ভাটপাড়ায় গণ্ডগোল নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করল রাজ্য বিজেপি। রাজ্য সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে এ দিনই ভাটপাড়ায় অশান্তি নিয়ে রাজভবনে অভিযোগ জানাতে যায় রাজ্য বিজেপি-র একটি প্রতিনিধি দল। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ২৩ মে-র পরও হেরে গিয়ে তৃণমূল যদি একইভাবে গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করে, তাহলে রাস্তায় নেমে তার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বিজেপি।
এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে ভাটপাড়ায় অশান্তির বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জানানোর জন্য রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন বিজেপি নেতারা। দিলীপের দাবি, এর আগে বসিরহাট, বাঁদুড়িয়ায় অশান্তির সময়ও হস্তক্ষেপ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় হলেও প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যের থেকে খোঁজ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা পাঠাতে পারে।
উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত প্রায় তিন দিন অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনার ভাটপাড়া বিধানসভা এলাকার পরিস্থিতি। অসংখ্য বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এলাকায় লাগাতার বোমাবাজি চলছে। এ দিন সকালে রেল অবরোধ চলাকালীন ট্রেন লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি, বোমা মারার অভিযোগ ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রেলযাত্রীরা। বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে নাজেহাল হচ্ছে প্রশাসন।
বিজেপি-র অভিযোগ, নির্বাচনে হেরে যাবে বুঝতে পেরেই ভাটপাড়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হচ্ছে না তৃণমূল সরকার। দিলীপের অভিযোগ, "হার নিশ্চিত বুঝতে পেরে তৃণমূল সরকার এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, যাতে মনে হয় ওরা না থাকলে বাংলায় শান্তি থাকবে না। ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তি তৈরি করা হচ্ছে।"
দিলীপের অভিযোগ, ভাটপাড়ার অশান্তি জিইয়ে রাখতে কয়েকজন পুলিশ অফিসারেরও ভূমিকা রয়েছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি অভিযোগ করেন, "লাগাতার দুষ্কৃতীরা বাড়িতে আগুন ধরাচ্ছে, মহিলাদের উপরে নির্যাতন করছে, অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।" এ দিন অবশ্য ডায়মন্ড হারবার-সহ রাজ্যের অন্য কয়েকটি জায়গায় বিজেপি কর্মীদের উপরে শাসক দল অত্যাচার চালাচ্ছে বলেও রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানান বিজেপি নেতারা।
দিলীপের অবশ্য আশঙ্কা, আগামী ২৩ তারিখ যদি রাজ্যের বেশিরভাগ আসনে তৃণমূল কংগ্রেস হারে, সেক্ষেত্রে ফের গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করা হবে, অশান্তি ছড়াবে শাসক দল। বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, "গণনা কেন্দ্রের মধ্যেও অশান্তি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। ২৩ তারিখ ওরা হারলেই রাস্তা অবরোধ হবে, অশান্তি পাকাবে। সাধারণ মানুষকে আমি বলব, আপনারা যেভাবে সাহস করে ভোট দিয়েছেন, সেভাবেই ভয় না পেয়ে অশান্তির মোকাবিলা করুন।" এর পরেই তৃণমূলকে হুঁশিয়ারির সুরে দিলীপ বলেন, "আর তৃণমূল যদি গুন্ডা নামিয়ে গণ্ডগোল পাকায়, তাহলে বিজেপি-ও চুপ করে বসে থাকবে না, রাস্তায় নেমে কীভাবে গুন্ডাদের প্রতিরোধ করতে হয়, আমরা তা জানি। কোন ফুলে কোন দেবতার পুজো করতে হয়, সেটা আমাদের কর্মীদের ভালভাবে জানা আছে।"
দিলীপের দাবি, আগে থাকতেই তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে এই অশান্তির আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই ২৭ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিলীপের অভিযোগ, দেশের কোথাও নির্বাচন পরবর্তী এমন হিংসার ঘটনা ঘটছে না। একমাত্র বাংলাতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে এত বাহিনী রাখতে হচ্ছে। দিলীপের এ দিনের হুঁশিয়ারিতেই স্পষ্ট, ২৩ মে-র পরে ফের বাংলা উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।