শুধুমাত্র স্টিল ছবির অভিজ্ঞতা দিয়েই সিনেমার নতুন ভাষা বানিয়েছিলেন সুব্রত মিত্র

  • স্টিল ছবির অভিজ্ঞতা দিয়েই সিনেমার নতুন ভাষা বানিয়েছিলেন সুব্রত মিত্র
  • স্কুলে পড়ার সময়েই ছেলেটি বন্ধুদের সঙ্গে কাছাকাছি সিনেমা হলে গিয়ে হলিউডের ছবি দেখতেন
  • কলেজে পড়ার সময়ে ঠিক করেন তিনি একজন আর্কিটেক্ট অথবা সিনেমাটোগ্রাফার হবেন
  • সিনেমায় বাউন্স লাইটিংয়ের তিনিই পথিকৃৎ

স্কুলে পড়ার সময়েই ছেলেটি বন্ধুদের সঙ্গে  কাছাকাছি সিনেমা হলে গিয়ে হলিউডের ছবি দেখত। মনে মনে সিনেমা প্রেম তাঁর তখন থেকেই। কলেজে পড়ার সময়ে যুবকটি ঠিক করেন তিনি একজন আর্কিটেক্ট অথবা সিনেমাটোগ্রাফার হবেন। কিন্তু তার সুযোগ কই। কলকাতায় যারা সিনেমা বানান, ক্যামেরায় ছবি তোলেন তিনি তাদের তাদের কাছে গেলেন কিন্তু ক্যামেরা সহকারীর কোন কাজ পেলেন না। অতঃপর কলেজে বিজ্ঞান পড়তে লাগলেন আর সুযোগ পেলেই বিদেশি সিনেমা দেখতেন। ব্রিটিশ চিত্রপরিচালক ডেভিড লিনের দুটি ছবি ‘গ্রেট এক্সপেকটেশনস’ আর ‘অলিভার টুইস্ট’ দেখার পর যুবকটি সিনেমার আরও গভীর প্রেমে পড়লেন। পরবর্তীতে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি খেয়াল করছিলেন, চার্লস ডিকেন্সের ওই দুটি উপন্যাসের আখ্যান সিনেমায় কীভাবে বদলে যাচ্ছে। কাহিনির ভাষা থেকে সিনেমার ভাষায় রুপান্তর যেন এক জাদু। যুবকটি সেই জাদুর মায়ায় মোহবিষ্ট হলেন। কিন্তু কাহিনীর চাইতেও তাঁর কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় মনে হলো সিনেমার দৃশ্য। সাদা চাদরের উপর যে ছবি ফুটে ওঠে তা বোনা হয় আলো ছায়া দিয়ে। সেই আলো আর ছায়াতেই যুবকটি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলেন। বিশেষত কামেরাম্যান গাই গ্রিনের অল্প আলোতে তোলা দৃশ্য। এর পরে যুবকটি দেখলেন পরিচালক ক্যারল রিডের ‘দি থার্ড ম্যান’। এইছবির ক্ষেত্রেও যুবকটির মনে বেশি রেখাপাত করলো রবার্ট ক্রাসকারের সিনেমাটোগ্রাফি

এরপরে ‘মঁসিয়ো ভিনসেন্ট’ ছবিটি দেখতে দেখতে যুবকটি বুঁদ হয়ে গেলেন ক্যামেরাম্যান ক্লোদ রনোয়ার অসামান্য নৈপুণ্যে। তাঁর দিনের চিন্তা আর স্বপ্নে জায়গা নিল ক্যামেরা। তাঁকে হাতছানি দিতে শুরু করল আলো-ছায়ার মায়াপটে ভেসে ওঠা দৃশ্য। এভাবেই স্বপ্ন আর জাগরণে সিনেমার ছবি ঘিরে দিন কাটছিল যুবকটির। কিন্তু একদিন হটাৎ বলতে গেলে একদম কাকতালীয় ভাবেই একটি অঘটন ঘটে গেল তাঁর জীবনে। যার আলোকচিত্রের মায়াজালে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন যুবক খোদ কলকাতার রৌদ্রালোকিত রাজপথে সেই ক্লোদ রনোয়ার সঙ্গে যুবকের দেখা হয়ে গেল। ঘটনা হল  বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্রস্রষ্টা জঁ রনোয়া ‘দ্য রিভার’  ছবির শুটিং করতে কলকাতায় এসেছেন। তাঁর সঙ্গে এসেছেন চিত্রগ্রাহক ভাইপো ক্লোদ রনোয়া। প্রথমে যুবকটি নিজেই চেষ্টাসাধ্য করলেন কিন্তু তাতে কোনও ফল হল না।  অবশেষে তাঁর বাবার সর্নিবন্ধ অনুরোধে জঁ রনোয়া নেহাতই দয়াপরবশ হয়ে যুবকটিকে অবজার্ভার হিসেবে স্যুটিঙে থাকার অনুমতি দিলেন। যুবক শুরুর দিন থেকে সেই স্যুটিঙে ডুবে গেলেন। প্রতিদিন ক্লান্তিহীনভাবে  ছবি এঁকে এঁকে আলোর ব্যবহার, অভিনেতাদের চলাচল, ক্যামেরার অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত নোট নিতে থাকলেন একটি খাতায়। একদিন তাঁর ডাক পড়ল অন্দরমহলে। যেখানে আলোচনায় বসেছেন স্বয়ং পরিচালক জঁ রনোয়া। 

Latest Videos

তিনি জানালেন যুবকের আগ্রহ দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে যহার্থ পর্যবেক্ষণ। এরপর ক্যামেরাম্যান ক্লোদ রনোয়া তার খাতাটি দেখলেন।তিনিও অভিভূত। তিনি লাইট কনটিউনিটির জন্য যুবকটির ওই খাতার সাহায্য নিলেন। এখানেই যুবকটির সঙ্গে বন্ধুত্বের সূচনা শিল্পনির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্তের আর সত্যজিৎ রায়ের। তিনি মাঝেমাঝেই  শুটিং দেখতে আসতেন। যুবকটি তরুণ সত্যজিৎকে  বুঝিয়ে দিতেন ক্যামের-আলোর নানা খুঁটিনাটি। এরপর একদিন সত্যজিৎ তাঁকে বললেন, ওই যুবককেই তুলতে হবে ‘পথের পচালির’র  ছবি। যুবক তো শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। তখন ওই যুবকের মাত্র একুশ বছর বয়স। তবু  কোনওরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই অথবা, শুধু স্থিরচিত্রের অভিজ্ঞতা নিয়েই রাজি হয়ে গেলেন। সুব্রত মিত্র শুধু দায়িত্ব নিলেন না সেই ছবির আলোকচিত্রকে বিশ্বচলচ্চিত্রের একটি মাইলস্টোন তৈরি করে দিলেন। আক্ষেপের কথা সিনেমার ব্যাপারে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই পরিচালককে। সিনেমাটোগ্রাফারের অবদান একটু আড়ালেই রয়ে যায়। কিন্তু এ-কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, সিনেমায় পরিচালকদের ভাবনা মূর্ত হয়ে ফুটে ওঠে ক্যামেরাম্যানের দৃশ্যভাবনায় ভর করে। এ-কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ভারতীয় চলচ্চিত্রে নবযুগের সূচনা হয়েছিল সত্যজিতের হাতে। কিন্তু সেই হাতে অস্ত্র যুগিয়ে ছিলেন সুব্রত মিত্র। সিনেমায় বাউন্স লাইটিংয়ের তিনিই পথিকৃৎ।

Share this article
click me!

Latest Videos

Narendra Modi : কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কে জোর ভারতের, দেখুন কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today
'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari