দমবন্ধ লাগলে সেই সম্পর্কে ইতি অবশ্যম্ভাবী। কেউ যদি প্রতি নিয়ত কারওকে চালনা করতে থাকে, তা হলে তাকে আর যাই হোক বলা হোক প্রেম বলা চলে না। কিন্তু বলিউড এর ব্যতিক্রম বললে ভুল বলা হবে না। বলিউড দেখায় এভরিথিং ইস ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার। প্রেমিকার অনুমতি না নিয়েই তাই ইমরান হাশমি তার ঠোঁটে ঝাপিয়ে পড়ে। সেই দৃশ্যই আবার তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে দর্শক। বাস্তবে যা-কে শ্লীলতাহানি বলে হয় তা দেদার চলে বলিউডে। বার বার বোঝানো হয়, মেয়েদের মনে এক মুখে আর এক। যদিও 'পিঙ্ক' এর মতো ব্যতিক্রমী ছবিও রয়েছে। এই মুহূর্তে এমনই একটি ছবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বাজারে। নাম কবীর সিং। তামিল ছবি অর্জুন রেড্ডির হিন্দি ভারশন এই ছবি। অভিনয় করেছেন শাহিদ কাপুর। বরাবরের মতো ভালো অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। এক মুখ দাড়ি নিয়ে এতটা ভালো দেখতে আগে কখনও লাগেনি
শাহিদকে। কিন্তু গলদ রয়েছে গোড়াতেই। অর্থাৎ গল্পে।
এই কবীর সিং পেশায় চিকিৎসক। খুবই সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। কিন্তু তার মাথা গরম হয়ে যায় একটুতেই। নিজের উপরেও দারুণ আত্মবিশ্বাস তার। তাই একবার দেখেই নিজের প্রেমিকাকে রীতিমতো বুক করে নেয়। তার পরে ক্লাস বাঙ্ক করিয়ে প্রেমিকাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। প্রেমিকা কী চায় না চায়, সে সব বালাই না করেই তার চুমু খেয়ে নেয়। আর এমন 'মাচো'পুরুষ দেখে প্রেমিকাও যেন কূপোকাত। তাই সেও ঠোঁটে ঠোঁট রাখে। রাস্তায় বাইক থেকে পড়ে গিয়েও চুম্বনে হারিয়ে যায়। তা দেখে আবার লোকজন হাত তালি দেয়। আর এমন প্রেমিকারই অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেলে মাথায় বাজ পড়ে কবীর সিংএর। এক মুখ দাড়ি নিয়ে সে আরও সুপুরুষ হয়ে ওঠে। মন প্রেমিকায়ে পড়ে থাকলে শরীর তো আর বাধ মানে না। তাই মহিলাদের কাছে অবলীলায় শরীর চেয়ে বসে সে। মহিলারাও তা দেখে লজ্জা পেয়ে রাজি হয়ে যায়। সিনেমার আদ্যপান্ত কবীর সিং গালি দেয়, মদ খায় আর প্রেমিকার নাম আওড়ায়।
এবার প্রশ্ন হল, গল্পকাররা তো যে কোনও ধরনের মানুষ নিয়েই গল্প লিখতে পারে- খুনি, ধর্ষক, মাদকাসক্ত ইত্যাদি। কবীর সিং ছবিতেও তেমনই একজনের চরিত্রকে তুলে ধরা হয়। কিন্তু বলিউডে হিরো মানে বিরাট ব্যাপার। তা-ও শাহিদ কাপুর, যাঁর মহিলা ভক্তের সংখ্যা হাতে গুনে শেষ করা যায় না। তাই সেই হিরো অচেনা মহিলাকে যৌনতার প্রস্তাব দিক, বা প্রেমিকাকে অপমান করুক, মদ খেয়ে ঝামেলা করুক সবেতেই দর্শক হাত তালি বা সিটিতেই ভরিয়ে দেন তাই। অত সুপুরুষ গুণী ডাক্তার কবীর সিং কি খারাপ কিছু করতে পারে! তাই এই ছবি দেখে সেই দর্শকরা হেব্বি প্রভাবিত। কিন্তু তাঁরা জানেন না, তাঁরা যদি এমন ভাবে কোনও মহিলাকে যৌনতার প্রস্তাব দিতে যান, তাঁদের ঠাঁই হবে শ্রীঘরে।
এ তো গেল কবীর সিং-এর কথা। কিন্তু বলিউডে এমন কিছু চরিত্রকে হিরো হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা মোটেই হিরো হওয়ার যোগ্য নয়। বেশ সূক্ষ ভাবে নাকের ডগা দিয়ে মানুষের মনে আদতে একটি নেগেটিভ চরিত্র হিরো হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দেখে নেওয়া যাক এমনই কয়েকটি চরিত্র-
১) সঞ্জু- সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক বেশ সাড়া ফেলেছিল। স্ত্রীর সামনে ৩৫০ মহিলার সঙ্গে যৌন হওয়ার কথাও অবলীলায় বলেছে সে। হাততালি পেয়েছে। ট্রেন্ড হয়েতে সঞ্জুর 'ঘপাঘপ'। লিবিডোয় নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে নিজের পরম প্রিয় বন্ধুর সঙ্গেও যৌনতা করেছে। প্রেমিকার বাবার অসুস্থতায় হাসপাতালে গিয়েও হাসি মশকরা করেছে। আর দর্শক তাতে খুব মজা পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদিও সঞ্জুকে একেবারে নিরীহ নিপাট ভদ্রলোক করে দেখানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন পরিচালক।
২) জব হ্যারি মেট সেজল- ছবিতে নায়ক নায়িকাকে বার বার কিউট সুইট ইত্যাদি বলে সম্বোধন করে। তা মোটেই পছন্দ নয় নায়িকার। শেষ পর্যন্ত নায়ককে মুগ্ধ করতে হট হয়ে সিডিউস করে সে। থখন আবার নায়ক পোল ডান্সারদের দেখিয়ে বলে তুমি এদের মতো গন্দি লড়কি নও। তুমি ভালো মেয়ে। অতএব রোজগারের জন্য যারা পোল ডান্স করে তারা আসলে খারাপ। আর শাহরুখের মতো নায়কের মুখে এমন কথা মানে যে তা প্রোপাগান্ডার থেকে কম কিছু নয় তা বলাই বাহুল্য।
৩) ককটেল- ভেরোনিকা রোজ পার্টি যায়। লিঙ্গ নির্বিশেষে বন্ধুত্ব করে, মদ্যপ হয় আর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে লিভ ইন করে। একদিন নিজের বাসায় নিয়ে আসে বন্ধুকে। সেই বন্ধু খুব 'সংস্কারি'। নিয়ম মতো পুজো করে, ঘর গুছিয়ে রাখে,মদ্যপ হওয়ার প্রশ্নই নেই, শরীর ঢাকা পোশাক পরে, পার্টিতে গিয়ে নাচে না। ব্যাস ভেরোনিকা সিন থেকে আউট। এমন মেয়েকেই মনে ধরে যায় বয়ফ্রেন্ডের, যে 'অন্য' মেয়েদের মতো নয়।