শমিকা মাইতি- চার দফায় ভোট হয়ে গিয়েছে। ২৯৪ টার মধ্যে ১৩৫ টাতে ভোট যা-পড়ার পড়ে গিয়েছে। শনিবার, সবচেয়ে বেশি ৪৫টা আসনে ভোট হচ্ছে একসঙ্গে। বাংলার ক্ষমতায় আসার জন্য এই আসনগুলি নিয়ে তৃণমূলের মাথাব্যাথা সবচেয়ে বেশি। কারণ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের নিরিখে এই কেন্দ্রগুলিতে বিজেপির গড় ভোট যেখানে ছিল ৪৫ শতাংশের মতো, তৃণমূলের সেখানে ৪১.৫ শতাংশ। এমনিতেই শেষ তিন দফা অর্থাৎ ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পর্বে যে কেন্দ্রগুলিতে ভোট হচ্ছে, সেখানে তৃণমূল-বিজেপির খুব বেশি পার্থক্য নেই লোকসভা ভোটের হিসাবে। বিজেপি ৪৬টা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে, তৃণমূল যেখানে ৫৯টিতে। ফলে পঞ্চম দফায় তৃণমূলের ভোটবাক্স ঠিক করে দেবে তৃতীয় বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মসনদে বসতে পারবেন কি না।
আরও পড়ুন- 'গোর্খাদের জন্য কী করেছে বিজেপি', ভোটের দিন গেরুয়া শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেললেন গুরুং
২৯ মার্চ, বাংলায় প্রথম দফায় ভোট হয়েছিল ৩০টি আসনে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের হিসাব ধরলে এর মধ্যে ২৭টিতেই জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপির ঝুলিতে শূন্য। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের হিসাবে বিজেপি ৩০টির মধ্যে ২০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ১ এপ্রিল, দ্বিতীয় দফায় ৩০টা আসনে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে রয়েছে হেভিওয়েট আসন নন্দীগ্রাম। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন জমি আন্দোলনের সঙ্গী সদ্য দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালের হিসাবে এই আসনগুলির মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২১টিতে। বিজেপি পেয়েছিল একটা। আর কংগ্রেস-বামেদের জোট পেয়েছিল ৮টি আসন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের হিসাবে ৩০টির মধ্যে ১৮টিতে এগিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি এগিয়েছিল ১২টিতে।
আরও পড়ুন- বুথের বাইরে বন্দুক হাতে দৌড়চ্ছেন নির্দল প্রার্থী, ভোটের দিন তীব্র উত্তেজনা চাকদহে, দেখুন
তৃতীয় দফায় ৩১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। মোটামুটিভাবে এই আসনগুলিতে তৃণমূল তার আধিপত্য ধরে রেখেছে বলা যায়। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের হিসাব ধরলে তৃণমূল ৩১টার মধ্যে ২৯টি দখল করেছিল। হাওড়া আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটা করে আসন পেয়েছিল কংগ্রেস-বামেদের জোট। বিজেপির ঝুলি শূন্য ছিল ২০১৬তে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মোদী ঝড়েও বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি এই কেন্দ্রগুলিতে। ৩১টার মধ্যে ২৯টাতে এগিয়েছিল তৃণমূল। ১০ এপ্রিল, চতুর্থ দফায় ৪৪টি আসনে ভোট হয়, যার মধ্যে সিঙ্গুর ছিল। ২০১৬ সালের ভোটের হিসাব ধরলে ৪৪টার মধ্যে ৩৯টায় জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের হিসাবে ১৯টিতে এগিয়ে আছে বিজেপি।
সবচেয়ে বেশি ৪৫টা আসনে ভোট হবে শনিবার পঞ্চম দফার ভোটে। গত বিধানসভা ভোটে এর মধ্যে ৩২টি আসনে তৃণমূল জিতেছিল। বিজেপি একটাও পায়নি। কংগ্রেস আর বামেরা ১০টা আসন পেয়েছিল। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে শতাংশের হিসাব ধরলে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তবে আসনের নিরিখে তৃণমূল ২৩টিতে এগিয়ে আছে, বিজেপি যেখানে ২২টিতে। ২২ এপ্রিল, ষষ্ঠ দফায় ৪৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ২০১৬ সালের হিসাবে তৃণমূল জিতেছিল ২৮টি আসনে। বাম-কংগ্রেসের জোট জিতেছিল ১১টি আসনে। আর ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসাব মতো ২৪টিতে এগিয়ে আছে তৃণমূল, ১৯টিতে বিজেপি। ২৬ এপ্রিল, সপ্তম দফায় ৩৬টা আসনে ভোট হবে। যার মধ্যে তৃণমূল ১৪টিতে জিতেছিল গত বিধানসভা ভোটে। এই পর্বে কংগ্রেস-বামেদের জোট তুলনায় ভাল ফল করেছিল গত বিধানসভা ভোটে। ২২টা আসন পেয়েছিল তারা। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি আশাতীত ভাল ফল করে এখানে এবং ১৬টি কেন্দ্রে লিডে থাকে। তৃণমূলও ১৬টি কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। বাকি চারটিতে লিড দেয় কংগ্রেস।
২৯ এপ্রিল, অষ্টম দফায় ৩৫টা আসনে ভোট হবে। গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে এর মধ্যে ১৭টিতে জিতেছিল তৃণমূল। কংগ্রেস ও বামেদের জোট ১৬টিতে জেতে, যেখানে কংগ্রেস একাই ১৩টি আসন পায়। বিজেপি মাত্র একটা আসনে জিতেছিল সেবার। তবে লোকসভা ভোটে ১১টা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল তারা। তৃণমূল সেখানে ১৯টা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল। কংগ্রেস পাঁচটায়। এই সমস্ত পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট শেষ পর্বের ভোটগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে তৃণমূল ও বিজেপির ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, প্রথম চার দফাতেই একশো আসন হয়ে গিয়েছে বিজেপির। এবং, এই ট্রেন্ড চললে দু’শোর বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় আসবে বলে বিশ্বাস বিজেপি নেতাদের। বিশ্বাস সত্যি হল কি না জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২ মে, ভোটের ফল প্রকাশ পর্যন্ত।