আম জনতার জন্য অবশেষে বাজারে এল 'স্পুটনিক ভি', পুতিনের মতোই ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে গামালিয়া সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। 

এবার সাধারণের প্রয়োগের জন্য স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র দিল রাশিয়া। এই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ জনসাধারণের প্রয়োগের জন্য খুলে দেওয়া হল। এমনটাই জানিয়েছে সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী এটিই পৃথিবীর প্রথম কার্যকরী করোনা ভ্যাকসিন। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-সহ বিশ্বের একাধিক দেশ এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। এমনকী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যাকসিনে এখনও ছাড়পত্র পর্যন্ত দেয়নি। আমেরিকা-সহ একাধিক দেশের অভিযোগ, কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই টিকা তৈরির ইঁদুরদৌড়ে নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করতে চাইছে রাশিয়া।

 তবে সেসব বিরোধিতায় পাত্তা না দিয়ে নিজেদের মতো ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করেছিল রাশিয়া। সোমবারই ভ্যাকসিনটির প্রথম ব্যাজ সাধারণ নাগরিকদের জন্য বাজারে আনা হয়েছে।

এক বিবৃতির স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নির্মিত 'গ্যাম-কোভিড-ভ্যাক' স্পুটনিক ভি সবধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাফল্যের সঙ্গে উতরেছে। মস্কোর মেয়র সার্গেই সোবিয়ানিন আশাপ্রকাশ করেন, আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই বেশিরভাগ শহরবাসীর করোনা-টিকাগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে। রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আশা, শীঘ্রই, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ পৌঁছে যাবে।

রাশিয়া আগেই দাবি করেছিল, গুণগত মান পরীক্ষার পরই এই টিকা সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে আনা হবে। গত শুক্রবারই সায়েন্স জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ টিকাটির প্রাথমিক ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে। যাতে দাবি করা হয়েছে, করোনা টিকার প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রায়ালে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সফল ‘স্পুটনিক ভি’। 

ল্যানসেটের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার দিন চারেকের মধ্যেই স্পুটনিকের প্রথম ব্যাজ সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে আনল রাশিয়া। সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, গামালিয়া সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাজ গুণগত মান সংক্রান্ত সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং তা সাধারণ মানুষের জন্য খোলা বাজারে আনা হয়েছে। 

লেনসেট মেডিক্যাল জার্নালে বলা হয়েছে চলচি বছর জুন ও জুলাই মাসে ক্লিনিক্যাল ট্রায়লে ৭৬ জন অংশগ্রহণকারীকে দুবার পরীক্ষা করা হয়েছে। আর সেই পরীক্ষার ফল অনুযায়ী দেখা গেছে ৭৬ জনের দেহেই করোনা প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। 
.

স্পুটনিক ভি-এর উৎপাদন শুরু হয়ে গেলেও এর তৃতীয় তথা চূড়ান্ত পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল এখনও শেষ হয়নি। তাই এর বন্টন আপাতত শুধু রাশিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। 

গত ১১ অগাস্ট, বিশ্বের প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নথিভুক্ত করে রাশিয়া। চলতি মাসেই ভারতে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে।

 জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরে  ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ফিলিপিন্স এবং ব্রাজিলে ‘স্পুটনিক ভি’-এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হবে। এই বছর অক্টোবর কিংবা নভেম্বরেই জানা যাবে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফল।

এদিকে ইকিমধ্যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে করোনা ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ভি’ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি বেশ ভালোই রয়েছেন এবং কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করছেন না।

এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মেয়েকে টিকা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়েছে বলে খবর। এছাড়াও রুশ বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মান্টুরোভকেও টিকা দেওয়া হয়েছে।