কন্যাশ্রী প্রকল্পেও এবার কাটমানির থাবা। ছাত্রী পঞ্চায়েত দফতরের কর্মীর কথায় রাজি না হওয়াতেই দেড় বছর ধরে বন্ধ ভাতা।
নিয়োগ দুর্নীতি সহ একাধিক দুর্নীতির মধ্যেই এবার সামনে এল কন্যাশ্রী প্রকল্পের দুর্নীতি। কন্যাশ্রী প্রকল্প রাজ্যের গর্ব। দেশের বিদেশে আলোচিত হয়েছে এই প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য সম্মানও পেয়েছেন বিদেশ থেকে। এবার সেই কন্যাশ্রী প্রকল্পই রাজ্য সরকারের মুখ পোড়াল বলা যেতে পারে। কারণ মালদায় এক ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, তিনি কাটমানির টাকা না দেওয়ার তাঁর কন্যাশ্রী ফর্ম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। মালদার এক সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে ছাত্রী সরব হয়েছেন। ছাত্রীর অভিযোগ তাঁকে বিবাহিত দেখিয়ে তাঁর কন্যাশ্রী ফর্ম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
মালদার তরুয়া ১ নম্বর ব্লকের চাঁদমণি-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বরিউল ইসলাম। তাঁর মেয়ে সুলতানা পারভিন স্থানীয় বাটনা জেএমও সিনিয়র মাদ্রাসার একদশ শ্রেণীর ছাত্রী। বছর দেড়েক আগে ১৮ বছর পার করেছেন। তারপরই কন্যাশ্রী প্রকল্পের নিময় মেনে নাম নথিভুক্ত করেছেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে 'K-2' ফর্ম পুরাণ করেন তিনি। মাদ্রাসার তরফে ফর্ম পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে জেলা প্রশাসনের দফতরে। সুলতানরা অভিযোগ তাঁর আবেদনপত্র অনুমোদন করে ব্লক স্তরে টাকা পাঠাতে দাবি করেছিল পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্মী। কিন্তু সুলতানা সেই দাবি মানতে রাজি ছিলেন না। তাতেই সুলতানাকে বিবাহিত বলে উল্লেখ করা হয়। তাতে ছাত্রীর আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যায়।
টানা দেড় বছর ধরে পঞ্চায়েত দফতরে ঘোরাঘুরি করেন সুলতাকা। ঘুরেছেন একাধিক সরকারি দফতর। শেষপর্যন্ত টাকা না পেয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সুলতানা। অভিযোগপত্রের লিলি সুলতানা রতুয়া থানা আর জেলা শাসক , মহকুমা শাসকের কাছেও পাঠিয়েছেন। যদিও গোটা ঘটনা জানতে পেরেই তৎপর হয়েছে বিডিও। তিনি সাফ জানিয়েছেন কন্যাশ্রী প্রকল্পের গাফিলতি কিছুতেই মানা হবে না। যদি কেউ এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
ছাত্রী সুলতানা জানিয়েছে, 'পঞ্চায়েত থেকে আমাকে বিবাহিত বলে রিপোর্ট পাঠান হয়েছিল।' তাই আমার ফর্ম বাতিল হয়েছে। তাই তিনি অভিযোগ করেছেন। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক আনওয়ারুল হক বলেছেন, 'মেয়েটির কাছে সব জানতে পেরে আমি নিজে পঞ্চায়েত অফিসে ফোন করেছিলান। কেন ওকে বিবাহিত দেখান হয়েছে তাও জানতে চাই। কিন্তু কোনও উত্তর পায়নি। তারপরই ব্লক অফিসে যোগাযোগ করি। '
এই ঘটনার প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূল আমলে প্রশাসনের সর্বস্তরে কাটমানি রাজ চলছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন বিষয়টি খুবই গুরুতর। কোনও পড়ুয়া যাতে সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হয় তার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছে। যদিও অভিযুক্ত সরকারি কর্মী এখনও কিছু জানাননি। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতার কথায় প্রয়োজনে অভিযুক্ত সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে তারাই পদক্ষেপ করার দাবি জানাবেন।