পাহাড় জঙ্গলে আবৃত পুরুলিয়ার রাজাহেঁসলা গ্রামের দুর্গাপুজো, দুর্গম পথ পেরিয়ে প্রতি বছর আসেন একদিনের রাজা

মোগল সম্রাটদের থেকে লুকিয়ে রাজার অধিষ্ঠান। তারপর রাজপ্রাসাদ তৈরি করে শুরু হল দুর্গাপুজো। আজ কোন পরিস্থিতিতে দুর্গম পাহাড়ি গ্রামের দেবী আরাধনা? 

পুরুলিয়ার ঝালদা থানার দুর্গম পাহাড় জঙ্গল ঘেরা রাজাহেঁসলা গ্রাম, বারবার দাঁতাল হাতির উপদ্রবে সারা বছর যেখানে তটস্থ থাকেন গ্রামবাসীরা, সেখানেও কিন্তু দুর্গাপুজোর আমেজে এতটুকুও কার্পণ্য হয়নি। এখানকার দুর্গা পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় ১,২০০ বছর আগে।   


তৎকালীন দিল্লির সিংহাসনে আসীন মুগল সম্রাটদের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়ে বহু হিন্দু রাজা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আত্মগোপন করেছিলেন পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতর। সম্ভ্রম বাঁচাতে লুকিয়ে ছিলেন বহু মহিলারাও। পাড়ি দিয়েছিলেন পশ্চিম ভারত থেকে পূর্ব ভারতের গভীর অরণ্যের আদিবাসী উপত্যকায়। সুদূর রাজস্থান থেকে এমনই এক হিন্দু রাজপুত রাজা এসেছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদা অঞ্চলের অন্তর্গত এই দুর্গম অঞ্চলে।


 

Latest Videos

চারিদিকে দুর্গম পাহাড় আর গভীর জঙ্গলে ঘেরা হেঁসলা গ্রাম। এখানেই একসময় পালিয়ে এসে লুকিয়েছিলেন রাজা দ্বিগ্বিজয় প্রতাপ সিংহ দেও। সেখানেই থেকে গিয়ে পাহাড় জঙ্গল কেটে তিনি তৈরি করেন বিশাল রাজপ্রাসাদ, ধীরে ধীরে ওই এলাকায় ঘটে তাঁর রাজত্ব বিস্তার।  সেই সময় থেকে গ্রামের নাম রাজাহেঁসলা নামে নামাঙ্কিত হয়।  দুর্গম অঞ্চলের আদি বাসিন্দারা রাজার সঙ্গে সংঘাতে পরাজিত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। মোট ২৪টি মৌজার দখলদারী পান রাজা দ্বিগ্বিজয়। তৈরি করেছিলেন কাছারি, বাগানবাড়ি, নাটমহল, ঠাকুর দালান। খনন করিয়েছিলেন ১২টি পুকুর।

 

আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে দ্বিগ্বিজয় প্রতাপ সিংহ দেওর তৈরি ঠাকুর দালানে শক্তির দেবী হিসেবে মা দুর্গার পুজো শুরু হয়। প্রথমে শক্তি রূপে পূজিত হয় রণমূর্তিধারী দেবীর খড়্গ। পরবর্তী সময়ে পুরুলিয়ার প্রাচীন সংস্কৃতি ছৌ নাচকে অনুসরণ করে দেবী দুর্গার মূর্তি পুজো শুরু হয়েছিল, সেসময় থেকে মাতৃ প্রতিমার মুখ গড়া হত ছৌ নৃত্যের মুখোশের অনুকরণে। রাজবাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে পাহাড়ি ঝর্না হেঁসলা নদী থেকে দেবী দুর্গার ঘট আনা হয়। ঘটা করে ঢাক বাদ্যের সঙ্গে বন্দুক চালিয়ে রাজা নিজে ওই নদীতে ডুব দিয়ে ঘট তুলে আনতেন। বর্তমানেও চালু রয়েছে একই প্রথা। তবে বন্দুকের গুলির বদলে এখন ফাটানো হয় শব্দবাজি। যদিও বর্তমান দিনে গ্রামে আরও বহু দুর্গাপুজো হয়। তবুও গ্রামবাসীদের ঢল নামে এই রাজবাড়িতে। 

বর্তমানে পুজোর সব প্রস্তুতি নেন গ্রামবাসীরাই। আগে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলত ছাগল ও মোষ বলি। বলিপ্রথা এখন বন্ধ।  তবে দেবী দুর্গার পুজো সেই প্রাচীন বৈদিক রীতি মেনেই হয়। সেদিনের সেই রাজা কিংবা তাঁর রাজত্ব এখন আর কোনওটাই নেই। আছে শুধু রাজপ্রাসাদ, কাছারিবাড়ি, ঠাকুর দালান এবং নাটমহল। ওই বড়িগুলিও বর্তমানে জরাজীর্ণ। রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের কেউই এখন আর এখানে থাকেন না। শুধু একজন কেয়ারটেকার ভগ্নপ্রায় বাড়ির দেখভাল করেন। 

এই পুজোর কেন্দ্রে বর্তমানে রয়েছেন রাজা কন্দর্প নারায়ণ সিং দেও। দশমীর দিন একদিনের রাজা সেজে সিংহাসনে অধিষ্ঠান করেন তিনি। প্রজারা এসে তাঁকে প্রণাম করেন। রাজা প্রজাদের মিষ্টি মুখ করান। আনন্দের উদযাপনে রাজাহেঁসলা গ্রামে ফিরে আসে পুরনো রাজতন্ত্র।

আরও পড়ুন-
মূর্তি নয়, পটে এঁকে শুরু হয়েছিল বর্ধমান রাজবাড়ির দুর্গাপুজো, আজও দেবীকে বিসর্জন না দেওয়ার রীতি বিরাজমান
ডেঙ্গির কবল থেকে বাদ পড়লেন না স্বয়ং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও, কেমন আছে তাঁর শারীরিক অবস্থা?

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

Live: মথুরাপুরে সদস্যতা অভিযান অগ্নিমিত্রা পালের, দেখুন সরাসরি
টাকা 'হজম' করার আগেই ধরে ফেলে খেলা ঘুরিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari | Awas Yojana
ভাটপাড়ায় প্রোমোটারের 'দাদাগিরি', আতঙ্কে জমির মালিক, কি বলছে পুরসভা! দেখুন | Bhatpara News
'আমি মারা গেলে আমার যেন স্ট্যাচু না হয়' দলের উদ্দেশ্যে বার্তা মমতার
‘সবরমতি রিপোর্ট’ দেখলেন বিজেপির হেভিওয়েটরা! দেখুন কী বার্তা দিলেন সিনেমার ব্যপারে | Sabarmati Report