মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে বিশ্বকাপের গা-ঘামানো ম্যাচ। অংশগ্রহণকারী প্রতি ১০টি দলই দুটি করে অনুশীলন ম্যাচ খেলেছে। অবশ্য বৃষ্টির জন্য বেশ কয়েকটি ম্য়াচ পণ্ড হয়েছে। তবে তার মধ্যেও আইসিসি আয়োজিত এই গা-ঘামানো ম্য়াচগুলি দারুণ জমজমাট হয়েছে। একদিকে যেমন এই ম্যাচগুলির মধ্যয়ে বিশ্বকাপের ঢাকে কাঠি পড়ল বলা যায়, তেমনই, এইবারের বিশ্বকাপ সত্যি সত্যি কতটা প্রতিযোগিতামূলক হতে চলেছে, তারও স্পষ্ট আভাস মিলেছে।
পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। ভারত নিউজিল্যান্ডের সুইং বোলিং-এর বিরুদ্ধে ধরাশায়ী হয়েছে, আবার কিউইদের বিরুদ্ধেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪২১ রান তুলেছে। এইসব আকর্ষণীয় ফলাফলের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার কিন্তু বিশ্বকাপের আগে এই ম্যাচগুলিতেই বিশ্বকাপে কী করতে চলেছেন তার একটা আগাম জানান দিয়ে রেখেছেন। দেখে নেওয়া যাক ওয়ার্ম-আপ ম্যাচেই বিশ্বকাপের উত্তেজনা বাড়িয়ে তুললেন কোন কোন ক্রিকেটার -
ট্রেন্ট বোল্ট
২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিন্ডের ফাইনালে ওঠার পিছনে বচেয়ে বড় অবদান ছিল বোল্টের। ৯ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে মিচেল স্টার্কের সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন। এইবারেও ২টি ওয়ার্ম-আপ ম্য়াচে ৮ উইকেট নিয়ে তিনিই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ভারতের বিরুদ্ধে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও তিনি সমসংখ্যক উইকেট নিয়েছেন।
স্টিভেন স্মিথ
এক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন। আইপিএল-এ ঝলক দেখালেও ধারাবাহিকতা ছিল না। কিন্তু ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ফের ম্যাচ উইনারের ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন স্টিভেন স্মিথ। তাঁর অনবদ্য ১১৬ রানের দৌলতেই ইংল্যান্ডকে ১২ রানে পরাজিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে গত ১ বছরের খিদে মেটাবেন স্মিথ, এমনটাই ধারণা ক্রিকেট মহলের।
লিয়াম প্লাঙ্কেট
এবারের আইপিএল-এ যে কয়জন 'বুড়ো' ক্রিকেটার শোরগোল ফেলেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন ইংল্যান্ডের লিয়াম প্লাঙ্কেট। দলের প্রথম ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনি ওয়ার্নার, মার্শ, খোয়াজা এবং অ্যালেক্স কেরির উইকেট নিয়েছেন। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বল না করলেও রহমত শাহ-এর গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ নিয়েছেন, এবং শহিদিকে দুর্তভাবে রানআউট করেছেন।
মহেন্দ্র সিং ধোনি
চলতি বছরের শুরুতে ধোনিকে আদৌ বিশ্বকাপের দলে রাখা উটিত কিনা এমন প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে তিনি ফের ফিনিক্স পাখির মতো উঠে এসেছেন সাফল্যের শিখরে। আইপিএল-২০১৯'এ চেন্নাই সুপার কিংস দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন। আর তারপর সেই ফর্ম সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বিশ্বকাপেও। তার প্রমাণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর ৭৮ বলে ১১৩ রান।
জোফ্রা আর্চার
বলতে গেলে তাঁকে নিয়ে একপ্রকার জুয়াই খেলেছে ইংল্যান্ড। আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। কিন্তু, আইপিএল-সহ বিভিন্ন টি২০ টুর্নামেন্টে তাঁর দক্ষতার পরিচয় পেয়ে তাঁর উপর আস্থা রাখে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। আফগৈানিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ার্ম-আপ ম্য়াচে তিন উইকেট নিয়ে তিনি সেই আস্থার মর্য়াদা দিয়েছেন। বিশ্বকাপে তিনি ইংল্য়ান্ড দলের এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শাই হোপ
শাই হোপের প্রতিভা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট মহল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই প্রতিভার স্ফুরণ সেইভাবে ঘটেনি। কিন্তু, বিশ্বকাপের বড় মঞ্চ তাঁর প্রতিভাকে বের করে আনতে পারে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। আর বিশ্বকাপে অভিষেকের ঠিক আগে ওয়ার্ম-আপ ম্য়াচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত শতরান (৮৬ বলে ১০১) করে নিজের আগমনের আগাম বার্তা দিয়ে রেখেছেন তিনি।
কেএল রাহুল
ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি লাভ যদি কেউ করে থাকেন, তিনি হলেন কেএল রাহুল। দীর্ঘদিন ফর্মে ছিলেন না। সেই সঙ্গে জড়িয়েছিলেন মাঠের বাইরের বিতর্কে। সব মিলিয়ে কেরিয়ারের নিম্নতম বিন্দুতে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রায়। একটা ভালো আইপিএল মরসুমের পরই দ্বিতীয় ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ভঙ্গীতে তিনি ৯৯ বলে ১০৮ রান করেছেন, তাতে অন্তত বিশ্বকাপের প্রথম ক.য়েকটি ম্যাচে প্রথম একাদশে তাঁর সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত।