
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের লাইব্রেরিতে এবার রাখা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একাধিক বই। ২৩টি জেলাকে পাঁচটি সেট-এ ভাগ করে তালিকা পাঠানো হল জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছে। যার মধ্যে প্রতিটি সেটে রয়েছে ৫০০-রও বেশি বই। মোট ২০২৬টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে লাইব্রেরি উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার অনুদান। প্রতিটি স্কুল পাবে ১ লক্ষ টাকা করে। এই অর্থ দিয়ে নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী বই কেনার নির্দেশ দিয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর।
এই পাঁচটি সেটের মধ্যে সেট ১-এ উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা-সহ মোট আটটি জেলাকে তালিকা পাঠানো হয়ছে। সেট ২-এ রয়েছে পশ্চিম অঞ্চলের চারটি জেলা। সেট ৩-এ দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ আরও তিনটি জেলা। সেট ৪-এ কলকাতা-সহ আরও পাঁচটি জেলা এবং সেট ৫-এ রাখা হয়েছে রাজ্যের তিনটি জেলাকে। ওই সব ক’টি জেলাতেই পাঠানো তালিকা অনুযায়ী বই কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে।
এই বই বিতরণের তালিকায় চোখ রাখলে দেখা যাবে, বিভিন্ন লেখক লেখিকার সঙ্গে নাম রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। ২৩ টি জেলাকে ভাগ করে দেওয়া পাঁচটি সেটের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ‘মা’, ‘কথা’-সহ আরও একাধিক বইয়ের নাম রয়েছে।
তবে স্কুলের গ্রন্থাগারের মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখা নিয়ে বিতর্কও উঠেছে শিক্ষামলে বেশ। আবার অনেকেই সম্মানের সাথে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই। নারায়ণ দাস বাঙ্গুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, ‘‘আমাদের গ্রন্থাগারে যে তালিকা পাঠানো হবে সেই বই-ই রাখতে হবে। তাতে যদি মুখ্যমন্ত্রীর বই থাকে, আমরা স্বাগত জানাই তাঁর বইকে’’।
অন্যদিকে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘রাজ্যের স্কুলগুলির গ্রন্থাগারের জন্য অর্থ অনুদানের পাশাপাশি ৫১৫টি বই গ্রন্থাগারে রাখার শর্ত দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে প্রায় ৯০টির কাছাকাছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা বই! আমরা নজিরবিহীন এই নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই শর্ত তুলে নিতে হবে’’।
অনেকের কাছেই এই পদক্ষেপ সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারও বটে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকাকালীন আমাদের রাজ্যের কোনও মুখমন্ত্রী তো দূরের কথা, ভারতের কোনও রাজ্যে এই দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এ ভাবে স্কুলগুলোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার।’’
স্কুলগুলোতে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই রাখা নিয়ে বিতর্ক উঠলে পাল্টা জবাব দিতে পিছিয়ে থাকেনি শাসক দল। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি বিজন সরকার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখা নিয়ে অসুবিধা কোথায়! রাজনীতির পাশাপাশি কেউ সাহিত্যচর্চা করতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর বই অনেক বেশি বিক্রি হয়। অর্থাৎ পাঠকের চাহিদাও রয়েছে। পাঠক ঠিক করবে কার বই রাখা হবে কার রাখা হবে না। তাঁর বই রাখা নিয়ে অসুবিধা হওয়া কাম্য নয়’’।
সাহিত্যিক হিসেবে স্কুলে মুখ্যমন্ত্রীর রচনার স্থান থাকা নিয়ে আপত্তি নেই অনেকের, তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুলগুলির শিক্ষার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করায় নিন্দাও কুড়িয়েছেন মমতা ব্যানার্জী।