লোকসভা ভোটের এক বছর আগে ফেডেরাল ফ্রন্টের যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, ভোটের সময় কিন্তু তা অনেকটাই থিতিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সোমবার ফের একবার ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের জল্পনা নতুন করে ভেসে উঠল। সোমবার তিরুয়ন্তপুরমে এসে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর বা কে চন্দ্রশেখর রাও।
শুধু তাই নয়, কেসিআর ফোন করেছিলেন কর্নাটকের মুখ্য়মন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীকেও। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে অবশ্য বলা হয়, সেই ফোন কল ছিল নেহাতই সৌজন্যমূলক। আগামী ১৩ মে তারিখে কেসিআর দেখা করবেন ডিএমকে প্রধান এমকে স্টালিনের সঙ্গেও।
এর আগেও ফেডেরাল ফ্রন্টের ধুয়ো তুলেছিলেন কেসিআর। কিন্তু বরাবরই বিজেপি-ঘেসা হিসেবে পরিটিত টিআরএস। সেই দিক থেকে কেরলের বামপন্থী সরকারের সঙ্গে সাক্ষাত ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন ঘটনা বটে। বিজেপি-র সঙ্গে গা ঘেসাঘেসি বামপন্থীদের একেবারেই না-পসন্দ। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতির যে বদল ঘটেছে তা সোমবার রাতের বৈঠকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
বিজয়নের অফিস থেকে অবশ্য দুই মুখ্য়মন্ত্রীর বৈঠক একেবারেই অরাজনৈতিক ছিল বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচার শেষ করে দুদিন কেরলে বিশ্রাম নিতে এসেছেন কেসিআর। পদ্মনাভস্বামী মন্দির -সহ বেশ কয়েকটি মন্দিরে তিনি যাবেন। তার আগে দুই রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রীর সাক্ষাত ছিল একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাত। তবে দুই নেতার আলোচনায় যে রাজনীতিতর প্রসঙ্গেও এসেছে তাও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
বদলে গিয়েছে ডিএমকে-র সঙ্গে সমীকরণও। গত বছর কেসিআর তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন ডিএমকের সঙ্গে অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য। দেখা করেছিলেন স্টালিন ও ডিএমকে দলের প্রাণপুরুষ করুণানিধির সঙ্গেও। করুণানিধির মৃত্যুর পর অবশ্য স্টালিন হাত মিলিয়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে। এখন আগামী ১৩ তারিখের বৈঠকে সেই ফেডেরাল জোট সরকারের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর ফেডেরাল জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উত্তর ও পূর্ব ভারতের বেশকয়েকটি রাজ্যে গিয়েছিলেন টিআরএস প্রধান। দেখা করেছিলেন বাংলা ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে। দিল্লিতে এসে দেখা করেছিলেন মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও। কিন্তু তারপর থেকে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মমতা এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন তাঁদের যে আলোচনা হয়েছিল তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেসিআর বাংলায ফের আসবেন বলেছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি।
কংগ্রেস অবশ্য প্রথম থেকেই ফেডেরাল ফ্রন্টের বিরোধিতাই করে এসেছে। তাদের মতে ফেডেরাল ফ্রন্ট বস্তুত বিজেপি তথা মোদীর পালেই হাওয়া দেবে। কিন্তু কেসিআর-এর এই নয়া উদ্যোগে লোকসভার ভোটের পাঁচ দফা বোটগ্রহের পর ফের একবার ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের জল্পনা ভেসে উঠল।