আমরা কখনও বলবো না যে কেবলমাত্র একক প্রচষ্টাতেই এই কঠিন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া যায়, তবে হ্যাঁ বহু মানুষই নিজেই শৃঙ্খলাপরায়ণ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন উদাহরণও কিন্তু রয়েছে।
শতাব্দী কর, প্রতিবেদক- ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC) ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা করে যা UPSC সিভিল সার্ভিস (CIVIL SERVICE) নামে পরিচিত। অনেক প্রার্থীই আইএএস (IAS), আইপিএস (IPS) এবং আইএফএস (IFS) – এর জন্য কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্ত হন। আমরা কখনও বলবো না যে কেবলমাত্র একক প্রচষ্টাতেই এই কঠিন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া যায়, তবে হ্যাঁ বহু মানুষই নিজেই শৃঙ্খলাপরায়ণ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন উদাহরণও কিন্তু রয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিকল্পনায় একটি সংস্থা খুলেছে যারা ইউপিএসসির (UPSC) পরীক্ষা প্রস্তুতিতে আগামীর আইএএস, আইপিএসদের তুলে আনবে, এর জন্য জেলায় জেলায় জেলা শাসকদের দ্বারা মেধা তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন- NIELIT Recruitment 2021- সায়েন্টিস্ট পদে নিয়োগ, ৩৩ শূন্যপদে নিয়োগ, কীভাবে আবেদন
ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে বছরে এক বার আইএএস (IAS), আইপিএস (IPS) এবং আইএফএস (IFS) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ ভাবে ২১ থেকে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সংরক্ষিত বর্গের প্রার্থীদের বয়সের উর্ধবসীমায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে এবারে আসা যাক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে়----
UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আদর্শ সময়:
বস্তুত আদর্শ সময় বলে কিছু না থাকলেও পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি একটা পরিকল্পনা থাকাই অভিপ্রেত। সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে এক বছর সময় প্রয়োজন। কেননা পরীক্ষাটি ৩টি ধাপ যথাক্রমে প্রাথমিক, লিখিত (প্রধান) এবং সাক্ষাত্কার পদ্ধতি দ্বারা পরিচালিত হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি শেষ হত প্রায় এক বছর সময় লাগে। সুতরাং, একজন প্রার্থীকে অন্তত তার জীবনের দুই বছর প্রস্তুতির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতি শুরু করার সময় এই সময় বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।
কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন?
প্রস্তুতির প্রথমে পরীক্ষা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা করা, পরিচিত বা ওই পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা এই বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার সিলেবাস মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করা এবং বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ধারণা থাকা খুব প্রয়োজন। যেমন IFS পাঠ্যক্রমটি দুটি ভাগে বিভক্ত - প্রাথমিক এবং প্রধান এবং একটি প্রধান বিভাগ সাধারণ অধ্যয়ন বিভাগের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় যেখানে ভূগোল, ইতিহাস, রাজনীতি, ইংরেজি, হিন্দি, আঞ্চলিক ভাষা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক থেকে প্রশ্ন থাকে।
কোন বই দিয়ে শুরু করবেন?
NCERT প্রদত্ত বইগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ার অভ্যস করতে হবে এতে প্রার্থীরা প্রতিটি বিষয়ের মূল অংশ সহজেই বুঝতে পারবেন। সাধারণত পূর্ববর্তী প্রার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় ৬ঠ থেকে ১২তম শ্রেণির NCERT বই পড়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও যত দ্রুত সম্ভব দৈনিক পত্রিকা পড়া শুরু করা উচিত এতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সমস্যার সমাধান হবে। দৈনিক পত্রিকা অধ্যয়ন একই বিষয়ের ওপর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশে সহায়তা করে।
কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কী?
এই প্রশ্নটি নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই নাজেহাল। যদিও সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় কোচিংয়ের গুরুত্ব রয়েছে তবে তা একেবারেই নির্ণায়ক নয়। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য প্রবীণ প্রার্থী এবং কলেজের অধ্যাপকদের কাছ থেকেও নির্দেশনা চাইতে পারেন। বিশেষ করে মহামারি পরবর্তীতে বিনামূল্যে বিভিন্ন অনলাইন ক্লাস বা মডিউল ক্লাসের গুরুত্ব বাড়ায় নির্দিষ্ট কোনও স্থানে গিয়ে কোচিং নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এখন কমছে।
ঐচ্ছিক বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা।
অনেকক্ষেত্রেই প্রার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয়ের ওপর কিন্তু এই পরীক্ষার সাফল্য এবং ব্যর্থতা নির্ণিত হয়। তাই প্রার্থীদের আগ্রহের ক্ষেত্র, ঐচ্ছিক পাঠ্যক্রমের দৈর্ঘ্য, প্রস্তুতির জন্য উপলব্ধ সময় এবং একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিত্তিতে বিষয় নির্বাচন করা উচিত।
নোট তৈরি করা:
প্রার্থীদের নিয়মিত নিজের নোট তৈরি করার অভ্যেস করতে হবে। কোনও বিষয় নিয়ে খানিকটা অংশ পড়া হয়ে গেলে যাবতীয় তথ্য নোটের আকারে নথিবদ্ধ করে রাখা যেতে পারে। সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় শুধুমাত্র কী অধ্যয়ন করতে হবে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কী অধ্যয়ন করা উচিত নয় তাও গুরুত্বপূর্ণ। নোট করে নেওয়া অংশগুলি হাইলাইটারের মাধ্যমে দ্রুত স্মরণযোগ্য করা যেতে পারে। এছাড়াও প্রচুর ডায়াগ্রাম, মানচিত্রের ব্যবহার পরবর্তীতে রিভিশনের সময় প্রার্থীদের সাহায্য করবে।
নিয়মিত অনুশীলন করা:
অনুশীলন জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রেই সাফল্যের চাবিকাঠি। নিয়মিত মক টেস্টে অংশ এবং উত্তর লেখার অভ্যেস সিভিল সার্ভিসের মতো কঠিন পরীক্ষাকেও অনেকখানি সহজ করে দেয়। প্রথমদিকে স্বল্প সংখ্যা দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো যেতে পারে। তবে মক টেস্টের কম স্কোরে নিজেকে হতাশ করলে কিন্তু চলবে না।
পার্সোনাল ইন্টারভিউ:
UPSC-র ইন্টারভিউয়ের আগে প্রার্থীদের সাধারণত একটি বিস্তারিত আবেদনপত্র (DAF) পূরণ করতে হয়। এতে প্রার্থীদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা, পছন্দের বিষয় ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য দেওয়া থাকে৷ ইন্টারভিউ চলাকালীন প্রার্থীদের এই বিষয় কেন্দ্রিক প্রশ্ন করা হয়। সুতরাং DAF পূরণ করার আগে সচেতন থাকা উচিত।
নির্দিষ্ট টাইম-টেবিল অনুসরণ করা:
প্রস্তুতির শুরুতেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্যাটার্ন এবং সিলেবাসের দৈর্ঘ্য অনুসারে প্রস্তুতির জন্য একটি সময়সীমা তৈরি করে নিতে পারলে ভালো। এতে প্রার্থীরা নিজেকে যাচাই করার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিনের পড়ার অগ্রগতি, রিভিশন ও অনুশীলন নির্দিষ্ট সময় সূচির মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। পড়াশোনার মাঝে খানিকটা বিরতি নিতে কিন্তু ভুলবেন না এতে মনযোগ আরও বাড়বে।
যেহেতু প্রার্থীরা দেশের এক মর্যাদাপূর্ণ পরিষেবাতে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষাগুলিতে অংশগ্রহণ করবেন, তাই নিজের লক্ষ, অনুপ্রেরণা এবং প্রতিশ্রুতি ভুললে চলবে না। প্রার্থীরা মনে রাখবেন, পরীক্ষা যত কঠিনই হোক ইচ্ছে আর অধ্যবসায় থাকলে যে কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেন, UPSC-র ইতিহাসে এমন উদাহারণ কিন্তু যথেষ্ট রয়েছে। তাহলে এবার থেকে বাড়িতেই শুরু করে দিন UPSC পরীক্ষার প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন- Constable Recruitment 2021- মেগা রিক্রুটমেন্ট, ৪৪৩৮ শূন্যপদে নিয়োগ, কীভাবে আবেদন