অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৭৮ রান। বৃষ্টির কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা কমে হয় ১৭০। তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করল বাংলাদেশের ছোটরা। এই প্রথমবার বিশ্বসেরার খেতাব জিতল বাংলাদেশ। অনুর্ধ্ব ১৯ স্তরে হলেও এই জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাছে নিঃসন্দেহে স্মরণীয় সাফল্য।
এ দিন যেন ফাইনাল জিততে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। রান তাড়া করার সময় কিছুটা চাপে পড়া ছাড়া এ দিন গোটা ম্যাচেই ভারতের ছোটদের উপর কর্তৃত্ব করে বাংলাদেশের ছোটরা। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে যন্ত্রণায় কাতর ব্যাটসম্যান ইমনের হার না মানা লড়াই, বল হাতে শরিফুলের দাপট। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আলির ইনিংস। কঠিন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় টেল এন্ডার রাকিবুলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয় এনে দেন তিনি। ফাইনালের সেরাও হন তিনি।
ফেভারিট ভারতকে প্রবল চাপে ফেলে ৪৭.২ ওভারে অল আউট করে দেয় বাংলাদেশের ছোটরা। ফাইনালে স্নায়ুর চারপ নিতে না পেরেই হয়তো বাংলাদেশের বোলিং এবং আগ্রাসী ফিল্ডিংয়ের সামনে ভেঙে পড়ল ভারতীয় ব্যাটিং। তার মধ্যেও ফাইনালে দুরন্ত ব্যাটিং করলেন ভারতীয় পেনার যশস্বী জয়সওয়াল। ফাইনালেও ৮৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু তিনি ফিরতেই ভারতের শেষ সাত উইকেট পড়ে যায় মাত্র ২৩ রানে।
ভারতের ছোটরা এ দিন এতটাই স্নায়ুর চাপে ছিল যে গুরুত্বপপূর্ণ সময়ে দু'টি রান আউটে উইকেট হারায় তারা। তবে এ দিন যেন ইতিহাস সৃষ্টি করতেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বোলিং এবং ফিল্ডিং, দুই বিভাগেই অপ্রতিরোধ্য লেগেছে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুরন্ত করে বাংলাদেশের দুই ওপেনার। একটা সময়ে কোনও উইকেট না হারিয়ে ৫০ রান তুলে ফেলে তারা। কিন্তু তার পরেই ভারতকে ম্যাচে ফেরায় লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণোই। পর পর বাংলাদেশের চার উইকেট তুলে নেয় দুরন্ত ছন্দে থাকা এই লেগ স্পিনার। কিন্তু চোট পেয়ে প্যাভিলয়নে ফিরে যাওয়া ওপেনার ইমন ফের মাঠে নেমে দলের হাল ধরেন। অধিনায়ক আকবরের সঙ্গে তাঁর ধৈর্যশীল ব্যাটিং বাংলাদেশকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে দিচ্ছিল। যশস্বীর বলে ইমন ফিরলেও টলানো যায়নি অধিনায়ক আকবর আলিকে। বাংলাদেশের কাজটা আরও কিছুটা সহজ করে দেয় বৃষ্টি। ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে শেষ দিকে বাংলাদেশের টার্গেট কমে হয় ১৭০। শেষ দিকে সহজেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।
বাংলাদেশের হয়ে এ দিন শরিফুল ৩১ রানে ২টি উইকেট নেন। তিনটি উইকেট নেন অভিষেক দাস। সাকিবও নেন দু'টি উইকেট। তিন পেসারের সামনে কখনওই খোলস ছেড়ে বেরোতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। যশস্বী ছাড়া ভারতের হয়ে ৩৮ রান করেন তিলক ভার্মা। ২২ রান করেন ধ্রুব জুরেল। এই তিনজন ছাড়া আর কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি।
বিশ্বকাপ হাতছাড়া হলেও এই টুর্নামেন্ট থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাপ্তি কম নয়। যশস্বী, বিষ্ণোইদের ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের সম্পদ বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। টুর্নামেন্ট-এর সেরা হন ভারতের যশস্বী জয়সওয়াল।