চুনী গোস্বামীর প্রয়াণ ভারতীয় ফুটবলে এক যুগের অবসান,তাঁর বর্ণময় জীবনের কিছু মুহূর্ত আপনাদের জন্য
প্রয়াত হলেন কিংবদন্তী ফুটবলার চুনী গোস্বামী। ৮২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল প্রবাদ প্রতীম ফুটবলারের। চুনী গোস্বামীর প্রয়াণ ভারতীয় ফুটবলের অপরিকল্পনীয় ক্ষতি। কিংবদন্তী ফুটবলারের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ক্রীড়াজগৎ। এক ঝলকে তাঁর বর্ণময় জীবন।
১৯৩৮ সালের ৩০ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের কিশোরগঞ্জ বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত, সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন সুবিমল গোস্বামী ওরফে চুনী গোস্বামী। ছোট বেলা থেকেই ফুটবলরে প্রতি ভালবাসা ছিল অপরীসিম। ফুটবলকেই কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন চুনী।
১৯৪৬ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে মোহনবাগান জুনিয়র দলে যোগ দেন চুনী গোস্বামী। ১৯৫৪ সালৈ সুযোগ পান মোহনবাগান দলে। ১৯৬৮ সাল অর্থাৎ কেরিয়ারের পর্যন্ত মোহনবাগানের হয়েই প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। মাঝে ১৯৬০ থেকে ৬৪ সাল পর্যন্ত মোহনবাগানের অধিনায়ক ছিলেন চুনী গোস্বামী।
আজীবন মোহনবাগান ক্লাবেই খেলেছেন চুনী গোস্বামী। অনেক ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েও মোহনবাগানের প্রতি ভালবাসার কারণে অন্য কোথাও যাননি। এমনকি ইংল্যান্ডের ক্লাব টটেনহ্যামের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন কিংবদন্তী ফুটবলার।
১৯৫৬ সালে ভারতীয় ফুটবল দলে অভিষেক হয় চুনী গোস্বামীর। দেশের হয়ে ৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন কিংবদন্তী ফুটবলার। ১৯৬২ সালে চুনী গোস্বামীর অধিনায়কত্বেই এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছিল ভারতীয় ফুটবল দল। দেশের হয়ে ৪৩ ম্যাচে ১১টি গোল করেছেন চুনী গোস্বামী।
ফুটবলারের পাশাপাশি ক্রিকেট প্রতিভাও কম ছিল না চুনী গোস্বামীর। বাংলা ক্রিকেট দলের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেছেন চুনী। বাংলা দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৬টি ম্যাচে ১৫৯২ রান করেছিলেন চুনী গোস্বামী। বল হাতে উইকেট নিয়েছিলেন ৪৭টি।
প্লেয়ার জীবনে একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন চুনী গোস্বামী। ১৯৬২ সালে এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকারের পুরষ্কার পান তিনি। এশিয়ান গেমসে দলকে সোনা জেতানো ও অসাধারণ পারফরমেন্সের জন্য ১৯৬৩ সালে অর্জু পুরষ্কার পান এই কিংবদন্তী ফুটবলার।
খেলোয়ার পরবর্তী জীবনে ১৯৮৩ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হন চুনী গোস্বামী। ২০০৫ সালে পান মোহনবাগান রত্ন সম্মান। মোহনবাগান রত্ন পেয়ে আবেগঘন হয়ে পড়ছিলেন প্রবাদ প্রতীম ফুটবলার।
ভারতীয় ফুটবলের ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর বলা হত পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী ও তুলসীদাস বলরামকে। তাদের পায়ের যাদুতে মুগ্ধ ছিল আসমুদ্র হিমাচল। সেই সময়কে ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগ বলেও আখ্যা দিয়েছেন অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ।
কয়েক বছর আগেই কলকাতায় এসেছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। সেই সময় পেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন চুনী গোস্বামী। দুজনের মধ্যে বেশ কিছু সময় কথাও হয়। সেই সময়ই এক ফ্রেমে ধরা হয় দুই কিংবদন্তীকে।
ফুটবল কেরিয়ার শেষে দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন চুনী গোস্বামী। সঙ্গেও সুগার, প্রস্টেট ও নার্ভের সমস্যা ছিল৷ ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল তাঁর জন্মদিনের দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন চুনী গোস্বামী। চুনী গোস্বামীর প্রয়াণ ভারতীয় ফুটবলে এক যুগের অবসান।