ভারতে এনজিওর ভূমিকা: কীভাবে একটি এনজিও গঠন করবেন, কোথায় রেজিস্ট্রেশন করবেন, কীভাবে তহবিল পাবেন?

Published : Feb 26, 2025, 06:55 PM ISTUpdated : Mar 05, 2025, 11:59 AM IST
NGO

সংক্ষিপ্ত

এনজিও হলো একটি স্বাধীন সংস্থা যা সামাজিক, পরিবেশগত, সাংস্কৃতিক বা শিক্ষাগত উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে থাকে। ভারতে লক্ষ লক্ষ এনজিও সক্রিয় রয়েছে, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে চলেছে।

ভারতে এনজিও-র ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্থাগুলি সমাজকল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নের মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এনজিওগুলি সরকার এবং সমাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে এবং যেসব ক্ষেত্রে সরকারি নীতি সম্পূর্ণ কার্যকর নয়, সেখানে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে। সুলভ ইন্টারন্যাশনাল, কয়েক দশক ধরে দেশে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। একইভাবে, দেশে এমন অনেক এনজিও রয়েছে যারা গোষ্ঠীর মাধ্যমে দেশের নারীদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী মঞ্চ থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির প্রশংসাও করেছেন। ভারত সরকার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে এমন এনজিও এবং অন্যান্য গোষ্ঠীগুলিকেও সহায়তা করছে।

আপনি যদি সমাজসেবার উদ্দেশ্যে একটি এনজিও শুরু করতে চান তাহলে এর জন্য সঠিক প্রক্রিয়া এবং রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনে আমরা ভারতে একটি এনজিও গঠনের প্রক্রিয়া কী এবং কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হয় তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

এনজিও কী এবং কেন এটি প্রয়োজন?

এনজিও হলো একটি স্বাধীন সংস্থা যা সামাজিক, পরিবেশগত, সাংস্কৃতিক বা শিক্ষাগত উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে থাকে। ভারতে লক্ষ লক্ষ এনজিও সক্রিয় রয়েছে, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করে চলেছে।

এনজিওগুলির প্রয়োজন কারণ...

সরকার একা সকল সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে পারে না, সেক্ষেত্রে এনজিও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

তারা সমাজের দুর্বল অংশগুলির মধ্যে উন্নতি সাধন করে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সচেতনতা প্রচার করে।

স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকরভাবে সামাজিক পরিষেবা প্রদান করে।

ভারতে এনজিও-র প্রকারভেদ

ভারতে প্রধানত তিন ধরণের এনজিও রয়েছে:

১. ট্রাস্ট: এটি ধর্মীয়, সামাজিক এবং দাতব্য কাজের জন্য।

২. সমাজ: এটি একটি গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে এবং এর উদ্দেশ্য হল শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান এবং সামাজিক কাজকে উৎসাহিত করা।

৩. ধারা ৮ কোম্পানি: এটি অলাভজনক কোম্পানিগুলির জন্য, যারা সামাজিক কাজে লাভ পুনঃবিনিয়োগ করে।

একটি এনজিও শুরু করতে হলে আপনাকে কী করতে হবে?

১. লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন:

প্রথমত, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনার এনজিও কোন উদ্দেশ্যে কাজ করবে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ক্ষমতায়ন, শিশু উন্নয়ন, পরিবেশ বা অন্য কোনও সামাজিক কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যদি আপনার এনজিওর উদ্দেশ্য স্থির হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনি অর্ধেক পথ অতিক্রম করেছেন।

২. এনজিওর নাম এবং কাঠামো নির্ধারণ করুন:

প্রতিটি এনজিও-র একটি নাম থাকে। আপনাকে একটি নামও ঠিক করতে হবে। এই নামেই এনজিওটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আপনার এনজিও ট্রাস্ট, সোসাইটি নাকি সেকশন ৮ কোম্পানি হিসেবে কাজ করবে তা ঠিক করুন।

৩. সদস্য নির্বাচন করুন:

একটি এনজিওর জন্য কমপক্ষে ৩-৭ জন সদস্যের প্রয়োজন হয়। সদস্যদের নির্দিষ্ট ভূমিকা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত।

এনজিও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া

আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেতে হলে, একটি এনজিও রেজিস্ট্রেশন হওয়া প্রয়োজন। রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিম্নলিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

১. ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন

ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন ভারতীয় ট্রাস্ট আইন, ১৮৮২ এর অধীনে করা হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

- ট্রাস্ট ডিড

- ট্রাস্টিদের তালিকা

- প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড

- রেজিস্ট্রেশন ফি

২. সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন

সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন ১৮৬০ সালের সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে করা হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

- সোসাইটি স্মারকলিপি (সমিতির স্মারকলিপি)

- নিয়ম ও বিধিমালা

- সর্বনিম্ন ৭ জন সদস্যের তালিকা

- সদস্যদের ঠিকানার প্রমাণপত্র

৩. ধারা ৮ কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন

ধারা ৮ কোম্পানিটি কোম্পানি আইন, ২০১৩ এর অধীনে রেজিস্ট্রেশন। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

- পরিচালকদের প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড

- MOA (সমিতির স্মারকলিপি) এবং AOA (সমিতির ধারা)

- রেজিস্ট্রেশন অফিসের প্রমাণপত্র

কোথায় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে

রাজ্যের সোসাইটি রেজিস্ট্রার অফিসে এনজিওর রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এর জন্য আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এনজিও রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ফি জমা দিতে হবে। ফি জমা দেওয়ার পরে আপনি একটি রসিদ পাবেন। এর পরে, যদি তদন্তে সবকিছু সঠিক পাওয়া যায় তবে আপনাকে এনজিও রেজিস্ট্রেশনের একটি শংসাপত্র জারি করা হবে। রেজিস্ট্রেশন পাওয়া এনজিওগুলিও প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর অন্তর রিনিউ করা হয়।

ভারতের প্রধান এনজিও এবং তাদের কাজ

১. সুলভ ইন্টারন্যাশনাল: এটি বহু দশক ধরে স্যানিটেশনের জন্য কাজ করে আসছে। প্রয়াত বিন্দেশ্বর পাঠক প্রতিষ্ঠিত সুলভ এনজিওর অধীনে দেশজুড়ে পাবলিক টয়লেট তৈরি করা হয়েছিল।

২. গুঞ্জ: পুরাতন কাপড় পুনর্ব্যবহার এবং গ্রামীণ উন্নয়নে সক্রিয়।

৩. অক্ষয় পাত্র ফাউন্ডেশন: স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল সরবরাহের জন্য কাজ করে।

৪. হেল্পএজ ইন্ডিয়া: প্রবীণ নাগরিকদের যত্ন এবং সহায়তার জন্য কাজ করে।

৫. স্মাইল ফাউন্ডেশন: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখে।

এনজিওগুলির মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান

১. আর্থিক চ্যালেঞ্জ: এনজিওগুলির জন্য তহবিলের অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা। সমাধান হল সিএসআর তহবিল এবং সরকারি প্রকল্পগুলির কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া।

২. আইনি বাধা: সঠিক আইনি নির্দেশনার অভাবে অনেক এনজিও রেজিস্ট্রেশন এবং পরিচালনায় সমস্যার সম্মুখীন হয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৩. জনসচেতনতার অভাব: সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

একটি সফল এনজিও পরিচালনার জন্য টিপস

১. শক্তিশালী নেতৃত্ব: কার্যকর নেতৃত্ব একটি এনজিওর সাফল্যের মুল চাবিকাঠি।

২. স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন: মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন এবং তাদের সমস্যাগুলি বুঝতে চেষ্টা করুন।

৩. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন: সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দাতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করুন।

৪. স্বচ্ছতা বজায় রাখুন: আর্থিক স্বচ্ছতাস তথ্য পরিবেশন ও প্রতিবেদন তৈরিতে অগ্রাধিকার দিন।

PREV
click me!

Recommended Stories

শ্রম আইনের মহাবিপ্লব! শ্রমিক ও সংস্থা উভয়ের হবে লাভ, কী রয়েছে এই নয়া আইনে
আগামী সপ্তাহে কতদিন থাকবে ব্যাঙ্ক বন্ধ! জানুন দেশজুড়ে ব্যাঙ্ক ছুটির তালিকা