করোনাভাইরাস নিয়ে ছবি করার কোনও পরিকল্পনা নেই, মুম্বই থেকে ভিডিও কলে বললেন সুজয়

  • সদূর মুম্বই-এ বসে রয়েছেন সুজয় 
  • আর কলকাতায় নিজের বাড়িতে রেশমি
  • লকডাউনের বাজারে রেশমির ফোন থেকে ভিডিও কল
  • কিছুক্ষণের মধ্যে কলকাতার সঙ্গে আড্ডায় জুড়ে গেল মুম্বই

জানুয়ারি থেকে তিনি টানা শ্যুট করেছেন কলকাতায়। সঙ্গে বলিউড হেভিওয়েট অভিষেক বচ্চন, শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করেছেন, ১৭ মার্চ পর্যন্ত। ১৭ মার্চ, মানে লকডাউন-এর ঠিক দিন চারেক আগে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত, তিনিও ঘরবন্দি। বুঝেছেন তো কার কথা বলছি! আজ্ঞে হ্যাঁ!, কাহানি, অহল্যা, বব বিশ্বাসের স্রষ্টা- পরিচালক সুজয় ঘোষ। লকডাউনের বাজারেই একে অন্যের বাড়িতে বসেই ভিডিও কলে চলল দেদার আড্ডা। 

Latest Videos

রেশমি- ১৭ মার্চ বুঝেছিলে, কী হতে যাচ্ছে?

সুজয় ঘোষ-  তার আগে থেকেই বুঝতে পারছিলাম, কী হতে যাচ্ছে। আন্দাজ করেছিলাম। আর তাই ঝড়ের গতিতে কাজ তুলছিলাম। আমাদের দেশে কোভিড ১৯ ছড়ালে যে সব বন্ধ হয়ে যাবে, জানতাম। আশা ছিল, শ্যুট শেষ করতে পারব। রীতিমত দৌড়াচ্ছিলাম, কিন্তু জীবনে এমন কিছু সময় আসে যখন থামতে হয়। সকলের জন্য ভাবতে হয়। বিশ্বাস করো, বুক ফেটে যাচ্ছিল, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিই, আর না। বাকি শ্যুট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই করব। তার কিছুদিন পরেই তো লকডাউন হল।

রেশমি- এই সময়কে কি কখনো ফিল্মে ধরতে চাইবে?

সুজয় ঘোষ- কক্ষনো না। ফিল্মে অনেক কিছু দেখানো হয়, গ্ল্যামারাইস করে। এই মারাত্মক রোগ, আর তার ভয়াবহতা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছে রেশমি। আমি চাই না, সেটা ফিল্মে আর প্লট হিসেবে আনতে।

রেশমি-  কিন্তু হলিউড তো হামেশাই সেরকম গল্প নিয়ে কাজ করে?

সুজয় ঘোষ- সায়ান্স ফিকশন ঠিক আছে, যা হলিউড করে থাকে, এরকম একটা প্যানডেমিক নিয়ে ফিল্মে খুব সংবেদনশীল না হলে, অনেকেরই খারাপ লাগতে পারে। আমি হয়ত কখনো ডকুমেন্টারি করার কথা ভাবতে পারি। 

আরও পড়ুন- 'না ছিলাম স্টার, না ছিল স্টাইল', লকডাউনে স্মৃতির পাল্টা উল্টে আবারও ভাইরাল বিগ বি

রেশমি-  এখন তো ছুটি, কি করছ, নতুন কোও চিত্রনাট্য নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে?

সুজয় ঘোষ- ছুটি ঠিকই, কিন্তু কিছুই করে উঠতে পারছি না। নতুন কাজ শুরু করতে হবে, না হলে রোজগার কি করে করব, আর রোজগার না করলে তো চলবে না।
তবে এটুকু বুঝলাম যে আমি খুব খারাপ রাধুনি। চেষ্টা ছাড়িনি অবশ্য। সেই তুলনায় আমি অনেক ভালো স্ক্রিপ্ট লিখি।(হেসে) 

রেশমি- অর্থনৈতিক চাপ কিরকম পড়বে বলে মনে হচ্ছে সবার ওপর, বিশেষ করে এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উপরে...

সুজয় ঘোষ- এই ক্রাইসিস সবাইকে সামলাতে হবে। আমাদের ইউনিটের যারা ভাড়া নিয়ে থাকে, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ছেলেমেয়েরা, রোজগার বন্ধ, জমানো টাকা দিয়ে আর কতদিন চলা যায়। তাছাড়া ডেইলি ওয়েজার্স যারা, এতগুলো ফিল্মের শ্যুট বন্ধ হল, রিলিজ পিছিয়ে গেল, মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু, সবার আগে তো মানুষের প্রাণ। এর থেকে অনেক শিক্ষা পেলাম আমরা। 

রেশমি- তুমি কি শিক্ষা নিলে?

সুজয় ঘোষ- এই যে অনেক অল্প খরচে আসলে জীবন চলে। বাজে খরচ সব কমিয়ে দিয়েছি। প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে কিছু, সংসার আছে। রেস্ট্রিকটেড লাইফ লিড করে আগে সব সামলে নিই আগে, তারপর দেখা যাবে। 

আরও পড়ুন-বডি পেতে স্ত্রীকে ৬ লক্ষ ডলারের হুমকি ফোন, কবর খুড়ে তোলা হয়েছিল 'চার্লি'র দেহ

রেশমি-  যখন অহল্যা করেছিলে, তখন বুঝতে পেরেছিলে, যে একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছ সিনেমাপ্রেমীদের কাছে? 

সুজয় ঘোষ- ভালো লেগেছিল, এই ফর্মাটটা। অনেক বিদেশী ফিল্ম দেখেছিলাম, স্বল্প দৈর্ঘ্যের। একেবারেই ভালোবাসা থেকে করা, আর ওই মানুষটিকে নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল। আই হ্যাভ ফুলফিলড মাই ড্রিম- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 

রেশমি-- এখন তো চুটিয়ে শর্ট স্টোরিজ হচ্ছে, তুমি তো ওয়েবসিরিজ-ও করলে, কেমন লাগল? 

আরও পড়ুন- রহস্য-রোম্যাঞ্চ গল্পেই বুঁদ টলিউড, রইল বাংলা ছবির পর্দায় সেরা দশ গোয়েন্দার খোঁজ

সুজয় ঘোষ- এককথায় দুর্দান্ত। কোনো বাঁধন নেই। যে কোন দিকে ব্যাট চালিয়ে খেলতে পারবে তুমি। তবে একটা বিষয় খেয়াল করলাম, যে আমরা যতই ভাবি যে ফিচারে এ যা লেখা যায় না, মনের আশা পুষিয়ে লিখব। লেখার পর নিজেই আবার সেগুলো এডিট করি, মনে হয় বাড়াবাড়ি করে ফেলছি। 

রেশমি-  তুমি বরাবরই সময় নিয়ে কাজ করো, মানে কহানির পরও বেশ অনেকটা সময় নিয়ে পরের কাজে হাত দিলে। বব বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও তাই...
কনসাস ডিশিশন?

সুজয় ঘোষ- একদম। অভিজ্ঞতা শেখায় আমাদেরকে, যে তাড়াহুড়ো করে কিছু হয় না। আমি চাই তুমি ভবিষ্যতেও আরো ইন্টারভিউ করো আমার । কিন্তু আমি যদি কাজটাই ঠিক মত না করি তাহলে, কি আর ইন্টারভিউ করবে? ঠিক সেই কারনেই আমরা আগে থেকে কোনো রিলিজ ডেট মাথায় রেখে চলি না। ফিল্ম নিজের গতিতে চলবে, মাথার পেছনে রিলিজ ডেট-এর  এর চাপ নিয়ে আমি পারি না কাজ করতে। 

রেশমি- মুম্বই তোমার কাজের শহর, কলকাতা প্রাণের শহর, বাংলা ফিচার করতে ইচ্ছে করে না?

সুজয় ঘোষ- করে, কিন্তু আমি যেভাবে ফিল্ম বানাতে ভালোবাসি, তাতে করে আমি একেবারেই চাই না, যিনি প্রযোজক তাকে পথে বসাতে। তাই এখনই হয়ত হয়ে উঠবে না।

রেশমি- শর্টফিল্ম তো হতে পারে?

সুজয় ঘোষ- ১০০ শতাংশ হতে পারে। ইচ্ছেও আছে। শর্ট ফিল্মটা আমি আউট অফ প্যাশন করি। ওটা মানি মেকিং নয়। গোটা দুনিয়া জুড়ে আমার ধারনা সকলেই ফিল্ম , আউট অফ প্যাশন-ই করেন। বাংলাতে আবারও করব।

রেশমি- পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, আমরা সবাই ফর্ম-এ ফিরতে পারবো, কি মনে হয় তোমার?

সুজয় ঘোষ- ভয় থাকবে মনে,ইনিশিয়ালি। আসলে এটা হল, 'পজ মোড'। একটা দারুন গান শুনতে শুনতে, বা ফিল্মে র মাঝে, যেরকম 'পজ বাটন' দিয়ে থামাই আমরা। প্রকৃতি ও তাই করেছে। যে মুহূর্তে 'প্লে বাটন' দেওয়া হবে, আবার একই ভাবে গান বাজবে, ফিল্ম এগোবে, আমাদের জীবনও এগোবে। এখন শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা। 

উপসংহার- খুব সুন্দর ভাবে-ই বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরলেন সুজয় ঘোষ। মনে পড়ে গেল, কহানি-র শেষ দৃশ্যে একলা চলো রে..গানের ব্যবহার। আর তার সাথে অমিতাভ বচ্চনের ব্যারিটোন কন্ঠস্বর আর মনের ভেতরের চুরমার করা এক অনুভূতি.....বিশ্বাস। বিশ্বাস যে,সব ঠিক হয়ে যাবে। এখনো আমরা সবাই একলাই লড়ছি, যার যার বাড়ি থেকে, সবার জন্য, সবার ভালো থাকার জন্য। বিশ্বাস, সব ঠিক হয়ে যাবে। ভালো থাকবেন।


রেশমি  বাগচি- দেড় দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। বাংলা গণমাধ্যমের একাধিক প্রথমসারি সংবাদসংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের সঙ্গে শূন্য নামে এথনিক বুটিক ফ্যাশন স্টোর খুলেছেন। একজন আন্তেপ্রঁণে হিসাবে এই মুহূর্তে কাজ করছেন রেশমি। এছাড়াও নৃত্যশিল্পী ও আবৃত্তিকার হিসাবেও স্বনামে উজ্জ্বল  তিনি। 

Share this article
click me!

Latest Videos

Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
প্রেমের আড়ালে লক্ষাধিক টাকা লুঠ! প্রতারণার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনি | South 24 Parganas News Today
‘প্রণামের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে বাঙালি’ বিস্ফোরক মন্তব্য Dilip Ghosh-এর, দেখুন কী বলছেন | Dilip Ghosh
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
শীতের রাতে যমুনার আতঙ্ক! একের পর এক জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঘিনী | Bandwan Tiger News