ছেলেবেলা কেটেছে চাকরদের ঘরে, মাত্র ১২ বছরে বাড়ি থেকে তাড়া খেয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন মীর

৩৫ বছর আগে এমনই এক দিনে সপরিবার মীর আফসার আলি বাড়িছাড়া! সেই দিনও তাঁর সঙ্গী রেডিয়ো আর কিশোর কুমার। 

বাস্তব আর স্বপ্নের দুনিয়ার কত ফারাক! সবাই জানেন, মীর আফসার আলি মানেই টানটান গলায় রেডিয়োতে সঞ্চালনা। কখনও গল্প পাঠ। নানা বিজ্ঞাপনী ছবিতে ঝলমলে উপস্থিতি। ছোট পর্দায় রিয়্যালিটি শো পরিচালনা। কিংবা বড় পর্দায় নিজেকে প্রমাণিত করা। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সাহচর্য। মঞ্চে বুদ্ধিমত্তা আর কৌতুকের মিশেল ঘটিয়ে বিস্ফোরণ। আরও আ-র-ও অনেক কিছু। কেউ জানতেন না, মাত্র ১২ বছর বয়সে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে! তাঁর মা-বাবাকেও। বৃহস্পতিবার, জিমে যাওয়ার আগে জীবনের সেই যন্ত্রণা প্রথম প্রকাশ্যে আনলেন তিনি।

তাঁর সঙ্গে কী হয়েছিল ৩৫ বছর আগে? জানতে গেলে ফিরে দেখতে হবে মীরের ছেলেবেলা। কলকাতায় মা-বাবার সঙ্গে মীরের প্রথম আস্তানা ভাড়া বাড়িতে। চাকরদের থাকার জন্য তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে! আটের দশকে অনেক পুরনো বাড়িতে যেমন থাকত। সিঁড়ির নীচের ঘুপচি ঘর। ভিতরে ঢুকতে গেলে মাথা নীচু করতে হত। মীরের কৈশোর বন্দি সেই ঘরেই। লজ্জায়, সংকোচে বন্ধুদের কোনও দিন ডাকতে পারেননি সেখানে। বাবার কারখানায় কাজ। কষ্টে দিন চলত। একদিন বাড়িওয়ালা ঠিক করলেন, তিনি ভাড়াটে তুলবেন। বাড়ি থেকে তাড়াবেন মীরদের। অসহায় পরিবারটিও মাটি কামড়ে পড়ে। শেষে তিনি এক দালালেন কাছে বাড়িটি বেচে দিলেন। বাকি অপ্রিয় কাজ নির্দ্বিধায় সারলেন তিনিই। মীরদের খাবার, বাসন-কোসন, জিনিসপত্র— একে একে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন রাস্তায়! রাতারাতি তাঁরা ঘরছাড়া।

Latest Videos

 

 

সামনেই ছেলের ষান্মাষিক পরীক্ষা। তাই মীরের বাবা তাঁকে দেশের বাড়িতে না পাঠাতে নারাজ। বদলে স্ত্রী, ছেলের হাত ধরে গিয়ে দাঁড়ালেন কারখানার মালিকের কাছে। তিনিই সে দিন মীরদের মাথাগোঁজার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কারখানার এক পাশে। মীরের কথায়, ‘‘মাত্র ১২ বছরে নিজের চোখে দেখেছি, মানুষ কত খারাপ হতে পারে! একই সঙ্গে এও দেখেছি, শ্রমিকেরা নিজের বোনের সম্মান দিয়ে আমার মাকে আগলাতেন। কারণ, কারখানায় প্রতি দিন নানা ধরনের মানুষের নিত্য যাতায়াত।’’

পরীক্ষা শেষে মীর মায়ের হাত ধরে দেশের বাড়িতে। শহর ছেড়েছিলেন বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার মতো কষ্ট নিয়ে। তাই দেশের বাড়িতেও মন বসত না তাঁর। সঞ্চালক-অভিনেতার কথায়, ‘‘এমন দিনেও আমার সঙ্গী রেডিয়ো। ছোট থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোরকুমার, মহম্মদ রফি, মুকেশ, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলের গান শুনতাম। কাকতালীয় ভাবে আমার দেশে ফিরে যাওয়ার দিনে মৃত্যু হয় কিশোরকুমারের। ১৯৮৭-র ১৩ অক্টোবর। সে দিন মাথার উপরে ছাদ না থাকার দুঃখ ভুলেছিলাম এই মানুষের গান এবং জীবন আঁকড়েই। দাদামণি অশোক কুমারের জন্মদিন আর তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুদিন এক!’’আমার বাড়িছাড়া হওয়ার দুঃখ কি দাদার জন্মদিনে ভাইয়ের চিরতরে চলে যাওয়ার দুঃখর থেকেও বেশি? বছর ১২-র মীর নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করেছিলেন সে দিন।
 

Share this article
click me!

Latest Videos

Mamata Banerjee Live: নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা, দেখুন সরাসরি
Bangla News : সুকান্তকে বাধা, বেলডাঙা নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি | Asianet News Bangla
‘সবরমতি রিপোর্ট’ দেখলেন বিজেপির হেভিওয়েটরা! দেখুন কী বার্তা দিলেন সিনেমার ব্যপারে | Sabarmati Report
বাগদায় ফের চলল বুলডোজার! হাইকোর্টের নির্দেশে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৬টি দোকান | Bagdah News
নার্স হেনস্থার ঘটনায় বড় পদক্ষেপ! হাসপাতাল চত্বরে কড়া সিসিটিভি নজরদারি | Birbhum News Today