স্টুডিওর ভিতরেও হেমন্তর ঠোঁটে জ্বলত সিগারেট, সুখটান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে ধরতেন গান

  • হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ঠোঁটে সব সময় থাকত জ্বলত সিগারেট 
  • বাদ যেত না স্টুডিওর মধ্যে যখন গান রেকর্ডিং করতেন 
  • একবার আরতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডুয়েট করলেন ওভাবেই
  • আরতি গাইছেন হেমন্ত সিগারেট টানছেন কিন্তু নিজের অংশ নিখুত গাইলেন   

Tapan Malik | Published : Jun 16, 2020 1:28 PM IST / Updated: Jun 17 2020, 11:04 AM IST

তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় হেমন্তকুমার। তিনি আর কেবলমাত্র সঙ্গীত শিল্পী আর সঙ্গীত পরিচালক নন। ছবির প্রযোজকও। মার্সিডিজ চালিয়ে বম্বে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট। হাতে কখনও নস্যি। যাঁর এমন ব্যারিটোন গলার আওয়াজ, তাঁর ঠোঁটে ঘনঘন সিগারেট। দেখে বিস্মিত হতেন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বাঘা বাঘা কলাকুশলীরা। বলতেন, এমন দুঃসাহসিক গায়ক খুবই কম আছে। সিগারেট খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সহাস্যে বলতেন, সিগারেট না খেলে গলার গ্রেনটা ভাল আসে না। গলা পরিষ্কার হয় না। সত্যি, সিগনেচার তৈরি হয়ে আছে তাঁর কণ্ঠ। 

যে কন্ঠ দিয়ে অমন আওয়াজ বেরতো সেই কন্ঠ অনর্গল পান করত ধোঁয়া। আমৃত্যু সিগারেট ছাড়া থাকতে পারেন নি। খাওয়া আর ঘুমের সময়টুকু ছাড়া তাঁর ঠোঁটে সব সময় জ্বলত সিগারেট। মাঝে মাঝে সিগারেটটিকে লম্বা দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে ধোঁয়া ছাড়তেন আর কথা বলতেন। একইভাবে গানও গাইতেন, সুর করতেন এমনকি গানের রেকর্ডিংও। বন্ধ রেকর্ডিং স্টুডিওর মধ্যে ধূমপান, তাও আবার গান রেকর্ডিং করাকালীন? 

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সিগারেট খাওয়ার সেই অভিঙ্গতার কথা শুনিয়েছিলেন আরতি মুখোপাধ্যায়। তাঁর সুরে বহু গান গেয়েছেন আরতি। ১৯৬৫ সালে ‘একটুকু বাসা’য় ‘আমি সংসারে রব না মা’ দিয়ে শুরু করে হেমন্তর সুরে প্রায় তিরিশ বছর কাল বহু ছবিতে আরতি গান গেয়েছেন। উল্লেখ করা যায় ‘অজানা শপথ’-এ ‘ওগো বন্ধু আমার’, ‘পরিণীতা’য় ‘লাজে রাঙা হল’, ‘দাদার কীর্তি’তে ‘বয়েই গেছে’,  ‘রজনী’তে ‘তোমার দেওয়া ফুল’, ‘ময়না’ ছবিতে হেমন্তর সঙ্গে ডুয়েট ‘শ্যামলা গাঁয়ের কাজলা মেয়ে’ প্রতিটি গানই জনপ্রিয়। 

সিনেমার গান বাদেও ১৯৭৭ সালে সুবীর হাজরার কথায়, হেমন্তর সুরে ‘কত দূর আর কত দূর, প্রেমেরই সেই মধুপুর’ গানটিও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এ ছাড়াও ‘বিকেলে ভোরের ফুল’ ছবিতে হেমন্ত ও আরতি কন্ঠে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সকল রসের ধারা’ গানটিওসকলের পছন্দ হয়েছিল।  

সেদিনও হেমন্ত-আরতির ডুয়েট গান রেকরডিং হচ্ছে স্টুডিওতে । যথারীতি স্টুডিওর মধ্যেও হেমন্ত-র ঠোঁটে জ্বলছে সিগারেট। এই ছাড় কেবলমাত্র তাঁর ক্ষেত্রেই ছিল। তাই স্টুডিওর মধ্যে রাখা থাকত একটি অ্যাস্ট্রে । হেমন্ত আরতিকে বললেন, ‘নে শুরু কর’। আরতি জানালেন, ‘সিগারেটটা নেভান’। ‘আরে সিগারেটের সঙ্গে গানের কি আছে?’ আরতি অবাক তো হলেনই তার সঙ্গে পড়ে গেলেন চাপে। যাই হোক রেকর্ডিং শুরু হল, আরতি গাইতে শুরু করলেন। 

আরতি নিজের অংশটুকু যখন গাইছেন তখন হেমন্ত সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন আর ধোঁয়া ছারছেন। কিন্তু যেই মাত্র হেমন্তর গাওয়ার পালা ঠিক তার আগের মুহূর্তে তিনি সিগারেটটি অ্যাস্ট্রের ওপর রেখে আনায়াসে গেয়ে দিচ্ছেন। ফের সিগারেটটি তুলে সুখটান। অন্যদিকে পাশের শিল্পী তাঁর সহ শিল্পীকে দেখে শিউরে উঠছেন। কিন্তু হেমন্ত তার নিজের অংশটুকু অবলীলায় শেষ করে সিগারেটে টান আর ধোয়া ছাড়া। শিউরে উঠলেও আরতিও গাইলেন নিখুঁত। এইভাবে রেকর্ডিং শেষ হতেই আরতি বলে উঠলেন, কী আশ্চর্য! হেমন্ত বললেন, ‘কী করব ওটা যে আমায় কিছুতেই ছাড়তে চায় না’। 

Share this article
click me!