বিশ্বকাপ ২০১৯, স্মিথ-ওয়ার্নারকে জায়গা করে দেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ! কেমন হল অস্ট্রেলিয়া দল

বছরের শুরুতেও বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলের উপর বাজি ধরতে রাজি ছিল না কেউ। কিন্তু, বিশ্বকাপের ঠিক আগে ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পর পর সিরিজ জিতে খেতাব ধরে রাখার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে অজিরা। স্মিথ ও ওয়ার্নারের প্রত্যাবর্তনে দলের শক্তি আরও বেড়েছে। তবে তাঁদের ব্য়াটসম্যানরা স্পিনের বিরুদ্ধে কতটা সফল হন, এবং পাটা উইকেটে জোরে বোলাররা কতটা নিজেদের সুনাম ধরে রাখতে পারেন, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

 

amartya lahiri | Published : Apr 24, 2019 5:16 AM IST / Updated: Apr 24 2019, 10:49 AM IST

চলতি বছরের শুরুতেও বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলের উপর বাজি ধরতে রাজি ছিল না কেউ। কিন্তু, বিশ্বকাপের ঠিক আগে ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পর পর সিরিজ জয়ে ফের একবার বিশ্বকাপ জেতার দাবিদারদের একজন হয়ে উঠেছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তার উপর স্মিথ ও ওয়ার্নারের প্রত্যাবর্তনে দলের শক্তি আরও বেড়েছে।

স্মিথ-ওয়ার্নারের নির্বাসনের পর থেকে গত একবছর ধরে ক্রমে অজি দলের পারফরম্যান্স গ্রাফ নামছিল। কিন্তু শেষ দুই সফরের সাফল্যে কাপ ধরে রাখার প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাসটা পেয়ে গিয়েছে তারা। গত দুই মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া দলে যাঁরাই সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরাই পারফর্ম করেছেন। এতে অজি নির্বাচকদের কাজটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ১৫ জনের দল বেছে নিলেও এখনও প্রথম একাদশে স্মিথ-ওয়ার্নারকে জায়গা করে দেওয়াটা বেশ কঠিনই হে দাঁড়িয়েছে।

স্মিথ, ওয়ার্নার, ফিঞ্চ, ম্যাক্সওয়েল, ও স্টার্ক - ২০১৫ সালের বিশ্বজয়ী দলের মাত্র ৫ সদস্য বর্তমান দলে জায়গা পেয়েছেন। ২০১৫-তে অজি দলের গোড়াপত্তন করেছিলেন ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার। ভারত সফর থেকে ওয়ার্নারের জায়গায় ওপেন করে দারুণ সফল হয়েছেন খোয়াজা। অপর দিকে পাক সিরিজে ফর্ম ফিরে পেয়েছেন অধিনায়ক ফিঞ্চও। আইপিএল-এ ওয়ার্নার-ও আগুনে ফর্মে রয়েছেন। বিশ্বকাপে সম্ভবত তাঁকে জায়গা করে দিতে তিন নম্বরে নেমে যেতে হবে খোয়াজাকে। চার নম্বরে অবশ্যই আসবেন প্রাক্তন অধিনায়ক স্মিথ।

১৫ সদস্যের অজি দলে অলরাউন্ডার রয়েছেন মাত্র দুইজন - গ্লেন ম্য়াক্সওয়েল ও মার্কাস স্টইনিস। তাঁদের দুজনকেই একসঙ্গে খেলানো হবে না কোনও একজন খেলবেন সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সম্ভবত একজন নিয়মিত খেলবেন, অপরজনকে পরিস্থিতি অনুযায়ী শন মার্শের সঙ্গে অদলা-বদলি করে খেলানো হবে। উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স কেরি আসবেন ৭ নম্বরে।

অজি জোরে বোলিং বিভাগ কতটা ভালো? মিচেল স্টার্কের সঙ্গে বোলিং শুরু করবেন বলে যে জস হ্যাজেলউডকে নিয়ে আলোচনা চলছিল, তাঁকেই দলের বাইরে থাকতে হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে তিনি পিঠে চোট পেয়েছিলেন। বিশ্বকাপের আগে সেই চোট সেরে গেলেও  তাঁর যথেষ্ট ম্য়াচ খেলার অভাব রয়েছে বলে মনে করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। হাতে যথেষ্ট ভালো বিকল্প থাকাতেই তাঁকে বাদ পড়তে হয়েছে।

প্যাট কামিন্স, জেসন বেহরেনডর্ফ, ঝাই রিচার্ডসন ও নাথান ক্যুল্টার নাইল - চার জনের প্রত্যেকেই যে কোনও দলের প্রথম একাদশের সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন। স্টার্ক ও রিচার্ডসনেরমান্য ফিটনেস নিয়ে সমস্যা আছে, তবে বিশ্বকাপের আগেই তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।

দলের প্রধান স্পিনার অবশ্যই অ্য়াডাম জাম্পা। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্বিতীয় স্পিনার নাথান লিয়নকেও তাঁর সঙ্গে খেলাতে পারে অস্ট্রেলিয়া।

গোড়ায় পাত্তা না পেলেও পারফরম্যান্সের জোরেই খেতাব ধরে রাখার বিষয়ে অন্যতম সেরা বাজি হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ভালো মানের স্পিন বোলিং-এর বিরুদ্ধে এই অজি দলের ব্য়াটসম্যানদের কিছুটা হলে সমস্য়া রয়েছে। স্পিনের বিরুদ্ধ সেই সঙ্গে পাটা উইকেট পড়লে তাদের জোরে বোলাররা কতটা নিজেদের ফর্ম ধরে রাখতে পারেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে অন্তত সেমিফাইনালে পৌঁছনোটা তাদের নিশ্চিত।

 জন্য অভিজ্ঞ মার্টিন গাপ্টিলের সঙ্গে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান হিসেবে কলিন মুনরোকে খেলিয়ে দেখেছিল ব্ল্যাকক্যাপসরা। কিন্তু, ধারাবাহিকতার অভাবে প্রথম দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন মুনরো। তাঁর জায়গায় শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম শতরান-সহ ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে নিজের জায়গা পাকা করেছেন হেলরি নিকোলস। মুনরোও দলের সঙ্গে থাকছেন, তবে ব্যাক-আপ ওপেনার হিসেবে।

মিডল অর্ডারে কিউইদের প্রধান ভরসা অভিজ্ঞ রস টেলর ও অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। গত ৪-৫ বছরে নিজের খেলাকে অন্য মাত্রায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন টেলর। গত ৫ বছরে একদিনের ক্রিকেটে তাঁর রানের গড় ৬৩.৪৭। আর কেইন উইলিয়ামসনকে তুলনা করা হয় বিরাট কোহলির সঙ্গে। ল্যাথাম, নিশাম, গ্র্যান্ডহোম - বাকি ব্য়াটিং লাইনআপ কিন্তু চাপের মুখে খুব একটা ভরসার নয়।

জেমস নিশাম অবশ্য ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনেসিরিজে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। স্পিন জুটি হিসেবে রিস্ট স্পিনার ইশ সোধির সঙ্গে আছেন হাঁটুর অপারেশনের পর দলে ফেরা মিচেল স্যান্টনার।

জোরে বোলিং বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। নিজের দিনে কী করতে পারেন, তা ভারতের বিপক্ষে একদিনের সিরিজে সম্প্রতি আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে দলে আছেন লকি ফার্গুসন, ম্য়াট হেনরি ও টিম সাউদি। দীর্ঘদিন নিজের পুরনো ফর্মে নেই সাউদি। তাই প্রথম একাদশে সম্ভবত জায়গা মিলবে না তাঁর। তবে তাঁর অভিজ্ঞতাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে চাইবে দল। তবে এক্স ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন লকি ফার্গুসন। গতির সঙ্গে তাঁর নিয়ন্ত্রণও খুব ভালো।

এই কিউই দলের মধ্যে কাপ জেতার সম্ভাবনা থাকলেও ব্য়াটিং-এ অতিরিক্ত টেলর-উইলিয়ামসন নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে হবে। গাপ্টিল ও নিকোলস এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারেন। ইংল্যান্ডে সাধারণত বল নড়া-চড়া করলেও বিশ্বকাপে উইকেট পাটা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে বোল্ট অনেকটাই ভোঁতা হয়ে যেতে পারেন। ফার্গুসন ও হেনরি কিন্তু গতির হেরফেরেও উইকেট তোলার ক্ষমতা রাখেন।

গতবারের ফাইনালিস্টদের মাঝের ব্যাটসম্যানদের স্পিনারদের বিরুদ্ধে দুর্বলতা বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। ল্যাথাম ছাড়া ভালো মানের স্পিন বোলিং খেলার মতো লোকের অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও অন্তত শেষ চারটি দলের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া উচিত কেইন উইলিয়ামসনদের। তবে বিশ্বকাপের ভাগ্যও বরাবর ব্ল্যাকক্যাপসদের বিরুদ্ধে থেকেছে।

নিউজিল্যান্ডের ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপের দল:

কেইন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), মার্টিন গাপ্টিল, হেনরি নিকোলস, রস টেলর, টম ল্যাথাম (উইকেটরক্ষক), কলিন মুনরো, টম ব্লান্ডেল (উইকেটরক্ষক), জেমস নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসন, এবং ট্রেন্ট বোল্ট।

Share this article
click me!