
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক দশকে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় গ্রাহকদের জমা পড়া টাকার অঙ্ক রীতিমত নিম্নমুখী। গত ১০ বছরে প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে টাকা জমা পড়ার অঙ্ক। ২০১৫ সালে প্রায় ৪২.৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ জমা পড়েছিল। ২০২৪ সালে ৩৪.৬ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৩৭,৬০০ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। যা ২০১৫ সালের তুলমায় প্রায় ১৮ শতাংশ কম বলে মনে করছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
কোভিড-১৯ এর সময় ভারতীয়দের জমা বেড়েছিল প্রায় ৬০.২ কোটি সুইস ফ্রাঁ, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে মহামারীর পর থেকেই জমা কমতে শুরু করে। ২০২৩ সালে জমা ছিল ৩০.৯ কোটি সুইস ফ্রাঁ, কিন্তু ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৩৪.৬ কোটি সুইস ফ্রাঁ হয়। মহামারির পর ২০২৪ সালে সবথেকে বেশি অর্থ জমা পড়েছে সুইজ ব্যাঙ্কে।
এক নজরে দেখে নিন সুইস ব্যাঙ্কের হিসেবঃ
শুধু ভারত নয়, অন্যান্য বড় অর্থনীতির দেশগুলির নাগরিকদের জমাও সুইস ব্যাংকে কমেছে। যেমন, ব্রিটিশ নাগরিকদের জমা ২০২৪ সালে ৩১ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ-এ নেমে এসেছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ৪৪ বিলিয়ন। একই সময়ে চীনা নাগরিকদের জমা ৫.০১ বিলিয়ন থেকে কমে ৪.৩ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিকদের জমাও কমেছে। পাকিস্তানিদের জমা ২০১৫ সালে ৯৪.৭ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে ২০২৪ সালে ২৪.১ কোটি সুইস ফ্রাঁ-এ নেমে এসেছে, যা প্রায় ৭৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। ২০১৫ সালে ৪.৮ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে ২০২৪ সালে মাত্র ১.২৬ কোটি সুইস ফ্রাঁ-এ নেমে এসেছে, যা ৭৩ শতাংশেরও বেশি কম।
এই হ্রাস আন্তর্জাতিক আর্থিক স্বচ্ছতা নীতিমালায় পরিবর্তন, কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং বর্ধিত তদন্তের মতো বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
সৌদি আরবের জমা ১০ বছরে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে, ২০১৫ সালে ৮.৩ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ থেকে ২০২৪ সালে ৪.৮ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে আমেরিকান নাগরিকদের জমা। ২০১৫ সালে ৬৪.২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ থেকে ২০২৪ সালে ২৪.৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ-এ নেমে এসেছে, যা প্রায় ৬২ শতাংশ কম।
এই তথ্য সুইস ব্যাংকে বিদেশী জমার হ্রাসমান প্রবণতাকে তুলে ধরে, যা সম্ভবত বৃহত্তর স্বচ্ছতা, আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ এবং বৈশ্বিক আর্থিক পছন্দে পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। ভারতের জন্য, এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে দেখায় যে গত দশকে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় নাগরিকদের জমা কমেছে। যদিও ২০২১ সালে মহামারীর সময় জমাতে সাময়িকভাবে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল।
সুইস ব্যাংকে বিদেশি ক্লায়েন্টদের মোট অর্থের দিক থেকে ভারত ৪৮তম স্থানে রয়েছে, যা ২০২৩ সালের শেষে তার পূর্ববর্তী ৬৭তম স্থান থেকে কিছুটা এগিয়ে, কিন্তু ২০২২ সালের শেষে ৪৬তম স্থানের নিচে। এসএনবি কর্তৃক প্রকাশিত সরকারী পরিসংখ্যানে সুইজারল্যান্ডে ভারতীয়রা যে টাকা রেখেছে অর্থাৎ কথিত কালো টাকার পরিমাণ নির্দেশ করা হয়নি । যদিও সুইজারল্যান্ড এই টাকাকে কালো কালো টাকা বলতে নারাজ। পাশাপাশি তারা দাবি করে আসছে কর জালিয়াতি এবং ফাঁকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে।