কাঁচড়াপাড়া থেকে অস্কারের দৌড়ে পিকু, এক বাঙালি কন্যার অজানা কাহিনি

কাঁচড়াপাড়ার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা দে, এখন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উঠতি প্রতিভাবান অভিনেত্রী। তাঁর অভিনীত শ্যাম সিংহ রায় সম্প্রতি মনোনীত হয়েছে অস্কারের জন্য। ঠিক কেমন ছিল কাঁচড়াপাড়া থেকে অস্কার অবধি এই সফর? চলুন জেনে নেওয়া যাক খোদ প্রিয়াঙ্কার মুখ থেকেই।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে গডফাদার ছাড়াও যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তা প্রমাণ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। তরুণ প্রতিভাবান এই অভিনেত্রী সম্পুর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জন করেছেন।তবে কাঁচড়াপাড়া থেকে একেবারে দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের এই পথ খুব সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাই-এর মধ্যে দিয়ে আজ তিনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন। কখনও হাল ছাড়েননি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এশিয়ানেট নিউজের প্রতিনিধি অভিনন্দিতা দেব-এর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা  ভাগ করে নিলেন নিজের জীবনের এই সফরের সাতকাহন। চলুন জেনে নেওয়া যাক।

এশিয়ানেট নিউজ: কাঁচড়াপাড়া থেকে অস্কারের দৌড়ে এই সফরটা কে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?

Latest Videos

প্রিয়াঙ্কা দে: জার্নি-টা শুরু হয়েছিল প্রচুর ঝড় ঝাপটা, প্রচুর স্ট্রাগল দিয়ে। কাঁচড়াপাড়া থেকে যখন আমি শুরু করেছিলাম জার্নিটা সেই সময় আমি একাধিক রিয়্যালিটি শো-তে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য - 'কে হবে বাংলার কোটিপতি'-র মতন শো। এই রিয়ালিটি শো-এর ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত পৌছেছিলাম। সেই সময়ই আমি মডেল বা অভিনেত্রী কিছুই ছিলাম না। পড়াশোনা করতাম। বিভিন্ন চ্যানেল থেকে আমাকে বলা হয়, তোমায় দেখতে এত সুন্দর! তুমি অভিনয়ে কেন চেষ্টা করছ না? তুমি কিন্তু অভিনেত্রী হতে পারো। তারপর বাড়িতে এসে বাবা-মা কে বলেছিলাম। বাবা সেই সময় চেয়েছিলেন আমি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করি। তাই তিনি এ-বিষয়ে আমাকে সমর্থন করেননি সে সময়। তবে মার কাছ থেকে সাপোর্ট পেয়েছিলাম। প্রথমে জি-বাংলা থেকে একটি অ্যড ফিল্মের অফার এসেছিল। তখন আমি টিউশন পড়াতাম। তারপর আমার কাছে পরপর অফার আসতে থাকে। যারা আমার মেকআপ করে দিতেন তারাও আমার অনেককে আমার ছবি পাঠাতেন। এভাবে প্রথমে অপর্ণা সেনের ম্যাগাজিন, এসআরএফটিআই-তে একটা শর্ট ফিল্ম এবং তারপরে কলকাতাতেও বেশ কিছু বিজ্ঞাপণের কাজ করি। অনেক সময় এমন হতো কাঁচড়াপাড়া থেকে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে রীতিমত দুই ঘন্টা যুদ্ধ করে তারপর যখন অডিশনে গিয়ে পৌছাতাম অনেকটা দেরি হয়ে যেত। এই ট্রেন জার্নিতে কাজের জায়গায় দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে আমি কলকাতায় শিফট করি। এরপর অঞ্জলি জুয়েলার্সের ব্র্যান্ড এমব্যাসেডর হওয়ার অফার পেয়েছিলাম।

এশিয়ানেট নিউজ: এই মুহূর্তে কি কি আসন্ন ছবি রয়েছে হাতে?

প্রিয়াঙ্কা দে: এই মুহূর্তে আমি পুরোপুরি  হায়দরাবাদে সেটলড করেছি। এটা নয় যে আমি কলকাতায় কোনও কাজ পেলে করব না। হায়দরাবাদে রয়েছি এখন। 'শ্যাম সিংহ রায়' ছিল আমার প্রথম তেলেগু প্রজেক্ট। এখানে আমি নায়ক নানীর ভাই বউ-এর চরিত্রে অভিনয় করি। এই ছবিতে যীশু সেনগুপ্তও ছিলেন। এই ছবির পর আমি ঠিক করি হায়দরাবাদেই থাকার। তারপর আমার কাছে পরপর ছবির অফার আসতে থাকে। যেমন 'হাসিনা'-তে আমি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই ছবিটি খুব শিগগিরই রিলিজ করবে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে  ছবির গান মুক্তি করবেন দক্ষিণী সুপারস্টার নিখিল। এটা একটা 'উইমেন সেন্ট্রিক' ছবি। তারপরে আমার 'মহালিঙ্গপুরম' এর শ্যুটিং কমল্পিট হয়ে গিয়েছে। 'মিরর' বলে একটা ছবির শ্যুটিং চলছে। সেখানেও হিরোইনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এখন তেলেগু যে ছবিতেই কাজ করছি সবগুলোতেই হিরোইন হিসেবেই কাজ করছি।

এশিয়ানেট নিউজ: দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে যে এত পরপর কাজ করছ। সেখানে টিম মেম্বার বা সহ অভিনেতারা কতটা সহযোগী?

প্রিয়াঙ্কা দে: টিম মেম্বার এবং সহ অভিনেতারা প্রচন্ড হেল্পফুল। ওখানে ফিল্মের হিরো-হিরোইন থেকে যারা সাইড রোল করেন তাঁদের ও সমান সম্মান দেওয়া হয়, অভিনেতা অভিনেত্রীদের ভগবানের মতন মানা হয়।

এশিয়ানেট নিউজ: বাংলার এমন কোনও পরিচালক রয়েছেন, যার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে?

প্রিয়াঙ্কা দে: হ্যাঁ অনেকের সঙ্গেই ইচ্ছা রয়েছে, যেমন রাজ চক্রবর্তী, সৃজিত মুখার্জি, অরিন্দম শীল, কৌশিক গাঙ্গুলি-- এনাদের সঙ্গে আমার কাজ করার খুব ইচ্ছা।

এশিয়ানেট নিউজ: তুমি পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিলে। বাংলায় স্নাতোকোত্তর সঙ্গে  বিএড ডিগ্রি। ইচ্ছা করলে অনায়াসে ভালো চাকরি পেতে পারতে, সেখান থেকে সম্পুর্ন আলাদা একটা কেরিয়ারকে বেছে নিলে কেন? 

প্রিয়াঙ্কা দে: যখন শুরু করেছিলাম তখন ভয় তো ছিলই। তবে অঞ্জলি আমাকে এমন একটা জায়গা দিয়েছিল যে জায়গাটা আমাকে প্রচুর ন্যাশনাল অ্যড ফিল্মের অফার এনে দিয়েছিল। তখন থেকে লোকে আমাকে চিনতে শুরু করে। আমি মুম্বইতে মণীশ পলের সঙ্গেও অ্যড করেছি। 'চ্যাম্পিয়ন আটা' ব্রিটানিয়ার অ্যড, নেসলের অ্যড করেছি। মালায়ালাম-এ আমি জুয়েলারি ব্র্যান্ডের এন্ডোর্স করেছি, কেরালার কোচিতে এখনও তুমি রাস্তায় আমার হোর্ডিং দেখতে পাবে। অঞ্জলি আমার কাছে একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। 

এশিয়ানেট নিউজ: সাউথের এত ছবিতে কাজ করেছো, এমন কোনও দক্ষিণী অভিনেতা রয়েছে যার সঙ্গে তুমি কাজ করতে চাও?

প্রিয়াঙ্কা দে: হ্যাঁ, এমন অনেকেই আছে যেমন বিজয় ডেভেরাকোন্ডা আমার অল টাইম ফেবারিট একজন অভিনেতা। এছাড়াও সুপারস্টার পবণ কল্যাণের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। বিজয় সেতুপতির সঙ্গেও কাজ করতে চাই।

এশিয়ানেট নিউজ: নিজেকে মডেলিং দুনিয়ায় উপযোগী করে তোলার জন্য ঠিক কিরকম প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?

প্রিয়াঙ্কা দে: প্রথম দিন যখন কাজ করতে গিয়েছিলাম, আমি তখন জানতাম না শাড়ির শ্যুটের জন্য কেমন করে পোজ দিতে হয়। তখন সেই শ্যুটিং ফ্লোরে নানারকম তির্যক মন্তব্য ভেসে এসেছিল আমাকে নিয়ে। কিন্তু ওইটা আমার জন্য খুব কাজে লেগেছিল। তারপর থেকে আমি নিজেকে ভাঙতে শুরু করি। প্রচুর প্র্যাকটিস করা, ডায়েট করা, ফিগার মেন্টেনের দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে আরম্ভ করি। আমি তখন মডেল ছিলাম তখনও জানতাম না অভিনেত্রী হব। তারপর আমি থিয়েটার করা শুরু করি বেনীদির কাছে । ফোর্থ বেলে কিছুদিন কাজও করি। আমি রিজেকশনকেও পজিটিভ ভাবে নিয়ে নতুন ভাবে চেষ্টা করা শুরু করি।

এশিয়ানেট নিউজ: কোনও রকম গডফাদার ছাড়াই অভিনয় জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছ, সেক্ষেত্রে কি কোনো রকম বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?  

প্রিয়াঙ্কা দে: থিয়েটার তো করেছি, তবে আমার মনে হয় মানুষ কাজ করতে করতে বেশি শেখে। আমি প্রথম জি-বাংলা অরিজিনালস-এ 'যুধিষ্ঠির বলে একটা ছবিতে অভিনয় করি যেখানে আমি থার্ড লিড হয়েছিলাম। সেখানে আমার অভিনয়ের সঙ্গে এখনকার অভিনয়ের তুলনা করলে অনেকটা তফাৎ বোঝা যাবে, এখন আমি আগের তুলনায় অনেকটাই পলিশড। সেগুলো কাজ করতে করতেই শিখেছি।

এশিয়ানেট নিউজ: তোমার কাছে যদি এখন বলিউড থেকে অফার আসে তুমি কি করবে?

প্রিয়াঙ্কা দে: অবশ্যই অফার টা গ্রহণ করব। আমি হিন্দি তামিল, মালায়ালাম, বাংলা সবেতেই কাজ করতে আগ্রহী।

এশিয়ানেট নিউজ: তোমার কোনও ড্রিম রোল আছে যাতে তুমি নিজেকে দেখতে চাও?

প্রিয়াঙ্কা দে:  আমি সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করতে চাই। তবে ড্রিম রোল যদি বলো সেটা হলো ফ্যাশনের কঙ্গনা রানাউত, হাইওয়ে-এর আলিয়া ভাট আমার খুব প্রিয় অভিনেত্রী। আমার আসন্ন ছবি 'হাসিনা' একটি 'উমেন সেন্ট্রিক' ছবি। এই ছবিতে আমার যে চরিত্র সেটিও আমার খুব পছন্দের, সাধারণত মানুষ কেরিয়ারের প্রথম দিকে এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পায় না, কিন্তু আমি পেয়েছি,সেখানে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান বলে মনে করছি। 

এশিয়ানেট নিউজ: শ্যাম সিংহ রায়ের কোনো স্পেশাল স্মৃতি রয়েছে? যেটা তোমার খুব মনে পড়ে?

প্রিয়াঙ্কা দে: আমার একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে, নানী স্যারের সঙ্গে একটা সিন ছিল,আমি চিন্তিত ছিলাম যে ,দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করছি কিন্তু আমি বাঙালি  যদি আমার উচ্চারণ ঠিক না হয়, তারপর নানী স্যারের পরামর্শ মত সেটে আমরা ওই দৃশ্যটি অফ ক্যামেরা প্র্যাকটিস করি। উনি এত সহযোগিতা করেছিলেন যা আমি সব সময় মনে রাখবো।

আরও পড়ুন, নিজেকেই নিজে বিয়ে করলেন কনিষ্কা সোনি, কে তিনি? রইলো তাঁর বিষয় কিছু অজানা কথা

আরও পড়ুন, সিড-কিয়ারার বিয়ে থেকে কেরিয়ার, স্বাস্থ্য সবকিছু নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করলেন পন্ডিত জগন্নাথ,জেনে নিন কি আছে তাঁদের ভাগ্যে
 

Share this article
click me!

Latest Videos

'বালি চুরি, কয়লা চুরিতে যুক্ত পুলিশদের একাংশ' বিস্ফোরক মন্তব্য মমতার | Mamata Banerjee
ভাটপাড়ায় প্রোমোটারের 'দাদাগিরি', আতঙ্কে জমির মালিক, কি বলছে পুরসভা! দেখুন | Bhatpara News
বাগদায় ফের চলল বুলডোজার! হাইকোর্টের নির্দেশে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৬টি দোকান | Bagdah News
বিচ্ছেদের পরও ভয়ঙ্কর আক্রমণ প্রাক্তন জামাইয়ের! আতঙ্কে গোটা পরিবার | Hooghly News Today
Mamata Banerjee : 'মোদী বাংলার কৃষকদের একটা পয়সাও দেয় না' বিতর্কিত মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের