মুকুল রায়ের দিল্লি যাত্রা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সূত্রের খবর দিল্লি সফরের সঙ্গে কোনও রাজনীতির যোগ নেই বলেও জানিয়েছেন মুকুল রায়।
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুকুল রায়ের দিল্লি যাত্রা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু রায় দাবি করেছেন, তাঁর বাবাকে অপহরণ করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর বাবার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক নেই এমন কথাও বলতে শোনা গেছে শুভ্রাংশুকে। সেই সময়ই সামনে এল মুকুল রায়ের বয়ান। তিনি দিল্লিতে নেমে বলেছেন তাঁর এই রাজধানী সফরের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। একজন প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়ক হিসেবেই তিনি দেশের জাতীয় রাজধানীতে এসেছেন।
সংবাদ মাধ্য়ম দ্যা টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী এক মহিলা জানিয়েছেন, মুকুল রায় তাঁকে বলেছেন, কিছু কাজের জন্য তাঁকে এখানে থাকতে হবে। এই সফরের সঙ্গে রাজনীতিক কোনও সম্পর্ক নেই। এখানেই শেষ নয়, মহিলা দাবি করেছেন, মুকুল রায় আরও বলেছেন, 'আমি একজন প্রাক্তন সাংসদ, একজন বিধায়ক, আমি কী দিল্লিতে আসতে পারি না? আমি নিয়মিত দিল্লিতে আসছি। তবে এবার ব্যবধানটা একটু বেশি হয়ে গেছে। যতদিন প্রয়োজন হবে তত দিন আমি এখানে থাকব।' তবে মুকুল রায় আরও জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য তিনি দিল্লিতে আসেননি। সম্প্রতি মুকুল রায়ের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
সূত্রের খবর মুকুল রায়ের সঙ্গে নাকি তাঁর পরিচালক ভগীরথ মাহাত ও তাঁর চালক রাজু ছিলেন। সূত্রের খবর দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তাঁর ছেলে শুভ্রাংশুর সঙ্গে তাঁর নাকি ঝগড়া হয়েছিল। যাইহোক এই দাবির সমর্থনে এখনও কোনও বার্তা পাওয়া যায়নি। যদিও মুকুল রায়ের দিল্লি যাত্রা নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শুভ্রাংশু। তিনি দাবি করেছেন তাঁর বাবাকে জোর করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিমান থেকে বাবাকে নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি বলেও অভিযোগ শুভ্রাংশুর।
তবে মুকুল রায় এখনও প্রকাশ্যে কিছুই জানাননি। তিনি দিল্লিতে কেন গেছেন বা তার কী কাজ রয়েছে তা নিয়েও চুপ করে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে বিজেপিও মুকুল রায়ের ইস্যুতে পুরোপুরি চুপচাপ। তবে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, অভিষেককে জড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়। অভিষেককে নিয়ে অনেক দিন ধরেই অনেক কিছু চলছে। মুকুলবাবু তো কিছু বলেননি। এখন তাঁর ছেলে অভিষেকের নাম করছেন। সব বড় বড় ব্যাপার। কুণাল আরও বলেছেন, মুকুল বাবু তিন দিন বিজেপিতে আর তিন দিন তৃণমূলে। রবিবার বাড়িতে বসে চা খান। কুণাল আরও বলেছেন, মুকুলবাবু বিজেপিতে রয়েছেন কিনা তা নিয়ে স্পিকারের একটা পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তবে গোটা পরিস্থিতিকে জগাখিচু়ড়ি বলেও তিনি বর্ণনা করেছেন।
মুকুল রায় - ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরির পর থেকেই মুকুল রায় ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সেনাপতি। মমতার সবথেকে ঘনিষ্ট সহযোগী। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস এই রাজ্যের শাসনভার দখল করার অন্যতম কারিগর ছিলেন মুকুল রায়। তবে ২০১৭ সালের নভেম্বরে মুকুল রায় তৃণমল কংগ্রেস ছেড়ে দেন। তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপির সাফল্যেরও অন্যতম কারিগর তিনি। কিন্তু ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও জিতেছিলেন বিজেপির টিকিটে। কিন্তু তারপরই বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ছন্দপতন। তিনি এই বছরই জুন মাসে তৃণমূলে যোগদান করেন। তবে এখনও বিধানসভার অন্দরে মুকুল রায় বলেননি তিনি দলত্যাগ করেছেন।