নামমাত্র দামে পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, করোনা-যুদ্ধে একের পর এক অস্ত্রে জাত চেনাচ্ছে আইআইটি
যত দিন যাচ্ছে ততই করোনাভাইরাস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজেদের জাত চিনিয়ে দিচ্ছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা আইআইটিগুলি। শুক্রবার আইআইটি-রুরকি'র একদল গবেষক জানিয়েছেন তাঁরা নামমাত্র দামে একটি ভেন্টিলেটর যন্ত্র তৈরি করেছেন। বলাই বাহুল্য করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে এই অসম লড়াইয়ে এই যন্ত্র ভারতের হাত আরও মজবুত করল। তবে এই একটি ক্ষেত্রেই নয়, একেবারে প্রথম থেকেই দেশেরে এই বিপর্যয়ে আইআইটিগুলি থেকে একের পর এক সাহায্য আসছে।
amartya lahiri | Published : Apr 3, 2020 5:32 PM IST / Updated: Apr 04 2020, 03:00 PM IST
ভেন্টিলেটর - ভারতে এই মুহূর্তে ভেন্টিলেটর যন্ত্র, যা শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের জন্য অতি আবশ্য়ক, তার সংখ্যা মেরেকেটে ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০টি। অথচ, কোভিড-১৯'এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যারা রয়েছেন, তাঁরা বলছেন, খুব তাড়াতাড়ি অন্তত ৭ থেকে ১০ লক্ষ ভেন্টিলেটর প্রয়োজন। চিন থেকে ১০০০০টি ভেন্টিলেটর যন্ত্র কেনার কথা হয়েছে কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এই অবস্থায় আইআইটি রুরকি-র এই যন্ত্র দারুণ কাজে আসবে। আর এর দাম পড়বে মাত্র ৩০,০০০ টাকা, অর্থাৎ প্রচলিত ভেন্টিলেটর যন্ত্রের প্রায় পাঁচগুণ কম। প্রস্তাবিত মডেলটি বাচ্চা-বয়স্ক নির্বিশেষে সকলেই ব্যবহার করতে পারবেন, এবং এটি পোর্টেবল অর্থাৎ বহনযোগ্য হওয়ায় সুবিধা আরও বেশি। ভেন্টিলেটর তৈরির কাজ চলছে আইআইটি দিল্লি, ও কানপুরেও।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার - করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরেকটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অস্ত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজার। দারুণ চাহিদার সময় দিল্লি আইআইটির রসায়ন বিভাগ প্রথম অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে। পরে আইআইটি খড়গপুরের দুটি গবেষণা দল-ও একই কাজ করে ভারতের হাত মজবুত করেছে। এই হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলি হাসপাতালে যুদ্ধরত চিকিৎসাকর্মীদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আইআইটি রুরকি আবার ভেষজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছে।
টেস্টিং কিট - করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যত বেশি সম্ভব মানুষের পরীক্ষা করা প্রয়োজন। আর তার জন্য চাই টেস্টিং কিট। ভারতে এই কিটের দারুণ অভাব। আইআইটি দিল্লি ইতিমধ্যেই বাজারে চলতি টেস্টিং কিট-এর থেকে অনেক সস্তা টেস্টিং কিট বানিয়েছে। তা গবেষণাগারের পরীক্ষায় পাস করেছে। এখন পুনেতে তার ক্লিনিকাল টেস্ট চলছে।
প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম - ভারতে চিকিৎসাকর্মীদের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম-এর ব্যাপক অভাব। এই অভাব পুরণেও এগিয়ে এসেছে আইআইটিগুলি। দিল্লি আইআইটি সংক্রমণ-রোধী কাপড় তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
ফেস শিল্ড - আইআইটি রুরকির একটি প্রযুক্তিবিদ্যার তিনজন অধ্যাপক ও কর্মচারীরা মিলে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য একটি স্বল্পমূল্যের থ্রিডি মুদ্রিত ফেস শিল্ড বা মুখ বর্ম তৈরি করেছে। থ্রিডি মুদ্রন প্রয়ুক্তিতে তৈরি এই ফেস শিল্ড-এর ফ্রেমের সামনে একটি স্বচ্ছ পরত দেওয়া থাকে, যা মুখকে রক্ষা করে। আবার তা প্রতিস্থাপন-ও করা যায়। সব মিলিয়ে এটি তৈরিতে খরচ পড়েছে মাত্র ৪৫ টাকা। বিপুল সংখ্যায় তৈরি করলে দাম পড়বে ২৫ টাকা মতো।
করোন্টিন অ্যাপ - ভারতে বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অনেকেই কোয়ারেন্টাইন থেকে পালাচ্ছেন। আর তাদের সংস্পর্শে এসে অন্যান্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এর সমাধানে আইআইটি-বম্বের গবেষকরা 'করোন্টিন' নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছেন। করোনা সন্দেহভাজন একবার নিবন্ধিত হয়ে গেলে অ্যাপটি তাদের ফোনের মারফত তাদের সন্ধান করতে পারে।
রোবট ইউনিট - আইআইটি রুরকি-তে বর্তমানে বিচ্ছিন্নতা ওয়ার্ডে ওষুধ ও খাদ্য বহনের রোবট তৈরির কাজ চলছে। সেইসঙ্গে রোবট ভিত্তিক স্ক্রিনিং ইউনিট-ও তৈরি করা হচ্ছে।
স্যানিটাইজার ড্রোন - আইআইটি রুরকি-র একদল শিক্ষার্থী সুরক্ষিতভাবে কোভিড-১৯'এর বিস্তার রোধ করতে পার্ক, রাস্তা ও ফুটপাথের মতো বড় বড় এলাকাগুলি স্যানিটাইজের জন্য স্বয়ংক্রিয় স্প্রেয়ার-সহ একটি ড্রোন তৈরি করেছে। এই ছাত্ররা 'রেসারফ্লাই' নামে একটি স্টার্টআপ সংস্থা চালায়। এই স্প্রেয়ার সিস্টেমটি ১৫ মিনিটেরও কম সময়ে কোনও বড় পার্ক স্যানিটাইজ করার কাজ করতে পারে।