ভারতব্যপী চলছে ২১ দিনের লকডাউন
বাইরের সামাজিক দূরত্বে বাড়ছে ঘরের ঘনিষ্ঠতা
গত কয়েকদিনে কয়েকগুণ বেড়েছে কন্ডোমের বিক্রি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০২০-র ডিসেম্বরে ঘটবে 'করোনাভাইরাস শিশু' জন্মের বিস্ফোরণ
ভারতব্যপী চলছে ২১ দিনের লকডাউন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে ঘুঁচে যাচ্ছে পরিবার পরিজনদের মধ্যের দূরত্ব। সারাদিন অফিস, ব্যবসার কাজ বা অন্যকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইঁদুর দৌড়ে থাকা যে স্বামী-স্ত্রীদের কাছাকাছি আসার খুব একটা সময়ই হত না, তারাই এখন একে অপরকে নতুনভাবে আবিষ্কার করছে। বাইরে লকডাউনের দৌলতে ঘরে বাড়চে ঘনিষ্ঠতা। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কন্ডোম বা নিরোধ-এর বিক্রিও।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে খাদ্যশস্য, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ওষুধের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনই বেশ কিছু ওষুধ ও অন্যান্য পণ্য়ের ই-কমার্স সাইট জানিয়েছে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে কন্ডোম এবং গর্ভনিরোধক বড়ির বিক্রি। শুধু ই-কমার্স সাইটগুলিই নয়, পাড়ায় পাড়ায় ওষুধের দোকানগুলিতে কথা বললেও সব দোকানিই এক সুরে জানাচ্ছেন, মাস্ক-স্যানিটাইজারের স্টক শেষ। অনেক লোকই এসে ক্লোরোকুইন বা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সালফেট চাইছেন, ভিটামিন সিচাইছেন, আর চাইছেন কন্ডোম ও গর্ভনিরোধক পিল।
তবে, এর পিছনে মানুষের মনস্তত্ত্বই দায়ী বলে জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তথা কাউন্সিলর রাজীব মেহতা জানিয়েছেন, বরাবরই দেখা গিয়েছে যুদ্ধ ও মহামারীর মতো বিপর্যয়ের সময় মারী-পুরুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার মাত্রা বেড়ে যায়। তাঁর মতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ 'করোনাভাইরাস শিশু' জন্মের বিস্ফোরণ ঘটবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বব্যপী মানুষ উদ্বিগ্ন। সকলেই বাড়িতে তালাবন্ধ। বিবাহিত দম্পতি বা প্রেমিক-প্রেমিকারা যাঁরা তাঁদের পেশাগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল তাঁদের হাতে এখন নৈকট্য এবং ঘনিষ্ঠতার অফুরান সময়। তাই যুদ্ধের সময় যেমন ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, তেমনই এইউ ক্ষেত্রেও বাড়বে। কারণ পরিস্থিতি এখন যুদ্ধের মতোই। তিনি, জানিয়েছেন ক্লান্তিই হ'ল বড় বড় শহরগুলিতে বিবাহিত বা অবিবাহিত দম্পতিদের নিয়মিত যৌন মিলন না করার অন্যতম কারণ। তাই, এখন যে কন্ডোম বা গর্ভনিরোধক-এর বিক্রি বাড়ছে, তাকে অস্বাভাবিক বলতে তিনি নারাজ। তাঁর কথায় 'মানুষ স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফিরে আসছেন'।
তবে তিনি সতর্ক করছেন, অতি নৈকট্য ঝগড়াও হতে পারে। কারণ এতদিন পেশাগত চাপে সময় কম থাকায় এক ছাদের নিচে থেকেও দুটি মানুষ অনেক সময়ই একে অপরকে পুরোটা চিনতে পারেন না। এই বাড়িতে থাকাকালীন অনেকেই হয়তো তাঁর পার্টনারের অনেক অজানা দিক, অজানা স্বভাব আবিষ্কার করবেন, যা তাঁর অপছন্দের। সেই নিয়ে ঝগড়া হতেই পারে। তবে সেটা তাঁদের সম্পর্কের পক্ষে ভালো। কাজেই এই সময়ে যত বেশি সম্ভব নিজেদের মধ্যে কথা বলা, আলোচনা করা, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা, গোপন কথা ভাগ করে নেওয়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিশেষজ্ঞরা। হয়তো সম্পর্কে এমন স্তর খুঁজে পাবেন, যা কল্পনাও করা যেত না।
আর সংক্রমণের ভয়, যতক্ষণ না দুজনেই আক্রান্ত হচ্ছেন, ততক্ষণ সংক্রমণের ভয় নেই। তবে সঙ্গী বা সঙ্গিনী স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কিনা, সেই দিকেও নজর রাখতে হবে।