সুশান্ত বনাম বলিউড, প্রথম সারির তারকাদের নিস্তবদ্ধতাই দিল উত্তর

  • সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে নানা কাটাছেঁড়া
  • পুলিশ, মিডিয়া, বলিউড, সিবিআই তদন্ত
  • মৃত্যুর পরও ছাড় নেই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে
  • কীভাবে এতটা আলদা হয়ে উঠেছিলেন তিনি, যে একেবারে বিদায় নিতে হল তাঁকে
     

আমির খান হলেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট। শাহরুখ খান রোম্যান্সের রাজা। সলমন খান তো বলিউডের 'ভাই'। অমিতাভ বচ্চন, উনি লেজেন্ড। অন্যদিকে রইল আয়ুষ্মান খুরানা, রাজকুমার রাও, ভিকি কৌশল। তাঁদের মত ভার্সিটাইল অভিনেতা আর কেউ নেই। আর সুশান্ত সিং রাজপুত, তিনি এই কোনও তালিকায় পড়তেন কি। পড়তেন, তবুও কেমন যেন মিসফিট। অর্থাৎ বেমানান। বাকিদের মত গুছিয়ে কথা বলতেন ঠিকই, তবে তাতে কেমন যেন অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছিলেন মুকেশ ভাট। গুছিয়ে কথা বলতে বলতে নিজের স্বপ্নের দুনিয়ায় চলে যেতেন কি না। অনেকের মত মিডিয়ার প্রশ্ন ডিপ্লোম্যাটিকালি সাজিয়ে বলতে হোঁচট খেতেন আর কী। যার জন্যই হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের আনফিট বয়। 

 

Latest Videos

 

টেলি দুনিয়ার সুশান্ত
বড় ভালবাসা পেয়েছিলেন সুশান্ত এই টেলি দুনিয়া থেকে। ইশ! কেন যে টেলিভিশনের জগৎ ছাড়তে গেল ছেলেটা। এখানে থাকলেই হয়তো বেঁচে যেত। এমনটাই ভেবেছিলেন অনেকে। তাহলে উচ্চাকাঙ্খা কি মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এটাই বলতে চাইছে সেই একাংশ মানুষজন। 'পবিত্র রিশতা' তাঁর কেরিয়ারের একটি ধাপ ছিল, যা তাঁকে বলিউডের সোনার সিঁড়ি চড়তে সাহায্য করেছিস। সেই সিঁড়ি চড়া কি তাঁর ভুল হয়ে গিয়েছিল। এ কথা কীকরে বলা যায় জানি না। 

বলিউডে নতুন প্রতিভা
'কাই পো ছে' ছবির হাত ধরে আসতে না আসতেই অমিত সাধ, রাজকুমার রাওকে সত্যিই ছাঁপিয়ে গিয়েছিল বিহারের এই ছেলে। কীভাবে ছাঁপালো? রাজকুমার এবং অমিত তো রীতিমত দাপুটে অভিনেতা। বলিউডে পা রাখতেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে চলে এসেছিলেন তিনি। রাজকুমার, অমিত সেদিকে কঠোর পরিশ্রম করেই চলেছে বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করার জন্য। 

হঠাৎ পতন
'কাই পো ছে' ছবির পরই হঠাৎ সুশান্তের জনপ্রিয়তা হুড়মুড়িয়ে পড়তে থাকে। সুদ্ধ দেশি রোম্যান্স-ফ্লপ, ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সী-ফ্লপ। এরই মাঝে এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরিতে অভিনয় করে যাও বা জনপ্রিয়তা পেলেন সবটাই মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্যই। ফের বারতা ছবি গড়িয়ে পড়ল ফ্লপের খাতায়। কেদারনাথ ছবি নিয়ে লাভ-জিহাদের কটাক্ষ তুলে মারাত্মক বিতর্ক। অন্যদিকে সোনচিড়িয়া-ফ্লপ, ড্রাইভ তো পাতে দেওয়ার যোগ্য নয় বলে ফেলেছিল দর্শকরা। আজ অবশ্যই তারাই এই ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। জীবিত অবস্থায় মুক্তি পাওয়া তাঁর শেষ ছবি ছিছোঁড়ে নিয়ে খানিক কথাবার্তা উঠলেও, ছবিটি চাপা পড়ে যায় অন্যান্য ছবির ভিড়ে। 

 

 

দর্শকের ভোলবদল
মৃত্যুর পর সুশান্তের শেষ ছবি 'দিল বেচারা' ছবিটি হলিউডের জনপ্রিয় ছবি 'দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস'র হিন্দি রিমেক। এই ঘোষমা হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। সঞ্জনা সাংঘিকে নায়িকার চরিত্রে ফাইনাল করে ঘোষণা করা হয় ছবিটির বিষয়। সঙ্গে সঙ্গে ছিঃ ছিক্কার। "আবার হলিউডের ছবির হিন্দি রিমেক", "ফিল্মি গান ঢুকিয়ে এবার একটা ভাল ছবিকেও নষ্ট করতে উঠে পড়ে লাগবে বলিউড", "কোনও নতুন আইডিয়াই নেই। খালি রিমেকের নাম করে ক্রেডিট নেওয়া।" এই উক্তি গুলি সেই মানুষজনদেরই করা যারা আজ সুশান্তের মৃত্যুর পরই দিল বেচারা দেখে আইএমডিবিতে ১০-এ ১০ রেটিং দিয়েছে। বলিউডের সেরা ছবির অ্যাখা দিয়েছে। অনেকে আবার ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ভরিয়ে দিয়েছিল লিখে, "একমাস হয়ে গেল সুশান্ত! তোমার কথা ভেবে ঘুম, খিদে কিছুই আসছি না। কোনও কাজই মন দিয়ে করতে পারছি না।" নির্লজ্জতাটা এখানেই, যে এই ধরণের স্টেটাস দেওয়ার পরই নিজের জন্মদিন উদযাপনের ছবি শেয়ার করে 'হ্যাপিয়েস্ট ডে অফ মাই লাইফ' দিচ্ছে। মানুষের এই আসল রূপ প্রকাশ্যে আসার ভয় বোধহয় সুশান্তেরও ছিল। তাই বন্ধু ছিল ফাজ, আকাশের তারা এবং সেই টেলিস্কোপ। 

 

 

বলিউড বনাম সুশান্ত
১৯৯৩ সাল। সঞ্জয় দত্ত টাডা কান্ডে গ্রেফতার হয়েছিল বাড়িতে একে ফিফটি সিক্স রাখার জন্য। সেই সময় সঞ্জয় দত্তের বিরুদ্ধে গোটা দেশ দেশদ্রোহী বলে চিৎকার করলেও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল বলিউডের তাবড় তাবড় শিল্পীরা। সলমন খান, সইফ আলি খান, অক্ষয় কুমার, অজয় দেবগণ, এঁরা সকলেই "সঞ্জু, আমরা তোমার সঙ্গে আছি" লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে তাঁর সমর্থন করেছিলেন। জেল থেকে ছাড়া পেতেই তাঁর কাছে ছবির প্রস্তাবও আসে ঘন ঘন। তখন কিন্তু বলিউড একজোট হয়েছিল সঞ্জয় দত্তের বিতর্কিত একটি ঘটনার জন্য। তাহলে সুশান্তের সময় এই ব্যবহার, প্রতিক্রিয়া কেন। যে অমিতাভ বচ্চন নিজের প্রতিক্ষণের আপডেট টুইটারে দেন, তিনি সুশান্তের জন্য একটিও পোস্ট করলেন না। প্রথম সারির অভিনেতা, অভিনেত্রীরা সকলেই চুপ। কঙ্গনা রনাওয়াত, কৃতি স্যানন, বরুণ ধাওয়ান, পরিনীতি চোপড়া ছাড়া সিবিআই তদন্তের জন্য কেউ সুশান্তের নাম নেননি। বলিউডে কি তাহলে চিরকালই মিসফিট ছিল সুশান্ত। যে তাঁকে একেবারেই আপন করে নেওয়া গেল না। সেই আকাশের তারারাই হল তাঁর চিরসঙ্গী।

 


 

Share this article
click me!

Latest Videos

'দুর্নীতি করবে বলেই এরা এই প্রকল্প চালু করেছে' ট্যাব দুর্নীতিতে সরব অধীর রঞ্জন চৌধুরী
Suvendu Adhikari Live: পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুলে জনসভা শুভেন্দুর, দেখুন সরাসরি
'চুরি হবে অথচ তৃণমূলের নাম আসবে না তা হয় কখনও!' ট্যাব দুর্নীতিতে মমতাকে ধুয়ে দিলেন সুকান্ত!
Suvendu Adhikari: 'তৃণমূল বাচ্চাদের ট্যাবও খেয়ে ফেলছে' চরম কটাক্ষ শুভেন্দু অধিকারীর
‘এবার সনাতনীদের এক হতে হবে’ হিন্দুদের উদ্দেশ্যে যা বললেন শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari