ভারতে ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেড (NSDL) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সার্ভিসেস লিমিটেড (CDSL)—এই দুটি সংস্থা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। শেয়ার, বন্ড, এবং ETF কেনাবেচার জন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক।
নয়াদিল্লি: ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট কীভাবে খুলবেন এবং কী কী প্রয়োজন? য়ারা বাজারে শেয়ার কেনা-বেচা করেন, তাঁদের জন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট অত্যন্ত জরুরি। এটি কীভাবে খোলা যায়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট কী (Demat Account) ?
ডিম্যাট (Demat) শব্দটি "Dematerialized" শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি ইলেকট্রনিক অ্যাকাউন্ট যেখানে শেয়ার, বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডের মতো সিকিউরিটিজ ডিজিটাল ফরম্যাটে রাখা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো আপনার বিনিয়োগকে নিরাপদভাবে ইলেকট্রনিকভাবে সংরক্ষণ করা। ভারতে ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেড (NSDL) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সার্ভিসেস লিমিটেড (CDSL)—এই দুটি সংস্থা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। শেয়ার, বন্ড, এবং ETF কেনাবেচার জন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক। এটি বিনিয়োগকারীদের কাগজভিত্তিক সিস্টেমের পরিবর্তে দ্রুত এবং সুবিধাজনক লেনদেনের সুযোগ দেয়।
কারা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন?
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে কিছু যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হবে:
✔ বয়স: অন্তত ১৮ বছর বয়স হতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্করা (মাইনর) অভিভাবকের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
✔ PAN কার্ড: এটি আবশ্যক, কারণ আর্থিক লেনদেন এবং কর সংক্রান্ত কাজে এটি ব্যবহার হয়।
✔ ভারতীয় নাগরিক এবং NRI: ভারতীয় নাগরিক এবং অনাবাসী ভারতীয় (NRI) উভয়েই ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, তবে NRI-দের জন্য প্রক্রিয়াটি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
কীভাবে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলবেন?
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে:
১. ডিপোজিটরি পার্টিসিপ্যান্ট (DP) নির্বাচন করুন
ডিপোজিটরি পার্টিসিপ্যান্ট (DP) হলো মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, যা NSDL বা CDSL-এর সাথে সংযুক্ত থেকে আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। এটি ব্যাংক, শেয়ার ব্রোকার বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে পারে।
ভারতে জনপ্রিয় কিছু DP:
ব্যাংক: ICICI Bank, HDFC Bank, Axis Bank
শেয়ার ব্রোকার: Zerodha, ICICI Direct, HDFC Securities, Angel One, Sharekhan
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: Upstox, Groww, 5Paisa
DP নির্বাচন করার সময় তাদের ফি, গ্রাহক সেবা, এবং ব্যবহারের সহজলভ্যতা বিবেচনা করুন। কিছু DP অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ছাড় দেয়, আবার কিছু বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি (AMC) নেয়।
২. আবেদন ফরম পূরণ করুন
একজন DP নির্বাচনের পর, আপনাকে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
✅ যে তথ্য প্রয়োজন:
ব্যক্তিগত তথ্য: নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ
যোগাযোগের তথ্য: ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল
আর্থিক তথ্য: আয়, পেশা
বিনিয়োগ পছন্দ: ঝুঁকি গ্রহণের মাত্রা, বিনিয়োগ লক্ষ্য
অনলাইনে বা DP-এর অফিসে গিয়ে আবেদন করা যায়। অনলাইনে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হয়।
৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে আপনাকে কিছু নথি প্রদান করতে হবে:
✅ পরিচয় প্রমাণ: PAN কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
✅ ঠিকানা প্রমাণ: আধার কার্ড, বিদ্যুৎ বিল, পাসপোর্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট
✅ ব্যাংক ডিটেলস: ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা বাতিল চেক
✅ ছবি: সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি
কিছু DP ভিডিও KYC বা ই-KYC-এর মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করার সুযোগ দেয়।
৪. KYC যাচাই
সকল আর্থিক লেনদেনের জন্য KYC বাধ্যতামূলক। DP আপনার পরিচয় এবং ঠিকানা যাচাই করবে। এতে ভিডিও কল, সরাসরি অফিসে গিয়ে কাগজপত্র দেখানো, অথবা অনলাইনে জমা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৫. যাচাই ও অনুমোদন
সব নথি জমা দেওয়ার পর, DP সেগুলো যাচাই করে এবং অনুমোদন দেয়। এটি সাধারণত ২-৭ কার্যদিবস সময় নেয়।
যাচাই শেষ হলে, আপনাকে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট নম্বর (DP ID) এবং অন্যান্য লগইন তথ্য প্রদান করা হবে।
ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের ধরন
বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য ভিন্ন ধরনের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট রয়েছে:
1️⃣ সাধারণ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট: ভারতীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি সবচেয়ে প্রচলিত।
2️⃣ Repatriable ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট: NRI-দের জন্য, যা বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের অনুমতি দেয় এবং এটি NRE (Non-Resident External) অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত থাকে।
3️⃣ Non-Repatriable ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট: NRI-দের জন্য, তবে এতে বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের অনুমতি নেই। এটি NRO (Non-Resident Ordinary) অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত থাকে।
ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের খরচ
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার এবং পরিচালনার জন্য কিছু ফি প্রযোজ্য হতে পারে:
💰 অ্যাকাউন্ট খোলার ফি: কিছু DP বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দেয়।
💰 বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি (AMC): বছরে ₹300 থেকে ₹1,000 পর্যন্ত হতে পারে।
💰 লেনদেন ফি: প্রতিটি কেনাবেচার উপর নির্দিষ্ট চার্জ প্রযোজ্য হয়।
💰 ডিমেটেরিয়ালাইজেশন ফি: শেয়ার সার্টিফিকেট ডিজিটালে রূপান্তরের জন্য চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।
💰 অন্যান্য ফি: বন্ধক রাখার চার্জ, শেয়ার ট্রান্সফার ফি, অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার চার্জ ইত্যাদি।
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট কীভাবে ব্যবহার করবেন?
📌 ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট: শেয়ার কেনাবেচার জন্য ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক। এটি সাধারণত ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত থাকে।
📌 অ্যাকাউন্ট পরিচালনা: বেশিরভাগ DP অনলাইনে অ্যাকাউন্ট পরিচালনার সুবিধা দেয় (ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে)। এর মাধ্যমে আপনি:
✔ আপনার বিনিয়োগের অবস্থা দেখতে পারবেন।
✔ অন্য ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে শেয়ার ট্রান্সফার করতে পারবেন।
✔ লেনদেনের ইতিহাস দেখতে পারবেন।
✔ একত্রিত ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শেয়ার কিনতে ও বিক্রি করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অনলাইন বা অফলাইন পদ্ধতিতে সহজেই এটি খোলা যায়। অ্যাকাউন্ট খোলার আগে বিভিন্ন DP-এর ফি এবং সুবিধা ভালোভাবে যাচাই করুন। তারপর সঠিক DP নির্বাচন করে বিনিয়োগের যাত্রা শুরু করুন!