ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য আঞ্চলিক ট্রেডমার্ক অফিসে আবেদন করতে হয়। এতে ব্র্যান্ডের নাম, পণ্য বা পরিষেবার বিবরণ এবং ট্রেডমার্কের শ্রেণিবিন্যাস উল্লেখ করতে হয়। ট্রেডমার্ক ৪৫টি শ্রেণিতে বিভক্ত – যার মধ্যে ৩৪টি পণ্যের জন্য এবং ১১টি পরিষেবার জন্য।
ভারতে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড পরিচিতি রক্ষার জন্য অপরিহার্য। এটি মালিককে নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবার জন্য ট্রেডমার্ক ব্যবহারের একচেটিয়া অধিকার প্রদান করে। ভারতীয় ট্রেডমার্ক আইন, ১৯৯৯ (Trade Marks Act, 1999) এবং ট্রেডমার্ক নিয়মাবলি, ২০১৭ (Trade Marks Rules, 2017) অনুসারে এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।
ট্রেডমার্ক নিবন্ধন ও এক্তিয়ার
ভারতে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন কেন্দ্রীয়ভাবে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রার দ্বারা পরিচালিত হয়, যার পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে:
দিল্লি (উত্তর অঞ্চল)
মুম্বাই (পশ্চিম অঞ্চল)
চেন্নাই (দক্ষিণ অঞ্চল)
কলকাতা (পূর্ব অঞ্চল)
আহমেদাবাদ (গুজরাট অঞ্চল)
ট্রেডমার্কের আবেদনকারীর ব্যবসার অবস্থান বা আবেদনে উল্লিখিত ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কার্যালয় নির্ধারিত হয়।
ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের ধাপসমূহ-
১. আবেদন জমা:- ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ট্রেডমার্ক অফিসে আবেদন করতে হয়। এতে ব্র্যান্ডের নাম, পণ্য বা পরিষেবার বিবরণ এবং ট্রেডমার্কের শ্রেণিবিন্যাস উল্লেখ করতে হয়। ট্রেডমার্ক ৪৫টি শ্রেণিতে বিভক্ত – যার মধ্যে ৩৪টি পণ্যের জন্য এবং ১১টি পরিষেবার জন্য।
২.পর্যালোচনা:- আবেদনটি আইনি মানদণ্ড অনুযায়ী পর্যালোচনা করা হয় এবং পূর্ববর্তী নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সাথে মিল রয়েছে কিনা তা যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি কয়েক মাস সময় নিতে পারে।
৩. প্রকাশনা:- আবেদন অনুমোদিত হলে এটি ট্রেডমার্ক জার্নালে প্রকাশ করা হয়। এই পর্যায়ে, সাধারণ জনগণ চার মাসের মধ্যে আপত্তি জানাতে পারে।
৪. আপত্তি:- যদি কেউ আপত্তি জানায়, তবে আবেদনকারীকে তার ট্রেডমার্কের পক্ষে যথাযথ যুক্তি ও প্রমাণ পেশ করতে হবে। আপত্তির সমাধান হলে ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হয়।
৫.নিবন্ধন ও সনদ প্রদান:- আপত্তি না থাকলে বা সমাধান হলে ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত হয় এবং আবেদনকারীকে একটি নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। এরপর, ট্রেডমার্কটি ® চিহ্ন সহ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ট্রেডমার্কের বৈধতা ও নবায়ন:-
একটি ট্রেডমার্ক নিবন্ধন আবেদনের তারিখ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকে এবং প্রতিটি ১০ বছর অন্তর এটি নবায়ন করা যায়। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ, অন্যথায় এটি বাতিল হতে পারে। তবে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে ৬ মাসের মধ্যে এটি পুনরুদ্ধার করা যায়।
আইনি কাঠামো ও সুরক্ষা:
ভারতের ট্রেডমার্ক আইন, ১৯৯৯ অনুযায়ী-
ট্রেডমার্কের সংজ্ঞা: যে কোনো নাম, চিহ্ন, লোগো, শব্দ, রঙ বা প্রতীক যা কোনো পণ্য বা পরিষেবাকে অন্যদের থেকে পৃথক করে।
ট্রেডমার্ক মালিকের অধিকার: নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক মালিকের একচেটিয়া ব্যবহারাধিকার রয়েছে এবং কেউ অনুমতি ছাড়া এটি ব্যবহার করলে মালিক আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন: নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের অনুমতিবিহীন ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় এবং সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া যায়।
ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের গুরুত্ব:-
একচেটিয়া অধিকার: নির্দিষ্ট পণ্য ও পরিষেবার জন্য ট্রেডমার্ক ব্যবহারের একচেটিয়া অধিকার প্রদান করে।
আইনি সুরক্ষা: নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক ব্র্যান্ডের অননুমোদিত ব্যবহার ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা দেয়।
ব্র্যান্ডের মূল্য বৃদ্ধি: ট্রেডমার্ক ব্যবসার নির্ভরযোগ্যতা বাড়ায় এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে।
আর্থিক সুবিধা: নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক লিজ বা লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে আয় করা যায়।
ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের আপত্তি ও বিরোধিতা:- ট্রেডমার্ক জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর যে কেউ ৪ মাসের মধ্যে আপত্তি জানাতে পারে। আপত্তির কারণ হতে পারে,
:-পূর্বে নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সাথে সাদৃশ্য।
:- বিদ্যমান ব্র্যান্ডের সাথে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। শুধু তাই নয়, আপত্তি উঠলে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রার এটি পর্যালোচনা করে। প্রয়োজন হলে বিষয়টি আদালতে গড়াতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভারতে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া যা তাঁদের ব্র্যান্ড পরিচয় রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসার স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করে না বরং আইনত সুরক্ষা প্রদান করে এবং বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বজায় রাখতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।