সর্বভারতীয় সবকটি সংবাদমাধ্যমের এক্সিট পোল অনুযায়ীই বাংলায় এবার গেরুয়া ঝড় ওঠার সম্ভাবনা একরকম নিশ্চিত। সবকটি এক্সিট পোলের বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ন্যূনতম এগারোটি আসন বাংলা থেকে বিজেপি-কে দিচ্ছেন সমীক্ষকরা। একটি-দু'টি এক্সিট পোলে শুধুমাত্র বিজেপি-র আসন সংখ্যা বাংলায় আরও কিছুটা কম দেখানো হয়েছে। আবার কোনও কোনও সংস্থা রাজ্য থেকে বিজেপি তেইশটি আসনও পেতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে।
এই এক্সিট পোলকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু যদি এই এক্সিট পোল মিলে যায়, সেক্ষেত্রে কিন্তু তৃণমূল শিবিরে ২০০৯ সালের স্মৃতি ফিরে আসতে বাধ্য. এতদিন ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন তৃণমূলের কাছে সুখস্মৃতি হিসেবেই ছিল। কিন্তু দশ বছর পর এবারের লোকসভা ভোটে বাংলায় যদি সত্যি পনেরো বা তার বেশি আসন দখল করতে পারে, তাহলে কিন্তু ২০০৯-এর সেই সুখস্মৃতি আতঙ্কের মতো গ্রাস করতে পারে তৃণমূলকে। কারণ ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনই এরাজ্যে বামেদের ক্ষমতা হারানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল।
দশ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্য থেকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস জোট ২৫টি আসন পেয়েছিল। তার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৯টি আসন, কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি আসন। এছাড়াও এসইউসিআই পেয়েছিল একটি আসন, তারাও সমর্থন করেছিল তৃণমূলকে। বামেদের আসনসংখ্যা কমে হয়েছিল ১৫। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে দার্জিলিং আসনটি জিতেছিল বিজেপি। কার্যত ওই ফলাফলেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, দু' বছর পরের বিধানসভা নির্বাচনে কী হতে চলেছে। আর ২০১১-র বিধানসভা ভোটে যে ফলাফল হয়েছিল, তা আজ ইতিহাস। ফলে, এক্সিট পোলের এই পূর্বাভাস শাসক দলের অনেক নেতাকেই দশ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনের ফল মনে করিয়ে দিতে বাধ্য। কারণ এবারেও ঠিক বছর দু'য়েকের মাথায় বিধানসভা নির্বাচন হবে রাজ্যে। ২০০৯ যেভাবে মহাকরণ দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ার অক্সিজেন দিয়েছিল তৃণমূলকে, একইভাবে এক্সিট পোল মিলে গেলে এবার সেই অক্সিজেন পেয়ে নবান্ন দখলে দিগুন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়বেন মোদী-শাহরা। এতদিনের ভগ্ম সংগঠনই ক্ষমতা দখলের উৎসাহে প্রবল শক্তিশালী হতে বেশি সময় লাগবে না। সঙ্গে দলবদলের অস্ত্র তো থাকবেই।
তবে এক্সিট পোলের ফল নিয়ে চিন্তা থাকলেও স্বস্তির জায়গাও কিন্তু থাকছে তৃণমূলের। কারণ পাঁচ বছর আগে গত লোকসভা নির্বাচনে কমবেশি প্রায় সব এক্সিট পোলেই তৃণমূলকে যা আসন দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তার থেকে অনেক ভাল ফল করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বরং বেশ কয়েকটি এক্সিট পোলে সেবার বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবল সম্ভাবনার কথা বলা হলেও বাস্তবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বামেরা. ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেবকে ভুল প্রমাণিত করে অনেক বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিলেন মমতা। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে জোট বেঁধে লড়েছিল বাম-কংগ্রেস। তার পরেও ক্ষমতায় ফিরতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আগামী বৃহস্পতিবার তৃণমূলের কাছে ২০০৯, ২০১৪-র মতোই স্বস্তির হয়ে থাকে কি না, সেটাই এখন দেখার।