বসুমল্লিক বাড়ির দুর্গাকে ডাকের সাজ ছেড়ে পরানো হয়েছিল বেনারসি, ফুলশয্যায় আজও দেবীর বেনারসিতেই সাজেন বাড়ির নববধূ

রাধানাথ বসুমল্লিক ছিলেন সালকিয়ার ‘হুগলি ডক ইয়ার্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা।  জাহাজ ও অন্যান্য ব্যবসা করে তিনি প্রচুর সম্পদ উপার্জন করেন। তিনিই শুরু করেন জাঁকিয়ে দুর্গাপুজো। 

কলেজ স্কয়ারের উল্টোদিকে কর্পোরেশনের গায়ে লাগানো যে সরু গলি, তার শেষ মাথায় রয়েছে বসুমল্লিকদের আদি বাড়ি। রাধানাথ প্রতিষ্ঠিত এই আদি বাড়ির পুজোটি ছাড়াও ২২, রাধানাথ মল্লিক লেন এবং ৪৬ শ্রীগোপাল মল্লিক লেনে এই পরিবারের আরও দুটি শরিক-বাড়িতে এখনও দুর্গাপুজো হয়। সেই কাহিনীর অন্বেশনে সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার।


মালিক থেকে মল্লিক- 
বসুমল্লিক পরিবারের গোপীনাথ বসু এবং তাঁর ভাই বল্লভ পাঠান সুলতানি দরবার থেকে ‘মালিক’ উপাধি লাভ করেন। পরে ওই ‘মালিক’ ‘মল্লিক’-এ রূপান্তরিত হয়। এই বসুমল্লিকদের একটা শাখা হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ার কাছাকাছি কাঁটাগড় গ্রামে চলে যায়। এই পরিবারের রামকুমার বসুমল্লিক ১৭৯৪ সালে কলকাতার পটলডাঙার কৃষ্ণরাম আইচের কন্যা শঙ্করীকে বিবাহ করে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। রামকুমার-শঙ্করীর পুত্র রাধানাথ পটলডাঙায় জাঁকিয়ে বসেন। তাঁকেই বসুমল্লিক পরিবারের প্রাণপুরুষ হিসেবে ধরা হয়।

Latest Videos


পুজো শুরু কখন থেকে- 
রাধানাথ ছিলেন সালকিয়ার ‘হুগলি ডক ইয়ার্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা।  জাহাজ ও অন্যান্য ব্যবসা করে তিনি প্রচুর সম্পদ উপার্জন করেন। ১৮৩১ সাল নাগাদ পঞ্চাননতলা লেনে ঠাকুরদালান-সহ বিশাল বাড়িটি। নির্মাণ করেন। রাধানাথের নামানুসারে যা এখন ১৮এ, রাধানাথ মল্লিক লেন হিসেবে পরিচিত। এই বাড়িতেই রাধানাথের আমলে জাঁকিয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো। 


পুজো পদ্ধতি- 
পুজো শুরু মহালয়ার পরের দিন থেকে ৷ সেই সময় বেল-কাণ্ডকে দেবী রূপে কল্পনা করে বোধন আরম্ভ হয়। মহাষষ্ঠীর বরণের পর আরম্ভ হয় মূল প্রতিমায় পুজো। বসুমল্লিক বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কলাবউ স্নান। এখানে কিন্তু গঙ্গাস্নানে যান না নবপত্রিকা ৷ আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা সাততীর্থের জল আপ পদ্মরেণু দিয়ে সহস্রধারায় স্নান করানো হয় কলাবউকে ৷ তারপর মায়ের পাশে কলাবউকে প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ একচালার প্রতিমার গায়ে উজ্জ্বল বাসন্তী রং, ঘোটকাকৃতির সিংহ এখানকার বৈশিষ্ট্য ৷ আগে হত ডাকের সাজ ৷ পরে এই বাড়িরই এক গিন্নি মানত করে মা-কে বেনারসী পরানোর চল শুরু করে ৷ এখন দুই মেয়ে-সহ মা’কে পরানো হয় বেনারসী শাড়ি ৷ মহাষ্ঠীর দেবী বরণ, সন্ধিপুজোয় ও মহানবমীর চালকুমড়ো বলির সময়ে বন্দুক ফাটানো এ বাড়ির রেওয়াজ ৷ বলির পর কাদামাটি খেলার অদ্ভুত এক প্রথা রয়েছে এখানে ৷ দশমীর সকালে ও বিকালে মা কে বরণ করার পর নিমতলা ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। 




ভোগবৃত্যান্ত- 
অব্রাহ্মণ পরিবার বলে পুজোয় অন্নভোগের আয়োজন করা হয় না! তার পরিবর্তে গোটা ফল, গোটা আনাজ, শুকনো চাল, নানা ধরনের মিষ্টি ইত্যাদি ভোগ দেওয়া হয়। 


সিঁদুর খেলা- 
বসুমল্লিক বাড়িতে প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিনই হয় সিঁদুর খেলা ৷ দু’টি খুঁড়িতে রাখা হয় সিঁদুর ৷ একটা মা দুর্গার লাল সিঁদুর, অন্যটায় মা চণ্ডীর মেটে সিঁদুর ৷ এই দুই সিঁদুর দিয়ে প্রতিদিনই সিঁদুর খেলেন বাড়ির এয়োস্ত্রীরা ৷


বেনারসী শাড়ির অদ্ভুত রেওয়াজ- 
দেবী বিসর্জনের পর সযত্নে রেখে দেওয়া হয় সেই বেনারসী ৷ এই বেনারসী পরেই বিয়ে হয় বাড়ির মেয়েদের ৷ আবার পুত্রবধূরাও ফুলশয্যায় সেই শাড়িই পরেন। 

আরও পড়ুন-
ইউরোপের 'আড্ডা'-য় দুর্গাপুজোর আজ ষষ্ঠী, দেখে নিন প্রবাসের মাটিতে খাদ্যরসিক বাঙালিদের পেটপুজোর কিছু ছবি
পেতলের টিকিট দেখিয়ে চোরবাগানের শীল বাড়ি থেকে টাকা পেতেন গরীব-দুখীরা, জেনে নিন সেই বাড়ির দুর্গাকথা
বিদ্যাসাগরের বহু আগে বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন মতিলাল শীল, তাঁর দুর্গাপুজোর জমকে তাক লেগেছিল সমস্ত কলকাতাবাসীর

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury