কোণঠাসা হয়ে যাওয়া রাজ্যের পরিবর্তন পন্থীদের নিয়ে তৈরি হল নতুন মঞ্চ। তার অন্যতম উদ্যোক্তা কুণাল ঘোষ-সহ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারা। সেই মঞ্চ গঠনের বৈঠকেই হল বিধাননগেরর মেয়র এবং তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্তের আতিথেয়তায়। তাও আবার খোদ বিধাননগর পুরসভার নিজস্ব অফিসে।
রবিবার বিকেলে আচমকাই এই বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। সেখানে কুণাল ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ অমিতাভ মজুমদার, শিয়ালদহের যুব তৃণমূল নেতা সজল ঘোষরা। প্রসঙ্গত তৃণমূলের সঙ্গে মুকুলের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরে কয়েক বছর আগে জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস নামে একটি দল তৈরি হয়েছিল। সেই দলের সভাপতি ছিলেন অমিতাভবাবু। আর এ দিনের বৈঠকে সামনে না এলেও সব্যসাচী নিজে যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তা কার্যত নিজমুখেই স্বীকার করে নিয়েছেন কুণাল। এই বৈঠক থেকেই নবজাগরণ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। অরাজনৈতিক বলে দাবি করলেও কুণাল নিজেই জানিয়েছেন, তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার জন্য লড়াই করেছেন, কিন্তু এখন কোণঠাসা, এমন পরিবর্তনপন্থীদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসবে এই সংগঠন। রাজ্যে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতিক, পুলিশ-প্রশাসনের অপব্যবহার করে যে চক্রান্ত করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই এই সংগঠন কাজ করবে বলে জানিয়েছেন কুণাল।
মুখে অরাজনৈতিক বলে দাবি করলেও এই সংগঠন যে আসলে তৃণমূল বিরোধিতাতেই গড়ে উঠছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে কুণালের মন্তব্যে। অথচ তৃণমূলে থেকেও সেই বৈঠকের ব্যবস্থা করে দিয়ে এবং উদ্যোক্তাদের আপ্যায়ণ করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন সব্যসাচী। কুণাল অবশ্য দাবি করেছেন, বৈঠকে না থাকলেও উপস্থিত অতিথিদের আপ্যায়ণের বিষয়ে সশরীরে হাজির থেকে খোঁজখবর নিয়েছেন সব্যসাচী। কুণালের আরও দাবি, এই সংগঠনের সঙ্গে থাকছেন একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অধ্যাপিকা এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এছাড়াও প্রাক্তন আইএএস অফিসার এবং কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আর এস কহাঁলোও এই সংগঠনের সঙ্গে থাকছেন বলে দাবি করেছেন কুণাল। বিভিন্ন জেলা থেকে এই মঞ্চে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহীরা যোগাযোগ করছেন বলেই দাবি প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদের।
কুণাল বলেন, "যাঁরা অতীত দিন থেকে এ রাজ্যে পরিবর্তনের সাথী ছিলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে পরিবর্তনের আন্দোলেন পা মিলিয়েছিলেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে হারিয় গিয়েছিলেন, অনেক অভিমান নিয়ে থাকা পরিবর্তনের আন্দোলনের যাঁরা সক্রিয় সৈনিক, তাঁদের এই মঞ্চে সামিল করার আবেদন করছি আমরা।"
রীতিমতো আঁটঘাঁট বেধে যে এই মঞ্চের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন জেলায় জেলায় এই নবজাগরণ মঞ্চের বৈঠক আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন কুণাল। আর সব্যসাচী দত্তের উপস্থিতি নিয়ে তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, "বৈঠকে তিনি ছিলেন কি ছিলেন না, সেটা বড় কথা নয়। এটার সঙ্গে রাজনীতি- অরাজনীতি বিতর্ক থাকে না। আমরা যে এখানে যাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি, উনি এত সুন্দর আপ্যায়ণ করেছেন। সেই অ্যাপায়ণ ঠিক মতো হলো কি না, সেটা দেখতে তো ওনাকে আসতে হয়েছে।"
প্রসঙ্গত লোকসভা নির্বাচনের আগেও বিতর্কে জড়ান সব্যসাচী দত্ত। বিজেপি নেতা মুকুল রায় তাঁর বাড়িতে গেলে সব্যসাচীর বিজেপি-তে যোগদান করা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। এর পরে তড়িঘড়ি সব্যসাচীকে নিয়ে বৈঠকে বসেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-সহ তৃণমূল নেতারা। এর পরে বিষয়টি আর না এগোলেও নানা সময়ে বিভিন্ন মন্তব্যে নিজের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন বিধাননগরের মেয়র। সাংস্কৃতিক অবক্ষয়, পুলিশ প্রশাসনের অপব্যবহার, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মতো এ দিনের বৈঠক থেকেও যে অভিযোগগুলি তোলা হয়েছে, তার প্রায় সবকটির তিরই যে শাসক দলের দিকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই বৈঠকেই আতিথেয়তা করে কার্যত দলের সঙ্গে নিজের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে নিলেন সব্যসাচী। এর পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিধাননগরের মেয়রের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।