মল্লরাজারা আজও কামান দেগে শুরু করেন ' সন্ধি পুজো'

আজও তোপ দেগে সূচিত হয় মল্লরাজাদের সন্ধিপুজো। মহাদণ্ড উপাধিধারীরা বংশানুক্রমে মল্লরাজবংশের কামান দাগেন৷ মল্লরাজাদের দুর্গোৎসব হাজার বছর ছাড়িয়েছে। ঐতিহাসিক এই পুজোর মহাষ্টমীর অজানা কথায় অনিরুদ্ধ সরকার

সকাল থেকেই রাজবাড়ি ও মৃন্ময়ী মন্দিরে চরম ব্যস্ততা। কামানে বারুদ ভরতে ব্যস্ত কারিগররা। বারুদ ঠাসা শেষ হতেই মূর্চ্ছা পাহাড়ের ওপর কামান বয়ে নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় তোপধ্বনি। আগে পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্টই কামান ফাটিয়ে ঘোষণা করা হত। আজ সব হয় না। কিন্তু কিছু রীতি রয়ে গেছে। আর তা মেনে আজও তোপ দেগে শুরু হয় সন্ধিপুজো। পুজোর জৌলুস এখন খানিকটা ফিকে কিন্তু কামান ফাটিয়ে সন্ধিপুজোর সূচনা করার প্রাচীন রীতি আজও অটুট। 

মল্ল বংশের আদিপুরুষ হিসাবে যার নাম জানা যায় তিনি হলেন রঘুনাথ মল্ল। যিনি ‘আদিমল্ল’ নামে পরিচিত ছিলেন৷ মল্লরাজারা নিজেদের নামে বর্ষপঞ্জি চালু করেছিলেন। সে হিসেবে আদিমল্লই এই মল্লাব্দের প্রচলন করেন।৩০৩ মল্লাব্দ নাগাদ বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের দুর্গাপুজো শুরু করেন জগৎমল্ল। ৩০৩ মল্লাব্দ মানে ৯৯৭ সাল।জগৎ মল্ল ছিলেন মল্ল বংশের ১৯তম রাজা। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মৃণ্ময়ী মন্দির।

Latest Videos

মল্লদের আদি রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্ননগরে, পরে ৯৯৪ সাল নাগাদ বিষ্ণুপুরে মল্লরা তাঁদের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। রাজা জগৎ মল্লের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় মৃন্ময়ী মন্দির। মল্লরাজাদের প্রথম মন্দির। গঙ্গা থেকে মাটি তুলে এনে দেবীর প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয়। গঙ্গামাটিতে তৈরি এই মূর্তি বিসর্জন হয় না। স্বপ্নাদেশ পেলে অঙ্গরাগ বা রং করা হয়। মৃন্ময়ী দেবীর সঙ্গে পটে আঁকা আরও তিনটি দুর্গারও পুজো হয়৷ এঁরা হলেন বড় ঠাকুরানি, মেজো ঠাকুরানি ও ছোট ঠাকুরানি৷ তিনটি পট একইরকম দেখতে হলেও বড় ঠাকুরানি লক্ষ্মীবিলাস শাড়ি পরিহিতা, মেজো ঠাকুরানির শাড়ি লাল রঙের এবং ছোট ঠাকুরানির শাড়ির রং কমলা৷ বংশপরম্পরায় ফৌজদার পরিবার এই পটগুলি অঙ্কন করেন।

পঞ্চমীর তেরো দিন আগে থেকেই এখানে পুজো শুরু হয়ে যায়। কামানের তোপধ্বনির মাধ্যমে সমগ্র এলাকাবাসী জানতে পারে বিষ্ণুপুর রাজবাড়িতে পুজো শুরুর সংকেত। এই তোপধ্বনি দেওয়ারও বিশেষ নিয়ম আছে। রাজবাড়ির বিপরীতে গোপালসায়রে সপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নান করানোর সময় প্রথমে তিনটি তোপধ্বনি পড়ে। দেবী প্রতিমা মন্দিরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি তোপধ্বনি দেওয়া হয় আর সবশেষে দেবীকে দুপুরে ভোগ অর্পণের পরে আরও তিনটি তোপধ্বনি করা হয়।

আরও পড়ুন - আর্ট কলেজের ব্যস্ততা থেকে নান্দনিকতা-বুড়ো শিবতলা জনকল্যাণ সঙ্ঘের পুজোয় থিমে ইউনেসকোর সম্মান জয় করা শিল্পীরা 

বাংলার বেশিরভাগ পুজোই কালিকাপুরাণ মেনে করা হয় কিন্তু বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের পুজো বলিনারায়ণী প্রথা মেনে করা হয়। মল্লরাজারা বীর হাম্বীরের আমলে শাক্ত থেকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হন। যে কারণে দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর দিন পশুবলি প্রথা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সেযুগে কামানের তোপ-গর্জনের মধ্য দিয়ে সূচিত হত সন্ধিপুজো। যে রেওয়াজ আজও অক্ষুণ্ণ রয়ে গেছে। বিষ্ণুপুরের রাজবাড়ির তোপধ্বনি শুনে জেলার অন্যান্য পুজোর সন্ধিপুজো সূচিত হয়। মন্দিরের কাছেই একটি ছোটো টিলা নাম মূর্ছা পাহাড়। তার ওপর থেকেই এই কামান দাগা হয় যা দেখতে আজও প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। কামান দাগার পর রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়।

অতীতে মল্লরাজারা সন্ধিপুজোর সময়  রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত  অষ্টধাতুর বিশালাক্ষী মূর্তিতে স্বর্ণচাপা ফুল দিয়ে রাজঅঞ্জলি দিতেন। তা সম্পূর্ণ হওয়ার পর অন্যান্যরা অঞ্জলি দিতে পারতেন। সেই পরম্পরা আজও চলে আসছে।
বিষ্ণুপুরে তোপ দাগা নিয়ে আরও একটি গল্প রয়েছে। শোনা যায়,
বর্গী আক্রমণের সময় বিষ্ণুপুরকে রক্ষা করতে  মদনমোহন নাকি স্বয়ং কামান দেগেছিলেন। অতএব বিষ্ণুপুর - মল্লরাজা এবং কামান আজও একসূত্রে গাঁথা। যা নিয়ে মিথের অন্ত নেই।

আরও পড়ুন - বেহালা ফ্রেন্ডস-এর এবছরের থিম ‘দুর্গাযাপন’, জেনে নিন এর অর্থ কী, কী রয়েছে পুজোর বিশেষত্ব

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

‘সরকারকে প্রশ্ন করলেই সরকার উলঙ্গ হয়ে যাবে!’ বক্তব্য রাখতে না দেওয়ায় বিস্ফোরক Sajal Ghosh
'মাননীয়া আপনার শাড়িতে দুর্নীতির কালো ছোপ ছোপ দাগ' মমতাকে (Mamata) এ কী বললেন অগ্নিমিত্রা ?
আজ রাজ্যে উপনির্বাচনের (By Election) রেজাল্ট আউট, সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগণনা (Vote Counting)
‘অনেকদিন পর কেষ্টদা ফিরেছে তাই একটু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে’ অদ্ভুত ব্যাখ্যা Satabdi-র! | Satabdi Roy News
Suvendu Adhikari Live: বিধানসভার বাইরে মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী, দেখুন সরাসরি