হিন্দু-মুসলমান ঐক্যে ভারত কতটা সহনশীল এই দশ ঘটনাই তার প্রমাণ
কাজি নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন 'হিন্দু না মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন'। তাঁর এই কথার সূত্র ধরেই বলা যায় দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় একসঙ্গে মিলে মিশে গা ঘেষাঘেষি করে রয়েছে। মাঝে মধ্যে সাম্প্রদায়িক এই সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা নেহাতই হাতে গোনা কয়েকটি ঘটনা। ওই সামান্য কিছু ঘটনা বাদ দিলে একসঙ্গে দেওয়ালি থেকে ইদ উদযাপন করে থাকে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ই। ইদানিংকালের কিছু ঘটনায় অনেকেরই মনে এই সম্প্রীতির বিশ্বাসটা ভেঙে গিয়েছে। এখানে কিছু এমন ঘটনার কথা বলা হল, যা ভারতবাসীর মনে সেই মিলেমিশে থাকার বিশ্বাসটা আবার ফিরিয়ে আনবে।
amartya lahiri | Published : Nov 11, 2019 11:11 AM IST / Updated: Nov 11 2019, 04:43 PM IST
বাংলায় মুসলিমদের সহায়তায় কালী মন্দির নির্মাণ - বছর দুয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নানুরে রাস্তা চওড়া করার জন্য ভাঙতে হয়েছিল একটি কালী মন্দির। পরে সেই কালী মন্দিরটির পুনর্নির্মাণে হিন্দু ভাইদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন মুসলিম ভাইরাও। ১০ লক্ষ টাকার তহবিলের মধ্যে ৭ লক্ষই জোগার করেছিলেন মুসলিমরা। এই বছর কালীপুজোর দিন স্থানীয় এক মৌলবী উদ্বোধন করেন সেই কালী মন্দিরের।
উত্তরপ্রদেশের মন্দির-মসজিদে একসঙ্গে রামলীলা ও নমাজ - এটা গত ৩৫০ বছরের ইতিহাস। উত্তরপ্রদেশে একেবারে পাশাপাশি রয়েছে তাট ভৈরব মন্দির ও লাট মসজিদ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখি সঙ্গে নমাজ ও রামলীলা পাঠের শব্দ শোনা যায় এই এলাকায়।
দুর্গাষ্টমীতে মুসলিম মেয়ের কুমারী পুজা - এই বছরই দূর্গাপুজোতে কলকাতার দত্তবাড়িতে কুমারী হিসেবে পূজো করা হয়েছে এক ৪ বছরের মুসলমান মেয়েকে। আগ্রার এক মুদিখানার দোকানদার মহম্মদ তাহির ও বুশরা বিবির মেয়ে ফতিমাকে কুমারী রূপ দেওয়া হয়েছিল।
মুসলমানের হাতে তৈরি হয় দশেরার পুতুল - উত্তরপ্রদেশের মথুরার জাফর আলি দশেরার জন্য রাবণের পুতুল তৈরি করেন। তিনি জানিয়েছেন তিন প্রজন্ম ধরে তাঁর পরিবার এই কাজ করে আসছে।
অসমের এই মন্দিরে দেখভাল করেন এক মুসলমান পরিবার - গত ৫০০ বছর ধরে অসমের বুরহা গোসাইয়ের থান-এর দেখাভাল করে মতিবর রহমানের পরিবার। ৭৩ বছর বয়সী মতিবর এখনও রোজ সকালে থানটি ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে শিবের মূর্তির সামনে একটি মোম জ্বালিয়ে দেন। মতিবর জানিয়েছেন তাঁর বাপ-ঠাকুর্দাকেও তিনি এই কাজ করতে দেখেছেন।
ব্রাক্ষণ কাকার শেষকৃত্য মুসলিম ভাইদের হাতে - দিনমজুরের কাজ করেন আবু, নাসির ও জুবের কুরেশি। এমনিতে প্রতিদিন নিয়ম করে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়েন। রমজান মাসে রোজা রাখেন। কিন্তু আব্বার চার দশকের বন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁরা একদিনের জন্য হিন্দু আচারধর্ম পালন করেছেন। একেবারে হিন্দু মতে মুখাগ্নি-সহ অন্য়ান্য আচার পালন করে তাঁদের হিন্দু ব্রাহ্মণ কাকার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
গৌরী-ব্রতে হিন্দু মেয়েদের হাতে হেনা পরান মুসলিমরা - গুজরাতের সুরাতে প্রতিবছর গৌরী-ব্রতের দিন হিন্দু মেয়েদের হাতে হেনা লাগিয়ে দেন মুসলিম মেয়েরা। সারা বছরই এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকে দুই সম্প্রদায়ের মেয়েরাই।
২০০ বছর ধরে মসজিদের দেখভাল করে হিন্দুরাই - বিহারের নালন্দা জেলার মাধি গ্রামে এখন একজনও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নেই। ২০০ বছরের প্রাচীন মসজিদের দেখভাল তাই করেন গ্রামের হিন্দুরাই। এমনকী প্রতিদিন আজান পাঠও হয়। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে বা কোনও বিপদে মসজিদে এসে প্রার্থনাও করেন হিন্দুরা।
হিন্দু বন্ধুর শেষ যাত্রায় মুসলমানের মুখে রাম নাম - মুম্বই-এ কাজ করতে গিয়ে রাজস্থানের বাসিন্দা সুরেন্দ্র আগরওয়ালের শহ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল আসানসোলের শাহিদ খানের। গত বছর ক্যালসারে আক্রান্ত হন সুরেন্দ্র। চলতি বছরের শুরু থেকেই তাঁকে নিজের বাড়ি এনে চিকিৎসা করান শাহিদ। কিন্তু গত অগাস্ট মাসে সুরেন্দ্র মারা যান। বন্দুর শেষযাত্রায় শাহিদের মুখে ছিল 'রাম নাম সত্য হ্যায়'।
রঙ্গোলি দেয় মুসলিম মেয়েরা - গুজরাতের আহমেদাবাদে দীপাবলির সময় রঙ্গোলি দিতে দেখা গিয়েছে মুসলিম মেয়েদের। তবে এই দৃশ্য শুধু গুজরাত নয় ভারতের অনেক রাজ্যেই দেখা যায়।