হল জঙ্গিপুর পুরসভা, ধুলিয়ান পুরসভা, কান্দি পুরসভা, মুর্শিদাবাদ(সদর) পুরসভা, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা, বহরমপুর পুরসভা, বেলডাঙা পুরসভা। এদিকে নদিয়া জেলার ১০টি পুরসভায় এবার নির্বাচন হয়েছে। এগুলি হল নবদ্বীপ পুরসভা, কৃষ্ণনগর পুরসভা, রানাঘাট পুরসভা, তাহেরপুর নোটিফায়েত এরিয়া, শান্তিপুর পুরসভা, বীরনগর পুরসভা, কল্যাণী পুরসভা, হরিণঘাটা পুরসভা, চাকদহ পুরসভা, গয়েশপুর পুরসভা।
মুর্শিদাবাদ (Murshidabad Municipal Elections 2022) জেলা পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা বিভাগের একটি জেলা। এই জেলার মধ্য দিয়ে ভাগীরথী নদী বয়ে গিয়ে জেলাকে দুভাগে ভাগ করেছে। নদীর পশ্চিমের অংশ রাঢ় অঞ্চল ও পূর্বের অংশ বাগড়ি অঞ্চল নামে পরিচিত। ৫.৩১৪ বর্গ কিলোমিটার, আয়তনের এলাকা এবং ৭১.০২ লক্ষ জনসংখ্যা থাকায় এটি একটি জনবহুল জেলা। মুর্শিদাবাদ ভারতের নবমতম ভারতের ৬৪১টি জেলার মধ্যে অন্যতম একটি জনবহুল জেলা। এই জেলার সদর দপ্তর বহরমপুর শহরে অবস্থিত। রবিবার এই জেলায় সাতটি পৌরসভায় নির্বাচন। এই পুরসভাগুলিতে গত নির্বাচনের চিত্রটা কেমন ছিল, এবারের পুরভোটে কী ইস্য়ুকে ঢাল করেছে শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দল, চলুন দেখে নেওয়া যাক।
বেলডাঙ্গা পুরসভা (Beldanga Municipality Election Result Live)
মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট ৮টি পৌরসভা ও ২৬টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম একটি হল এই বেলডাঙ্গা পৌরসভা। বেলডাঙা শহরের জনসংখ্যা হল ৩০,৩৬১ জন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও নগর উন্নয়ন বিষয় হল এই নির্বাচনের ইস্যু।
ডোমকল পুরসভা (Domkol Municipality Election Result Live)
ডোমকল মহকুমা রানিনগর-১, রানিনগর-২ ও জলঙ্গি ব্লক চারটি নিয়ে গঠিত। এই চারটি ব্লকে ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং দুটি সেন্সাস টাউন রয়েছে। মহকুমার সদর ডোমকল। হাসপাতাল থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই, পানীয় জলের সমস্যা এই ইস্যুতেই এখানে হবে এই বছরের নির্বাচন।
কান্দি পুরসভা (Kandi Municipality Election Result Live)
কান্দি পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৪৫ হাজার ৫২৯ জন। একটা সময়ে কংগ্রেসের গড় ছিল মুর্শিদাবাদ জেলা। পরে দল পরিবর্তন করে শাসক দলে যোগদান করে বিরোধী কাউন্সিলাররা। ফলেএকের পর এক পুরসভা হাতছাড়া হয় বিরোধীদের। তৃণমূল একের পর এক পৌরবোর্ড গঠন করে। এবছর, কান্দি পৌরসভার তৃণমূল প্রার্থী ১৮জন। বিজেপি ১৭জন। সিপিআই ৫জন। সিপিআই(এম) ৫জন। জাতীয় কংগ্রেস ১৭জন। নির্দল প্রার্থী ১৭জন। মোট ৭৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন কান্দি পৌরসভাতে।
জঙ্গিপুর পুরসভা (Jangipur Municipality Election Result Live)
বামদুর্গ বলে পরিচিত ছিল এই পৌরসভা। এই পৌরসভা ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। জঙ্গিপুর পৌরসভা মোট ভোটার সংখ্যা ৭১ হাজার ৪৩১জন। বামফ্রন্টের দখলে জঙ্গিপুর পৌরসভা থাকলেও ২০১৬ সালে চেয়ারম্যান সহ আটজন বামফ্রন্টের, কংগ্রেসের ছয় জন, বিজেপি একজন কাউন্সিলর সেও তৃণমূলে যোগদান করে। ফলে তৃণমূল দখল করে জঙ্গিপুর পৌরসভা। নাগরিক উন্নয়নের ইস্যু ছিল এখানকার নির্বাচনের সবচেয়ে চর্চিত বিষয়।
জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা (Jiaganj-Azimganj Municipality Election Result Live)
এই পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ৯৭৬জন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৬২জন । ২০১৬ সালে বেশিরভাগ জয়ী কাউন্সিলর তারা শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস যোগদান করেন। ফলে শাসকদল তৃণমূল হাতে চলে যায় জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পৌরসভা।
ধুলিয়ান পুরসভা ( Dhulian Municipality Election Result Live)
ধুলিয়ান পৌরসভা মোট ভোটার সংখ্যা ৭৩হাজার ৯০জন। ২১ টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৭টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি দল। সিপিআই লড়াই করছে ১টি আসনে। এই পৌরসভায় মূলত নগর উন্নয়ন এবং পুর্নবাসন ইস্যুতেই এই পৌরসভায় ভোটের লড়াই।
বহরমপুর পুরসভা( Berhampore Municipality Election Result Live)
বহরমপুর পৌরসভার মোট ভোটার ১ লক্ষ ৩০হাজার ২১৫জন। ২০১৩ সালে নির্বাচনের সময় কংগ্রেস পায় ২৬টি আসন, তৃণমূল পায় ২টি আসন। এই বছর বহরমপুর পৌরসভার ২৮টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও নগর উন্নয়নোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই বছরের নির্বাচন হবে এই পৌরসভায়।
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের মাটি নদিয়া (Nadia Municipal Elections 2022)। শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক ঐতিহাসিক উদাহরণ এই নদিয়া। পানীয় জল থেকে রাস্তা , পুর পরিষেবা সত্যিই কতটা সন্তুষ্ট সাধারণ মানুষ? আদৌ কি সফল হয়েছে মানুষের প্রত্যাশা? না কি চলতি বছরের নির্বাচনের দিকেই তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। মাত্র এক বছর আগের কথা, বিধানসভা নির্বাচনের আগে নানান প্রতিশ্রুতির গঙ্গা বয়েছে এখানকার এলাকাবাসীর সামনে। বিধানসবা ভোটে বিপুল অঙ্কের ব্যবধানে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনঘটে মমতা সরকারের। বছর ঘুরে ঠিক এক বছর পর আবার রাজ্যে পুরভোট। নদিয়া জেলার অন্তর্হিত কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পের কথা প্রায় সকলেরই জানা। তবে এই শিল্পের প্রতি আদৌ লক্ষ্যপাত করেছেন রাজ্য সরকার তা নিয়ে বর্তমানে একাধিক প্রশ্ন। এখানে মৃত্তিকা ভবন বলে মিউজিয়াম তৈরি হয়েছিল যা বর্তমানে একটি বিয়েবাড়িতে পরিণত হয়েছে, যা নিয়ে শাসক দলকে বিঁধেছেন বিরোধীরা। কেউ বলছেন আদতে মৃৎশিল্প নিয়ে রাজ্য সরকার যা করেছে তা না কি পুরোটাই লোক দেখানো। এছাড়াও রাস্তাঘাটের সমস্যা না কি সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নবদ্বীপ পুরসভা (Nawadip Municipality Election Result Live)
নদিয়া জেলার নবদ্বীপ এলাকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১২৫,৫৪৩ জন। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান হিসাবে এই জায়গা প্রায় সকলেরই জানা। মোট ২৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পুরসভায় ভোট হতে চলেছে ২৭ফেব্রুয়ারি রবিবার। করোনা অতিমারির সময় এই পুরসভায় টিকাকরণের যে উদ্যোগ তা এই পুরভোটে দারুণ প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কৃষ্ণনগর পুরসভা (Krishnanagar Municipality Election Result Live)
নদিয়া জেলার আর একটি পুরসভা কৃষ্ণনগর। সেই অঞ্চলের মূল নক্ষত্রই হল মৃৎশিল্প। একদিকে শাসক দলের দাবি তাঁদের আমলেই বাংলায় মৃৎশিল্পের বৃহত্তর উন্নতি ঘটেছে। অন্যদিকে বিরোধীরা দাবি করেছেন যে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে রয়েছে শাসক দল। অপশাপাশি চলতি বছরের পুরভোটে কৃষ্ণনগর একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরসভা কেন্দ্র। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এক তরফা বিরাট অঙ্কের ব্যবধানে তৃণমূলের জয় হলে ও এই কৃষ্ণনগত বিধানসভায় হারতে হয়েছিল শাসক দল অর্থাৎ তৃণমূলকে। সেখানে বিজেপির প্রতীকে জিতেছিলেন মুকুল রায়। পরবর্তীতে তিনিই গিয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। যদিও বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য মুকুল রায় তা নিয়ে রয়েছে ঘোর সংশয়।
রানাঘাট পুরসভা (Ranaghat Municipality Election Result Live)
২০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রানাঘাট পুরসভার জনসংখ্যা ২৩৫,৫৮৩। ১৮৬৪ সালে তৈরি হয়েছিল এই রানাঘাট পুরসভা। সম্প্রতি কিছুদিন আগেই জানুয়ারি মাসে এই রানাঘাট অঞ্চলেই তিনটি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ে নি বিজেপি।
তাহেরপুর পুরসভা (Taherpur Municipality Election Result Live)
তাহেরপুর শহরের জনসংখ্যা হল ২০,০৬০ জন। এই পুরসভায় রয়েছে মোট ১৩টি ওয়ার্ড । ভোটের আগে এই অঞ্চলের রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার প্রভাব পুরভোটে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
শান্তিপুর পুরসভা(Shantipur Municipality Election Result Live)
২৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত শান্তিপুরের জনসংখ্যা হল ২,৮৮,৭১৮ জন। একুশের বিধানসভা ভোটে শান্তিপুর বিধানসভা ভোটে জয় পেয়েছিল বিজেপি। চলতি বছরের পুরভোটে কি জায়গা ধরে রাখতে পারবে বিজেপি না কি সেই জায়গা দখল করবে তৃণমূল- সিপিএম- বা কংগ্রেস সেটাই এখন দেখার।
বীরনগর পুরসভা (Birnagar Municipality Election Result Live)
বীরনগর শহরের জনসংখ্যা হল ২৬,৫৯৬ জন। ১৪টি ওর্য়াড নিয়ে গঠিত এই পুরসভার আয়তন ৬ বর্গকিমি। বর্ষাকালে জলনিকাশী ব্যবস্থা এবং যে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে পুরো পরিষেবা এই অঞ্চলের ভোটার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
কল্যাণী পুরসভা (Kalyani Municipality Election Result Live)
২০১১ সালের রিপোর্ট অনুসারে কল্যাণী শহরের জনসংখ্যা হল ১০০,৬২০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫০.৯৯% এবং মহিলা ভোটার ৪৯% .সুতরাং এই অঞ্চলে মহিলা ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতিমধ্যে কল্যাণী পুরসভা এলাকার বাসিন্দাদের পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা খরচ করে জল প্রকল্প তৈরির কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার যা এই পুরভোটের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
হরিণঘাটা পুরসভা (Haringhata Municipality Election Result Live)
মোট ১৭টি ওর্য়াড রয়েছে এই পুরসভা কেন্দ্রে। চলতি বছরের পুর-নির্বাচনে হরিণঘাটা একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র। কেন জানেন? ২০১৯ পুরভোটে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে হরিণঘাটা পুরসভা দখলে রাখতে পেরেছিল তৃণমূল। হরিণঘাটার দুগ্ধ প্রকল্প এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
চাকদহ পুরসভা (Chakdah Municipality Election Result Live)
২০১১ সালের রিপোর্ট অনুসারে চাকদহ শহরের জনসংখ্যা হল ৮৬,৯৬৫ জন। মোট ২১টি ওয়ার্ড রয়েছে এই পুরসভা কেন্দ্রে। চাকদহ পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী জানিয়েছিলেন যে এই বছরে ও তৃণমূল ভাল ফলাফল করবে সেখানে। ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি ঘুরে তিনি জনসংযোগ চালিয়েছেন এই প্রার্থী। আদতে সাধারণ মানুষ কতটা সন্তুষ্ট তার প্রমাণ মিলবে ভোটার ফলাফলেই।
গয়েশপুর পুরসভা (Gayeshpur Municipality Election Result Live)
মোট ১৮টি ওর্য়াড রয়েছে এই পুরসভা কেন্দ্রে। চলতি বছরের শুরুতেই যখন করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল তখন গয়েশপুর পুর কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তে একপ্রকার নাজেহাল হতে যায় সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশকে। পুরসভার তরফে জানানো হয়, পুর এলাকার ৬টি বাজার সংক্রমণের ঊর্দ্ধলগ্নে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত একবেলা খোলা থাকবে, যা সমর্থন করেন নি অনেকেই। কেউ কেউ বলেন 'এই নিয়মে আরও রোগ ছড়াবে, এটা কেন করা হল বুঝতে পারছি না।' গোটা ঘটনাটি পুরভোটের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ওয়াকিবহল মহলের মত।