ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ক্রমেই ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে চিন। পাকিস্তান বেজিংয়ের স্বঘোষিচ বন্ধু। সম্প্রতি চিনের উস্কানিতে এককালের নেপালেও ভারত বিরোধিতা শুরু করেছে। যা ভারতের কাছে অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। এই অবস্থায় লাদাখ নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে দিল্লির যখন সংঘাত বাড়তে তখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা চালাচ্ছে চিন। এমনিতেই গত কয়েকবছরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে জিনপিং প্রশাসন। তারওপর বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় চিন থেকে বিশেষ চিকিৎসক দল পাঠিয়েছে বেজিং। এমনকি চিনো করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হলে তা সবার আগে বাংলাদেশ পাবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের বেড়ে চলা বন্ধুত্ব দিল্লি সরকারের কাছে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের শিথিলতা দূর করতে রাষ্ট্রদূত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল যুদ্ধে চিনকে জবাব দিতে ভারতের পাশে গুগল, আসছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে ভারতের। এমনকি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভারতের ভূমিকার কথাও সেদেশর মানুষ জানে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারত বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সেই সম্পর্কের উষ্ণতা যেন অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। বরং বেজিংয়ের সঙ্গে নৈকট্য বেড়েছে শেখ হাসিনার দেশের। এমনকি বাংলাদেশের সরকারি স্তর থেকেও বারবার চিনকে 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বর্তমানে সীমান্ত নিয়ে জেরবার অবস্থা ভারতের। পাকিস্তান তো রয়েইছে, এমনকি নেপালের সঙ্গেও ভারতের ইদানীং সম্পর্ক তলানিতে। এদিকে চিনের ঋণের ফাঁদে পা দিয়েছে শ্রীলঙ্কাও। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ 'হাতছাড়া' হয়ে গেলে আরও কঠিন অবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে ভারতকে, তা ভালোই বুঝতে পারছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার। সেই কারণে বাংলাদেশে নিযুক্ত বর্তমান রাষ্ট্রদূত রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাসকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে নয়াদিল্লিতে। তাঁকে বিদেশমন্ত্রকের সচিব (পূর্ব) পদে বসানো হচ্ছে। আর ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে দুঁদে কুটনীতিবিদ বিক্রম ডরাইস্বামীকে।
সিএএ, রোহিঙ্গা, তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির মতো একাধিক বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েন চলছে। এমনকী ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখাই করেননি বলে শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ডরাইস্বামীকে পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়।
বর্তমানে সিএএ, রোহিঙ্গা, তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির মতো একাধিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে টানাপোড়েন রয়েছে ভারতের। এমনকী ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখাই করেননি বলে শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ডরাইস্বামীর উপরেই ভরসা রাখতে চাইছে দিল্লি।
১৯৯২ ব্যাচের ফরেন সার্ভিস অফিসার বিক্রম ডরাইস্বামী অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ হিসাবেই পরিচিত। বিক্রম ডোরাইস্বামী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার আগে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রকে অতিরিক্ত সচিব (আন্তর্জাতিক সংগঠন ও শীর্ষ সম্মেলন) পদে ছিলেন। তার আগে তিনি বহুদিন যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ডেস্ক) হিসেবে সাউথ ব্লকে বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়গুলো দেখাশোনা করেছেন। সেই কারণেই বিক্রম দোরাইস্বামী দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসেও অত্যন্ত পরিচিত নাম। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ দূতাবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি ছিলেন নিয়মিত অতিথি। এর আগে তিনি দক্ষিণ কোরিয়াতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন।