প্রেমপত্র মানেই, খুব গোপন একটি বস্তু। সেখানে প্রেমিক যুগল একে অপরের মনের ভাব প্রকাশ করেন। কিন্তু, এমন সব প্রেমপত্র রয়েছে যেখানে উল্লেখ রয়েছে সব আজব জিনিসের। কোথাও নিজের তুতো বোনকে মলত্যাগ নিয়ে লেখা হয়েছে প্রেমপত্র। আবার কোথাও নিজের পুরুষাঙ্গের নাম পরিবর্তন করে তা নিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছেন প্রেমিক।
উলফগ্যাং অ্যামাডেউস মোজার্ট (Wolfgang Amadeus Mozart ) গানের থেকেও অনেক বেশি কিছু রেখে গিয়েছেন। নিজের তুতো বোন মারিয়া আনা থেকলার সঙ্গে তাঁর একটা সম্পর্ক ছিল। আর মারিয়াকে প্রেমপত্র লিখতেন তিনি। তবে সেই প্রেম পত্র একেবারেই স্বাভাবিক ছিল না অন্তত আর পাঁচজন প্রেমিক যুগলের কাছে। কারণ মলত্যাগের প্রতি তাঁর আলাদা একটা টান ছিল। প্রায় সব সময় তা নিয়েই কথা বলতে ভালোবাসতেন তিনি। আর সঙ্গীতের পাশাপাশি মারিয়াকে লেখা চিঠিগুলিও রেখে গিয়েছেন মোজার্ট। সেই চিঠি থেকেই তাঁর মলত্যাগের প্রতি যে অদ্ভুত টান ছিল তার একটা উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে। কেউ চিঠির শেষে লেখেন, 'আমি এখন তোমাকে শুভরাত্রি জানাচ্ছি।' কিন্তু, মোজার্ট নিজের চিঠির শেষে লেখেন, 'সব শক্তি দিয়ে নিজের বিছানায় মলত্যাগ করো, মনে শান্তি নিয়ে ঘুমাও আর নিজের পশ্চাৎ দেশে চুম্বন করার চেষ্টা করো।'
রাষ্ট্রপতি হওয়ার ঠিক আগে, ওয়ারেন জি হার্ডিংয়ের (Warren G. Harding) ক্যারি ফুলটন ফিলিপস (Carrie Fulton Phillips) নামে একজন মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। অনেকেই নিজের প্রেমিকার সঙ্গে পুরুষাঙ্গ নিয়ে কথা বলে থাকেন। কিন্তু, হার্ডিং একজন সেনেটর ছিলেন। ফলে চিঠিতে এই ধরনের অশ্লীল কথা তিনি লিখতে পারতেন না। এর জন্য কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করতেন তিনি। আর নিজের পুরুষাঙ্গের নাম তিনি দিয়েছিলেন, 'জেরি'। তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ তম রাষ্ট্রপতি। লিখেছিলেন, "আমি যদি তোমাকে জেরি পাহাড়ে নিয়ে যেতে পারতাম। অসাধারণ জায়গা।" তবে এভাবে একবার নয়, একাধিকবার প্রমিকাকে জেরির সম্পর্কে লিখেছিলেন হার্ডিং। অবশ্য শুধুমাত্র নিজের পুরুষাঙ্গের কোড নামই তিনি দেননি, প্রেমিকার যৌনাঙ্গের নাম দিয়েছিলেন 'মিসেস পুটারসন'। আর এভাবেই তাঁদের মধ্যে চিঠি আদান প্রদান হত।
একটি মাত্র বিয়েতে একেবারেই বিশ্বাসী ছিলেন না আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)। স্ত্রীয়ের পাশাপাশি একাধিক প্রেমিকা ছিল তাঁর। সেই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তাঁর চিঠি থেকে। আর এর জন্য কোনওদিনই বিন্দু মাত্রও অনুশোচনা হয়নি তাঁর। একাধিক বিয়ে করেছিলেন তিনি। এমনকী, একজন স্ত্রী থাকতে থাকতে আরও একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন। তারপর সেকথা নিজের আগের স্ত্রীকেও জানাতেন তিনি।
ছয় দশক ধরে দুশোর বেশি মহিলা জিমি স্যাভিলের যৌন অপরাধের শিকার হয়েছিল। তাদের বেশির ভাগের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে। এমনকী আট বছর বয়সী এক শিশুও তাঁর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। পুলিশ মোট ২১৪টি অভিযোগ তদন্ত করে দেখেছে, যার মধ্যে ৩৪টি ছিল ধর্ষণ বা যৌন সঙ্গমের অভিযোগ। এসব অপরাধের বেশিরভাগই ঘটেছে তাঁর কর্মস্থল এবং যে ১৩টি হাসপাতালের দাতব্য কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন সেসব হাসপাতালে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে কিছুদিন ডেট করেছিলেন জিমি স্যাভিলে (Jimmy Savile)। সেই সময় থ্যাচারকে বেশ কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। যেখানে তাঁর যৌন লালসার শিকার হওয়া মেয়ের কথাও উল্লেখ করেছিলেন স্যাভিল।
আমেরিকার দুইজন বিখ্যাত লেখক হয়তো প্রেমে পড়েছিলেন। 'মবি-ডিক'-এর লেখক হারমান মেলভিল (Herman Melville), 'দ্য স্কারলেট লেটার'-এর লেখক নাথানিয়েল হথর্নকে (Nathaniel Hawthorne) লেখা কিছু চিঠি রেখে গিয়েছেন। অনেকের মতে, তাঁদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু ছিল। হথর্নকে লেখা চিঠিতে মেলভিল লিখেছিলেন, 'আমার হৃদ স্পন্দন তোমারই'। আসলে তাঁদের মধ্যে এমন সব চিঠি আদান প্রদান হয়েছে যার মধ্যে এমন সব শব্দ রয়েছে যা খুব স্বাভাবিক নয়। আর তা দেখে মনে হয়েছে যে তাঁদের সম্পর্ক শুধুমাত্রই বন্ধুত্ব ছিল না।
পিটার অ্যাবেলার্ড (Peter Abelard) একজন মধ্যযুগীয় দার্শনিক ছিলেন যিনি খ্রিস্টান নীতিশাস্ত্র সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। এছাড়া হেলোইস ডি'আর্জেন্টিউইলের সঙ্গে তাঁর গোপন সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি হেলোইসকে যে চিঠি পাঠাতেন তা দেকে গবেষকদের মনে হয়েছে যে হেলোইস এই সম্পর্কের মধ্যে থাকতে পছন্দ করতেন না। হেলোইসকে তিনি লিখেছিলেন, 'তুমি খুব দুর্বল প্রকৃতির মানুষ সেই কারণে আমি প্রায়ই তোমাকে হুমকি এবং আঘাত দিয়ে তোমাকে বাধ্য করতাম।' এদিকে যখন তাঁদের এই গোপন সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে চলে এসেছিল তখন সেই সম্পর্ককে অস্বীকার করেছিলেন হেলোইস। এর প্রতিশোধ নিতে হেলোইসকে নানদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করেছিলেন অ্যাবেলার্ড। তারপর রেগে গিয়ে নিজের দলবল নিয়ে গিয়ে অ্যাবেলার্ডের বাড়ি ভেঙে দিয়েছিলেন হেলোইসের কাকা।
বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন (Benjamin Franklin), শুধুমাত্র একজন মহিলার জন্য খুব বেশি পুরুষ ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি মাঠে খেলা শুরু করেন। ৭৩ বছর বয়সে, তিনি তার একজন উপপত্নীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন যাতে তাঁকে জানানো হয় যে তাঁকে একটি খোলা সম্পর্কের সাথে মোকাবিলা করতে হয়েছিল।"তুমি আমার মধ্যে অসংখ্য দোষ খুঁজে পাও, অথচ আমি তোমার মধ্যে একটাই দোষ দেখি।" ফ্র্যাঙ্কলিন তাঁকে লিখেছিলেন। এই দোষটি ছিল "আমার সমস্ত স্নেহের উপর একচেটিয়া অধিকার খোঁজার চেষ্টা।" তিনি সম্পূর্ণ সৎ ছিলেন না, যদিও, যখন তিনি বলেছিলেন যে তিনি প্রেমিকার মধ্যে শুধুমাত্র একটি দোষ খুঁজে পেয়েছেন।
ফ্রাঞ্জ কাফকা যেমন অদ্ভুত ছিলেন, আপনি এখনও আশা করতে পারেন যে তিনি স্বাভাবিক প্রেমের চিঠি লিখবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিগুলি যেমন স্পষ্ট করে, কাফকা ঠিক সেই ব্যক্তি ছিলেন যা তাঁর লেখা তাঁকে দেখায়। মিলেনা নামের একজন মহিলার কাছে কাফকার একটি প্রেমের চিঠি ছোটগল্প হিসেবে বিক্রি করা যেত। লেখা হয়েছিল, "গত রাতে, আমি তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম।" স্বপ্নে তিনি কী কী দেখেছিলেন সেই কথাও উল্লেখ করেন চিঠিতে। লেখেন, “আমরা একে অপরের সাথে মিশে যেতে থাকলাম। আমি তুমি ছিলাম, তুমিই আমি।" এরপরই আসলে টুইস্ট। তিনি লেখেন, 'হঠাৎ তোমার গায়ে আগুন লেগে যায়। তারপর সেই আগুন আমি নেভাতে শুরু করি, পরে বুঝতে পারি যে আমার গায়েও আগুন লেগে গিয়েছে। তারপর আমার নিজের শরীরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করি কোট দিয়ে। তারপর দমকল আসে। তোমাকে রক্ষা করে।' কাফকা লিখেছেন। তাঁদের চিঠি থেকেই বোঝা গিয়েছে যে খুব বেশি রোম্যান্টিক হতে পারতেন না কাফকা।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড (Sigmund Freud) যখন যুবক ছিলেন, তখন তিনি মার্থা বার্নেসের সাথে বাগদান করেছিলেন। তাঁর বাগদত্তা তখনও কুমারী ছিলেন। এরপর নিজের বাগদত্তাকে কোকেন নিতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। সেই নিজেই চিঠি লিখেছিলেন। সেই বছর ফ্রয়েড "কোকেন সম্পর্কে" নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন যেখানে যৌন উত্তেজনার জন্য, মাথাব্যথার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং আরও অনেক কিছুর জন্য কোকেন ব্যবহার করার সুপারিশ করেছিল। তিনি এমন লোকদের সাথে তর্ক করে চিঠির একটি সিরিজ লিখেছেন যারা বলেছিলেন যে কোকেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফ্রয়েড তাঁর বাগদত্তাকে লিখেছিলেন, “আমি তোমাকে চুম্বন করব এবং তুমি মোটা হওয়া পর্যন্ত তোমাকে খাওয়াব। তারপর তুমি দেখতে পাবে যে কে শক্তিশালী, একটি ছোট মেয়ে যে যথেষ্ট পরিমাণে খায় না বা নাকি এক বন্য পুরুষ যার শরীরে কোকেন রয়েছে।"
মার্লন ব্র্যান্ডো (Marlon Brando) এক যৌন প্রতীক ছিলেন। যে কোনও মহিলা তাঁর কাছ থেকে প্রেমের চিঠি পেয়ে রোমাঞ্চিত হতেন। ১৯৬৬ সালে একটি ফ্লাইট নেওয়ার পরে, ব্র্যান্ডো বিমানের একজন সেবিকার কাছে একটি প্রেমপত্র দিয়েছিলেন। "আপনার মুখে এমন কিছু আছে যা পুরোপুরি সংজ্ঞায়িত করা যায় না," ব্র্যান্ডো লিখেছেন।