তিহার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বীরভূমে ফিরে সেখানকার রাজনীতিতে এখনও প্রধান ভূমিকায় ফিরতে পারেননি। তবে মঙ্গলকোটে গিয়ে হুঙ্কার দিলেন অনুব্রত মণ্ডল।
মাত্র কয়েক বছর আগেও ইংরাজি বছরের শেষ দিন বা প্রথম দিন বীরভূমের রাজনৈতিক মহলে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতেন অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর বীরভূমের রাজনীতিতে আর কেষ্টর কথায় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খাচ্ছে না। জেলার রাজনীতিতে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। রাজ্যের অন্যতম দাপুটে তৃণমূল নেতা বীরভূমে কার্যত সমান্তরাল প্রশাসন চালাতেন। সেসব এখন উধাও। সেই কেষ্ট আর নেই। বিরোধীদের উদ্দেশ্যে 'চড়াম চড়াম ঢাক বাজানো,' ‘গুড়-বাতাসা’ দাওয়াইয়ের কথা আর বলছেন না কেষ্ট। বরং তিনি আধ্যাত্মিকতায় মন দিয়েছেন। শাসক দলের এই নেতা অবশ্য বরাবরই ঈশ্বরভক্ত। রাজনীতিতে তাঁর যে শক্তি প্রয়োগ, তা বোধহয় দেবীর কাছ থেকেই আহরণ করার চেষ্টা করেন। অতীতে লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনের আগে বীরভূমের বিখ্যাত সতীপীঠ তারাপীঠে পুজো দিতে দেখা গিয়েছে অনুব্রতকে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি পুজো দিয়ে বেরিয়ে বলেছিলেন, 'মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। মা বলে দিয়েছে, আমরা ৪২-এ ৪২ আসন পাব।' সেই কেষ্ট এবার পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের সতীপীঠ ক্ষীরগ্রামের দেবী যোগাদ্যা মন্দিরে পুজো দিলেন। সঙ্গে ছিলেন মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল। দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে নতুন বছরে শাসক দলের অন্দরে পুরনো দাপট ফিরে পাওয়ার আশায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় কেষ্ট।
'শক্ত মাটি' মঙ্গলকোট থেকে প্রত্যাবর্তনের শপথ
যোগাদ্যা মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে অনুব্রত বলেছেন, 'কোনও চিন্তা কোরো না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশে আছেন। তোমরাও নেত্রীর পাশে এভাবেই থেকো।' কেষ্ট আরও বলেন, 'দীর্ঘ দু’বছর পর মঙ্গলকোটের মাটিতে পা দিয়ে খুবই ভাল লাগছে। মঙ্গলকোটের মাটি শক্ত মাটি। আমি আগের মতোই পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট,কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম বিধানসভার তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্বে আছি।' কেষ্ট গ্রেফতার হওয়ার পর অবশ্য বীরভূমের মতোই মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম বিধানসভা অঞ্চলে শাসক দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্বকে। দু’বছর পর ২০২৪ সালের অগাস্টে তিহার জেল থেকে ছাড়া পান কেষ্ট। কিন্তু গত কয়েক মাস তাঁকে আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম মঙ্গলকোটে দেখা যায়নি। বছরের শেষ দিনে মঙ্গলকোটে গিয়ে দলীয় সংগঠনের রাশ নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন। কিন্তু গত আড়াই বছর রাজ্য রাজনীতিতে অনেক পালাবদল হয়েছে। বীরভূমের মতোই পূর্ব বর্ধমানের রাজনীতিতেও বদল এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফল করার পর বীরভূম ও সংলগ্ন পূর্ব বর্ধমানে কেষ্ট-নির্ভরতা কমেছে। সমান্তরাল নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে মঙ্গলকোটে গিয়ে পুজো দিলেও, দলীয় সংগঠনে অনুব্রত পুরনো দাপট ফিরে পাবেন কি না, সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
অনুব্রতর পাশে বিধায়ক
মঙ্গলবার অনুব্রত যখন যোগাদ্যা মন্দিরে পুজো দিতে যান, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি রামকেশব ভট্টাচার্য, ক্ষীরগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মাসুদুর রহমান। কেষ্ট-সাক্ষাৎ পেতে কাটোয়া থেকে ক্ষীরগ্রাম পৌঁছে যান পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সম্পাদক অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। শাসক দলের কর্মীরাও অনুব্রতর সঙ্গে ছিলেন। বিধায়ক বলেন, ‘কেষ্টদা যখন তিহার জেলে ছিলেন, তখনও আমাকে যোগাদ্যা মায়ের পুজো দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কেষ্টদা জামিন পেয়েছেন। আমার অনুরোধে মায়ের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা দিবসে পুজো দিতে এসেছেন। সকলের মঙ্গলকামনায় পুজো দিয়েছেন তিনি।’
বিশেষ দিনে পুজো অনুব্রতর
সতীর ৫১ পীঠের মধ্যে অন্যতম ক্ষীরগ্রাম। এখানে সতীর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পড়েছিল। ক্ষীরগ্রামে ক্ষীরদিঘি নামক পুকুরে জলের তলায় যোগাদ্যার প্রস্তরমূর্তি বছরভর রেখে দেওয়া হয়। বছরে সাতবার দেবীকে জল থেকে তুলে পুজো করা হয়। বছরের যে নির্দিষ্ট সাতদিন মূর্তি তুলে পুজো করা হয়, তার মধ্যে ১৫ পৌষ অন্যতম। মঙ্গলবার ছিল সেই বিশেষ দিন। দেবীর ভক্তরা এই দিনের পুজোকে ‘লগন পুজো’ বলেন। সেই দিনেই পুজো দিলেন কেষ্ট।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন-
অনুব্রত বনাম চন্দ্রনাথের কোন্দল! তৃণমূলের পার্টি অফিসের দখল নিয়ে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব বীরভূমে
অনুব্রত মণ্ডলের হাতেই বীরভূমে তৃণমূলের রাশ? একী কথা বললেন সাংসদ শতাব্দী রায়
অভিষেকের বার্তার পরই বীরভূমে হঠাৎ TMC-র কোর কমিটির বৈঠক? মুখোমুখি হচ্ছেন অনুব্রত-কাজল