অস্ট্রেলিয়াকে একেবারে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ১৯৯২ সালের পর ফের একবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে ভারতকে ১৮ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে চলেছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এইবারেও কি কিউইদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে? নাকি, ছয়বার সেমিফাইনাল ও দুইবার ফআইনাল খেলেও সোনার ট্রফি অধরাই থেকে যাবে?
বিশ্বকাপ ইতিহাসের সাম্প্রতিক প্রবণতা কিন্তু বলছে এবারেও আশা কম নিউজিল্যান্ডের। ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তারপর থেকে মোট ১৩টি বিশ্বকাপ হয়ে গিয়েছে। চতুর্দশতম ফাইনালের মুখে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট দুনিয়া। এই ৪৪ বছরের বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে মোটামুটিভাবে চারটি যুগে ভাগ করে হয়ে থাকে।
প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ (১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩)
প্রথম তিন বিশ্বকাপের স্পনসর ছিল প্রুডেন্সিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। সেই অনুসারে এই তিন বিশ্বকাপ প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ নামেই পরিচিত। তিনটি বিশ্বকাপই হয়েছিল ইংল্যান্ডে। সেই সময়ে সবচেয়ে শক্তিশালি তিন দল ছিল ওয়েস্টইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুইবার কাপ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেই যায়। রানার আপ ছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। তৃতীয়বার সবাইকে চমকে কাপ ছিনিয়ে নিয়েছিল কপিল দেবের ভারত।
বিভিন্ন বদল, বিভিন্ন চ্যাম্পিয়ন (১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬)
১৯৮৭ বিশ্বকাপ থেকে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের মধ্যে অনেকগুলি বদল ঘটে একদিনের ক্রিকেটে। ইংল্যান্ডের বাইরে বের হয় বিশ্বকাপ। ওভার সঙ্গে কমে ৫০-এ নেমে আসে। ১৯৯২ থেকে রঙিন পোশাক ও সাদা বলের ব্যবহার শুরু হয়। ক্রিকেট আধুনিক হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই সময়কালে বিভিন্ন চ্যাম্পিয়ন উপহার পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। ১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স, বিশ্বকাপ জেতে অস্ট্রেলিয়া, ১৯৯২ সালের বেনসন অ্যান্ড গেজেস কাপ জিতেছিল পাকিস্তান আর ১৯৯৬ সালের উইলস বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা।
অস্ট্রেলিয় একাধিপত্য (১৯৯৯ থেকে ২০০৭)
১৯৯৯ থেকে ২০০৭ - টানা তিন বিশ্বকাপে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দলে বদল এসেছে, পাল্টে গিয়েছে অধিনায়ক, কিন্তু তাদের প্রাধান্য খর্ব হয়নি। ১৯৯৯ সালে অজিদের এই আধিপত্য়ের সূচনা হয়েছিল স্টিভ ওয়ার নেতৃত্বে। তারপর ২০০৩ ও ২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় রিকি পন্টিং-এর নেতৃত্বে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ স্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বকাপে টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত ছিল তারা। ২০১১ সালে গ্রুপ ম্য়াচে পাকিস্তান তাদের বিজয় রথ থামায়।
আয়োজকই বিজয়ী (২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত)
এরপর থেকে দুটি বিশ্বকাপে আয়োজক দেশগুলিকেই চ্যাম্পিয়ন হতে দেখা গিয়েছে। দুটি বিশ্বকাপেই ফাইনালিস্ট ছিল সহ-আয়োজক দেশগুলিই। ২০১১ সালে ফাইনালে খেলে ভারত ও শ্রীলঙ্কা, আর ২০১৫-তে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। কিন্তু যেই দেশের মাটিতে ফাইনাল খেলা হয়েছে, সেই দেশই কিন্তু ফাইনালে জয়ী হয়েছে।
২০১৯ সালে ফাইনালে উঠেছে আয়োজক ইংল্যান্ড। শেষ তিনটি ম্যাচে ব্য়াটে বলে ফিল্ডিং-এ তারা যে দাপট দেখিয়েছে - তার তুলনা এই বিশ্বকাপে মেলেনি। নিউজিল্য়ান্ড, সেমিফাইনালে ভারতের মতো দলকে হারালেও ফাইনালেও তারা আন্ডারডগ। আয়োজকই জয়ী বিশ্বকাপের এই সাম্প্রতিক প্রবণতা কি তারা এইবার ভেঙে কোনও নতুন যুগের সূচনা করতে পারবে? রবিবার সেই দিকেই চোখ থাকবে ক্রিকেট প্রেমীদের।