দেবীপক্ষে কেন কুমারী পুজা করা হয়, জেনে নিন এই বিশেষ রীতির মাহাত্ম্য ও পূজা পদ্ধতি

শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে, বানাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সেই সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।
 

Web Desk - ANB | Published : Sep 22, 2022 4:47 AM IST / Updated: Sep 22 2022, 01:22 PM IST

কুমারী পূজা হলো তন্ত্রশাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে, বানাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সেই সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।

বর্তমানে বাঙালিদের মধ্যে কুমারী পূজার প্রচলন কমে এসেছে। বেলুড় মঠে সাড়ম্বড়ে কুমারী পুজো করা হয়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ মধ্যপ্রদেশ এর অঞ্চল বিশেষে এখনও ঘরে ঘরে নবরাত্রি উপলক্ষে কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে। প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনগুলিতে এখনও কুমারী পুজোর প্রথা রয়েছে। প্রতি বছর দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পুরোহিত দর্পণ থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হযে়ছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোন জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যে-কোনও কুমারীই পূজনীয়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত হলেও কোথাও বলা নেই যে ব্রাহ্মণ কন্যাই কেবল পূজ্য। এই বিষয়টি সামাজিক সূত্রে তৈরি এক বর্ণভেদের  উদাহরণ মাত্র, যেখানে জাত-পাত বিশেষে প্রাধাণ্য দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী যে কোনও কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে এই সকল কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।

এক বছরের কন্যা — সন্ধ্যা
দুই বছরের কন্যা — সরস্বতী
তিন বছরের কন্যা — ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যা — কালীকা
পাঁচ বছরের কন্যা — সুভগা
ছয় বছরের কন্যা — উমা
সাত বছরের কন্যা — মালিনী
আট বছরের কন্যা — কুব্জিকা
নয় বছরের কন্যা — কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যা — অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যা — রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যা — ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যা — মহালক্ষ্মী
চৌদ্দ বছরের কন্যা — পীঠনায়িকা
পনেরো বছরের কন্যা — ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা — অন্নদা বা অম্বিকা
 

আরও পড়ুন- দুর্গাপুজা ও তার পরবর্তী সময় এই ৫ রাশির জন্য খুব চাপের হতে পারে, দেখে কোন রাশি আছে এই

আরও পড়ুন- দুর্গাপুজোর সময় থেকে বাকি বছরটা এই ৪ রাশির জন্য অত্যন্ত শুভ, জেনে নিন কারা আছেন 

আরও পড়ুন- এই বছর মা দুর্গার আগমণ হবে 'হাতিতে' চড়ে, জেনে নিন মায়ের প্রতিটি বাহনের গুরুত্ব


কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো- নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনিতে বর্ণিত আছে, এই ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন।

Read more Articles on
Share this article
click me!