বেজায় রসিক কিশোর কুমার, পরিচিতির বাইরে তাঁর কাণ্ড-কারখানা জব্দ করেছে অনেককেই
১৯৮৫ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন- 'গোটা পৃথিবী পাগল আমি নই'। তাঁর গান, তাল, লয়, ছন্দে বাঁধা জীবন চরাচরের অভিব্যক্তি তাঁকে করে তুলেছিল সকলের চেয়ে ভিন্ন এক মেলোডি আইক্যুন-কিশোর কুমার।
কিশোর কুমারের গানের ভঙ্গী ছিল চমকদার ও প্রাণবন্ত। শুধু নিজেই উপভোগ করতেন না, রেকর্ডিং-এ উপস্থিত সকলের মনে এক এলাদা রসের সঞ্চার করাটাই ছিল তাঁর স্বভাবের এক বিশেষ দিক।
যখন কৈশোরের কিশোরের কণ্ঠস্বর ছিল তাঁর জীবনের বড় বিস্ময়। গলার স্বর কর্কশ। এদিকে স্বপ্ন দেখা, গায়ক হওয়ার, নিজের স্বপ্নের আইডল কে.এল.সইগলের সঙ্গে দেখা করার।
হঠাৎই একদিন খেলার সময় পা কেটে গেলে কিশোর তৈরি করেছিলেন এক হুলুস্থুল পরিবেশ। তারস্বরে কান্নায় বাড়ি উঠল মাথায়। মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রায় দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় থামল তাঁর কান্না।
অথচ হতবাক হলেন সকলেই। সেই কর্কশ স্বর যেন পলকে উধাও। পরিবর্তে গলার স্বর পরিণত হয়েছে এক মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে। সেই থেকেই শুরু পথ চলা।
কিশোর মানেই এনার্জিটিক লাইভ শো, অথচ প্রথম জীবনে সাধারণত কোনও মিউজিক্যাল শো হলে কিশোর গান গাইতে ভয় পেতেন, পালিয়ে যেতেন দিনের দিন।
একবার মুম্বইয়ে সকলের নেপথ্যে কণ্ঠ শিল্পীদের দিয়ে গান গাইয়ে ফান্ড কালেক্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হল। যথারীতি কিশোর কুমার নিজের বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে লাপাতা। পরে অনেক কষ্টে কল্যানজী-আনন্দিজীর প্রচেষ্টায় সেই ভীতি কাটে কিশোর কুমারের।
কিশোর কুমার কোনও কথাই শুনতেন না। তাই এক পরিচালক একবার পৌঁছে গিয়েছিলেন কোর্টে। সেখান থেকে নির্দেশ জারি করে এনেছিলেন, স্পটে যেন কিশোর কুমার পরিচালকের কথা মেনেই চলেন।
কিশোর কুমার একটি দৃশ্যে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, পরিচালক ভুলে গেলেন কাট বলতে। তাই কিশোর কুমারও থামলেন না। গাড়ি চালিয়ে সেট ছেড়েই বেড়িয়ে গেলেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন পরিচালক কাট বলেননি তাই তিনি বাড়ি চলেগিয়েছেন।
গোটা ইন্ডাস্ট্রি জানত, কিশোর কুমার টাকার বিনিময়ে কাজ করাটাই বেশি পছন্দ করতেন। কেউ টাকার বিষয় খামখেয়ালি হলেই তিনি সেদিক থেকে সরে আসতেন। একবার সিনেমার প্রস্তাব পেয়ে কিশোর কুমার উপস্থিত হন শ্যুটিং স্পটে।
অর্ধেক টাকা দিয়ে পরিচালক কাজ শুরু করতে চান তড়িঘড়ি। অথচ শ্যুটিং শুরু হলে কিশোর কুমারকে দেখে পরিচালকের চক্ষুচড়ক গাছ। কিশোর কুমারের মুখে রয়েছে অর্ধেক মেকআপ। প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে আধা পয়সা-আধা মেকআপ।