Vicco Popularity-৫০-র দশক থেকে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ভিকো-র প্রোডাক্ট, জেনে নিন এর ইতিহাস

একেবারে দেশীয় ব্র্যান্ডের ভিকো  টুথপাউডার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কেশব পেনধারকর। কাপড়ের ব্যাগের মধ্যে একটি ছোট বাক্সে করে বিক্রি হত সেই ভিকো বজ্রদন্তি টুথপাউডার।

Kasturi Kundu | Published : Dec 11, 2021 5:21 AM IST

সালটা ছিল ১৯৫২। সেকাল থেকে একাল,আজও সমানভাবে জনপ্রিয় সেই টুথপেস্ট(Vicco toothpaste) ও আয়ুর্বেদিক ক্রিম(Ayurvedic Cream),যাকে ঘিরে একসময় তৈরি হয়েছিল একটি সুন্দর জিঙ্গলও(Jingle) তৈরি হয়েছিল। হ্যাঁ, সেই ভিকো বজ্রদন্তি ও ভিকো টারমারিক আয়ুর্বেদিক ক্রিমের সেই বিজ্ঞাপনের কথাই বলছি। যখন সারা দেশ জাতীয়তাবাদের উন্মাদনায় মেতেছিল ঠিক সেই সময়ই একেবারে দেশীয় ব্র্যান্ডের ভিকো  টুথপাউডার নিয়ে হাজির হন কেশব পেনধারকর(Keshav Pendharkar the father of Vicco)। কাপড়ের ব্যাগের মধ্যে একটি ছোট বাক্সে করে বিক্রি হত সেই ভিকো বজ্রদন্তি টুথপাউডার(Tooth Powder)। নিজের শহর মহারাষ্ট্রে মুদি দোকান চালানো কেশব পেনধারকর(keshav Pendrkar) একসময় সেই ব্যবসা ছেড়ে মুম্বইতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে বান্দ্রা এবং শহরতলিতে বিভিন্ন ধরনের ছোট ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন । সেই সময় নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধির উন্মোচন ঘটে এবং হাতে তৈরি টুথপাউডারের ব্যবসা দিয়ে ভাগ্যের পরীক্ষা শুরু করেন কেশব পেনধারকর। বাবার নামে একটি ব্র্যান্ড সহ একটি প্রাকৃতিক আয়ুর্বেদিক পণ্য চালু করার সিদ্ধান্ত নেন।  ভিকো হল বিষ্ণু ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস কোম্পানির সংক্ষিপ্ত রূপ। সংস্থাটি ১৯৫২ সালে গঠিত হয়েছিল যা রাসায়নিকমুক্ত,ঔষধি দাঁতের পাউডার সরবরাহ করে থাকে। 

বর্তমানে ভিকো কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছেন পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম সঞ্জীব। তিনি বলেন, ১৯৫০ সালের ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ডেন্টাল ফ্লুরোসিসের মতো সমস্যাগুলিকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। মিষ্টি স্বাদের জন্য এই ধরনের টুথপেস্টের প্রতি শিশুদের অমোঘ আকর্ষণ তৈরি হয়। তদুপরি, অ্যালোপ্যাথি একটি উচ্চতর চিকিৎসা বিজ্ঞান হিসাবে বিবেচিত হয়। এই ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্যই তার ঠাকুরদা আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন এবং তিনি তার শ্যালকের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন।  বাড়ির রান্নাঘরটি উৎপাদন ইউনিটে পরিণত হয়েছিল এবং অন্যান্য ঘরগুলি গোডাউন এবং অফিস হিসাবে ব্যবহার করেন । ভিকো বজ্রদন্তি টুথ পাউডার ছিল তাঁদের প্রথম পণ্য এবং এটি বিশেষভাবে ভেষজ থেকে তৈরি যা দাঁত পরিষ্কার এবং মাড়িকে শক্তিশালী করার কাজ করে ৷ তিনি আরও জানান যে ভিকো ছিল ভারতের বাজারে টুথপেস্ট এবং ভ্যানিশিং ক্রিম বিভাগে প্রথম এবং একমাত্র স্বদেশি পণ্য যা কসমেটিক পণ্যগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে ছিল ।

আরও পড়ুন-চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে চান! ব্যবহার করুন জবা ফুল

সঞ্জীব জানান , তার ঠাকুরদা সম্ভাব্য ক্রেতাদের একেবারে বাড়ির দরজায় কড়া নেড়ে এই ভিকো টুথপাউডারের ব্যাপারে বুঝিয়ে বলতেন। ধীরে ধীরে ক্রেতাদের তাঁর কথার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। তাঁর বিক্রয় পদ্ধতির মূল আকর্ষণ ছিল, আপনি যা পছন্দ করেন তা বিক্রি করা হচ্ছে না , বরং আপনার যা প্রয়োজন সেটাই দেওয়া হচ্ছে। অবশেষে, পণ্যটি বাজারে নিজের স্থায়ী জায়গা তৈরি করে নেয় ও ব্যবসা সমৃদ্ধ হয়। কোম্পানির প্রতিষ্ঠার ৪ বছরের মধ্যে কেশব পণ্যটি প্রচুর পরিমাণে তৈরি করে এবং দেশের বৃহত্তর ভৌগলিক বাজারে পৌঁছে দেয়। ১৯৫০ সালের শেষের দিকে, ধনী এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি টুথপেস্ট এবং টুথব্রাশ গ্রহণ করতে শুরু করে। কেশব টুথপাউডারকে টুথপেস্টে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।  এরপর ভিকো টারমারিক আয়ুর্বেদিক ক্রিমকে বাজারে আনার চেষ্টা শুরু করেন কেশব। বিপণন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে হলুদ রঙের এই ক্রিমকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন একটি পণ্য হিসাবে চিত্রিত করা হয় যা স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ত্বকের প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৯৭১ সালে কেশব মারা গেলে গজানন কোম্পানির নেতৃত্ব দেন । তার চার ছোট ভাই গোটা কাজকর্মে সহায়তা করেছিলেন। কোম্পানিটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভিকো সুগার ফ্রি পেস্ট , ভিকো হলুদ ফোম ভিত্তিক মাল্টিপারপাস ক্রিম , ভিকো হলুদ তেল ভিত্তিক অল পারপাস ক্রিম এবং ভিকো হলুদের ডব্লিউএসও ক্রিম এর মতো অন্যান্য পণ্যগুলি বাজারে আসে৷ পরে এই সংস্থাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ৩৫টি দেশে নিজের ব্যবসা বিস্তার করতে সক্ষম হয়। 

আরও পড়ুন-অতিরিক্ত কাজের চাপ! এই সময় বিশেষ নজর দিন নিজের ত্বকে

আরও পড়ুন-ফটোশ্যুটের জন্য চাই পারফেক্ট লুক! এই কয়েকটি ধাপে মেকাপ করুন

ভিকো আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্ট নাকি কসমেটিক প্রোজাক্ট এই বিষয়টি নিয়ে একবার আইনি লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল এই সংস্থা। বেশ কিছুদিন সেই লড়াই চলার পর ২০০৭ সালে উচ্চ আদালত কোম্পানির পক্ষেই রায় দেয়। সঞ্জীব জানান, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে , কোম্পানি মিলেনিয়ামকে লক্ষ্য করে ২০১৯ সালে আলিয়া ভাটকেও এর বিজ্ঞাপনের জন্য সাক্ষর করানো হয়। সেই সঙ্গে ক্লাসিক জিঙ্গেলটিকেও একটি আধুনিক মোড়কে দর্শক দরবারে উপস্থাপিত করা হয়।  মুম্বইয়ের এক বাসিন্দা শ্রীনিকা গড়করি বলেন, যখন দাঁতের যত্নের জন্য অনেক বিকল্প ছিল না সেই প্রজন্মের প্রায় প্রতিটি পরিবারই সুস্থ দাঁত ও মাড়ির জন্য ভিকো বজ্রদন্তির উপর নির্ভর করত। আরেক নাগরিক বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় যে পেস্টের সঙ্গে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক জিনিসের মিশ্রনে সেগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু আজ থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর আগে সেই পন্থা অবলম্বন করেছিল ভিকো। তাই এই টুথপেস্টিট প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রাসঙ্গিক হতে থাকে ৷  উল্লেখ্য, এই এই পণ্যটি ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে সম্প্রচারিত ইয়ে জো হ্যায় জিন্দেগি সিরিয়ালে স্পনসর করে বিজ্ঞাপন জগতে রীতিমত মাইলস্টোন সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেন, ৮০-র দশকে খুব কম প্রোজাক্টই ছিল যারা বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেত। কিন্তু তাঁর বাবা গজানন সেই সাহসী পদক্ষেপটি গ্রহণ করেছিলেন। সর্বোপরি সঞ্জীব বলেন, একটি ব্যবসা একটি শিশুর মতো এবং প্রয়োজন মতো জবাবদিহি , যত্ন এবং ভালবাসা লাগে। সব বাঁধা বিপত্তি পেড়িয়ে সেই ছোট্ট ব্যবসাকে গোটা পৃথিবীতেছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। 

Share this article
click me!