প্রতি বছর অপরাজিতা আঢ্যর লক্ষ্মী প্রতিমা সাজ বদলান। ঘাঘরা অথবা শাড়ি, নতুন গয়না, সোনার গয়নায় ঝলমলিয়ে ওঠেন। গত দু’বছর বাড়িতে তেমন ভাবে পুজো হয়নি। ২০২২-এর পুজোয় কি ফের ধুমধাম? এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় অকপট ছোট পর্দার ‘লক্ষ্মী কাকিমা’...
প্রতি বছর অপরাজিতা আঢ্যর লক্ষ্মী প্রতিমা সাজ বদলান। ঘাঘরা অথবা শাড়ি, নতুন গয়না, সোনার গয়নায় ঝলমলিয়ে ওঠেন। গত দু’বছর বাড়িতে তেমন ভাবে পুজো হয়নি। ২০২২-এর পুজোয় কি ফের ধুমধাম? এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় অকপট ছোট পর্দার ‘লক্ষ্মী কাকিমা’...
কোনও দিন সংবাদমাধ্যমকে নিজে থেকে কিচ্ছু জানাইনি। ইন্ডাস্ট্রির কাউকে নিমন্ত্রণও করিনি। তার পরেও আমার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল! একেই বলে দেবীর মাহাত্ম্য। সবাই জানেন, আমার বাড়িতে পুজো হবে। সবাই নিজেই থেকেই চলে আসেন। আনন্দ করেন। দেবীর ভোগ-প্রসাদ খেয়ে তৃপ্ত হয়ে চলে যান। শুধু কি তাই? সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরাও আগের দিন থেকে ফোনে পুজোর ব্যাপারে খবর নিতে থাকেন!
গত দুবছর অবশ্য এই আনন্দে ভাটা। ২০২০-তে আমাদের করোনা। ২০২১-এ শ্বশুরমশাই চলে গেলেন। পুজো সে ভাবে হয়ইনি। আশা, ২০২২-এ ফের পুরনো আমেজ ফিরে আসবে। বাড়িতে তাই তোড়জোড়ও শুরু। দুর্গা আর লক্ষ্মীপুজো যেন পিঠোপিঠি। এক পর্ব মিটতে না মিটতেই দ্বিতীয় পর্বে চলে আসে। আমরাও দম ফেলার সুযোগটুকু পাই না। আর করোনা যথেষ্ট কাবু করে দিয়েছে। আগের মতো লাফালাফি, দৌড়-ঝাঁপ করতে পারছি কই? তবু তার মধ্যেই কিন্তু নাড়ু পাকানো হচ্ছে। শাশুড়ি মায়ের তত্ত্বাবধানে। আগে আমিও হাত লাগাতাম। নারকেল কুড়ে দিতাম। এ বছর পারছি না। শ্যুটিংও তো পাশাপাশে চলছে।
আরও একটা স্বীকার করতেই হবে। শাশুড়ি মা এখনও যা খাটতে পারেন আমি বা আমার জা তার অর্ধেকও পারি না! হাঁফিয়ে যাই। তাই এ বছর আমরা ঠিক করেছি, পুজোর দিন নানা রকমের সরবৎ খেয়ে থাকব। আগে নির্জলা উপোস করতাম। ভোগ অবশ্য প্রতি বছরের মতো শাশুড়ি মা-ই রাঁধবেন। খিচুড়ি, লাবড়া, ফুলকপির তরকারি, পাঁচ রকম ভাজা, চাটনি, পায়েস হবে। দেবী মায়ের ভোগ রান্না হয়ে গেলেই বাকিটা হালুইকরের দায়িত্ব। আবার ভিয়েন বসবে এ বছরে। এ ছাড়া, রকমারি ফল, মিষ্টি নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হবে।
এ বছর আরও একটি কারণে মনটা শান্ত। বংশ পরম্পরায় আমাদের পরিবারের কুল-পুরোহিত জয়দেবদা ফের পুজোয় বসবেন। পরপর দু’বছর তিনি পুজো করতে পারেননি। জয়দেবদা পুজো না করলে আমাদেরও তৃপ্তি হয় না। এত আনন্দের মধ্যেও অল্প বিষাদ, আমার মায়ের দু’বছর আগে পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছিল। তার পর থেকেই শয্যাশায়ী। আগে লক্ষ্মীপুজোয় মা-ও তাঁর মতো করে বাড়িতে পুজো করতেন। তাই মেয়ের পুজো দেখতে পেতেন না। আমার ছেলেবেলার বন্ধুরা সেই ফাঁক ভরে দেয়।
সবাই প্রায় জানেন, আমার দেবী মা প্রতি বছর নতুন ভাবে সেজে ওঠেন। কোনও বার ঘাঘরা তো কোনও বার শাড়ি। এ বছর মায়ের জন্য চান্দেরি সিল্ক আনিয়েছি। মা যদিও বেশ মেজাজি! প্রতি বছর আমি ভাবি এক। মা সেজে ওঠেন তাঁর মতো করে! একে অলৌকিক ঘটনাও বলতে পারেন। তাই শাড়ির পাশাপাশি ঘাঘরাও তৈরি রেখেছি। বাকিটা মায়ের ইচ্ছে। সঙ্গে মানানসই নতুন মুকুট, লম্বা হার, কোমরবন্ধও কেনা হয়েছে। আর আছে সোনার গয়না। আগামি কাল নিজের হাতে মাকে নামিয়ে আনব। সাজিয়ে গুছিয়ে ফের আসনে বসানোর পর আর তাঁকে ছুঁই না। ফের মায়ের সঙ্গে আমার মোলাকাত পরের বছরে।
এ বার কৌতূহল, ‘লক্ষ্মী কাকিমা’ তা হলে কেমন সাজবে? যেমন প্রতি বছর সাজি। সকাল থেকে হয়ত লাল পাড় সাদা শাড়িতে সবাই দেখবেন আমায়। সব কাজ শেষে বিকেলে স্নান করে পরিচ্ছন্ন হব। পাটভাঙা নতুন শাড়ি থাকবেই। এ দিন আমিও বেছে নিই সোনার গয়না। মা-মেয়ের সাজমিলন্তি ছাড়া উৎসব জমে?