নিজের রাজ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ল ভিলওয়ারা মডেল, সংক্রমণ আটকানোর নতুন পথ খুঁজছে গোলাপি শহর
সারা বিশ্ব এখন কাবু মারণ করোনাভাইরাসের ভয়ে । এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস প্রায় স্তব্ধ করে দিয়েছ গোটা পৃথিবীকে। এ দেশেও সংক্রমণ সাড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে । করোনায় মৃত ছুঁয়ে ফেলেছ সাড়ে তিনশোর গণ্ডি। পরিস্থিতি সামন দিতে দেশে আবার নতুন করে লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সারা দেশ যখন মারণ এই ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে রাজস্থানের ছোট্ট একটি জেলা শহর ভিলওয়ারা কামাল করে দেখিয়েছিল। সেই ভিলওয়ারা মডেল প্রয়োগ করেই এবার রাজ্যের রাজধানী জয়পুরে করোনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছিল রাজস্থান সরকার। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না গোলাপি শহরে।
Asianet News Bangla | Published : Apr 14, 2020 11:57 AM IST / Updated: Apr 14 2020, 05:35 PM IST
রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে আড়াই শ কিলোমিটার দূরের জেলা শহর ভিলওয়ারা—এটি ভারতের অন্যতম প্রধান টেক্সটাইল হাব হিসেবেও পরিচিত। ভারতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে এই শহরটিই ছিল দেশের প্রধান হটস্পট।
গত ১৯ মার্চ ভিলওয়ারাতে প্রথম সংক্রমণের মাত্র চার দিনের ভেতর সেখানে ১৩ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন, আর ৩০ মার্চের মধ্যেই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা হয় ২৬। কিন্তু এর পরই দেখা যায় একটা নাটকীয় পটপরিবর্তন, পরবর্তী ১০ দিনে পুরো জেলায় আর মাত্র ১ রোগী করোনা শনাক্ত হন, আর এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন ১৭ জন।
রাজস্থানের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, ‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে ভিলওয়ারাতে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করি, যে কন্টেইনমেন্ট প্রয়োগ করা হবে কঠোরভাবে ও কোনো ছাড় না দিয়ে, আর তাতে আমরা সফল হই।’
সরকারি রোডওয়েজের বাস, বেসরকারি যানবাহন বা ভ্যানের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যতগুলো পজিটিভ কেস এসেছিল, তার প্রতিটার ক্লাস্টার ম্যাপিং তৈরি করা হয়—পুরো জেলায় হাজার হাজার লোককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
যে ভিলওয়ারা ‘ভারতের ইতালি’ হয়ে উঠতে পারে বলে মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগেও মিডিয়া পূর্বাভাস করছিল, রাজস্থানের ওই জেলাটি সে আশঙ্কাকে আপাতত ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবাও এখন রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন বিভিন্ন হটস্পটে কিভাবে ভিলওয়ারা মডেল প্রয়োগ করা যায়। যদিও ভিলওয়ারার মতো একটি শিল্পাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকা মেশানো জেলায় যে মডেল সফল হয়েছে, মুম্বাইয়ের ধারাভির মতো ঘিঞ্জি বস্তিতে তা আদৌও কাজে লাগানো যাবে কি না, তা নিয়ে বেশ সংশয় ছিল।
সেই সংশয় এবার সত্যি প্রমাণিত হল। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরেই কাজে এল না ভিলওয়ারা মডেল। ভিলওয়ালা মডেল প্রয়োগ করেও গত কয়েকদিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে পিঙ্ক সিটিতে। গত ৯ এপ্রিল যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৮। বর্তমানে সেখানে সংক্রমণের শিকার ৩৭০।
রাজস্থানে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ৮৯৭। তার মধ্যে রাজধানী জয়পুরেই রয়েছেন আক্রান্তদের ৪২ শতাংশ। প্রতিদিনিই জয়পুরের নানা প্রান্ত থেকে আসছে সংক্রমণের খবর।
জয়পুরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রামগঞ্জ এলাকার। গত ২৬ মার্চ এখানে প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে রামগঞ্জ এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৮৫।
নমুনা সংগ্রহ ও কারফিউ জারি করেও আটকানো যাচ্ছে না সংক্রমণ। গত ৫দিনে এলাকায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিড ১৯ রোগে। ঘিঞ্জি রাগমঞ্জ এলাকায় ভিলওয়ালা মডেলের সাফল্য লাভ বেশ কঠিন বলেই স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মা।