নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কায় মার্কিনীরা, তুঙ্গে বন্দুক-গোলাবারুদের বিক্রি

রাত পোহালেই মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। তার আগে আমেরিকায় দারুণভাবে বেড়ে গিয়েছে বন্দুকের বিক্রি। ডোনাল্ড ট্রাম্প তথা রিপাবলিকানরা বন্দুক নিয়ন্ত্রণের বিরোধী। কাজেই ট্রাম্প সমর্থকরা বন্দুক কিনবেন, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে? কিন্তু, বিস্ময়কর হলেও ডেমোক্র্যাট সমর্থক তথা ট্রাম্প বিরোধী মার্কিনীরা, যাঁরা বন্দুক রাখার বিরোধী, তাঁদের মধ্যেও ২০২০ সালের নির্বাচনের আগে বন্দুক কেনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের ফল যাই হোক, শেয পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ লেগে যেতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট নির্বিশেষে অধিকাংশ মার্কিনী।

 

amartya lahiri | Published : Nov 2, 2020 6:47 PM IST / Updated: Nov 07 2020, 02:28 PM IST

18
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কায় মার্কিনীরা, তুঙ্গে বন্দুক-গোলাবারুদের বিক্রি

বন্দুক বিক্রি বাড়ছে না কমছে - কী অবস্থায় আছে তা বোঝার জন্য আমেরিকায় একটি ভালো মাধ্যম রয়েছে। মার্কিন বন্দুক ক্রয়ের আইন অনুযায়ী, বন্দুক কিনতে আগ্রহী প্রত্যেককে এফবিআই-এর 'ব্যাকগ্রাউন্ড চেক' প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেই তথ্য বলছে গত কয়েক মাসে মার্কিনীদের বন্দুক কেনার আগ্রহ দারুণভাবে বেড়েছে। গত মার্চ মাসে ৩৭ লক্ষ মানুষ বন্দুক কিনতে চেয়ে 'ব্যাকগ্রাউন্ড চেকিং'-এর জন্য আবেদন করেছিলেন, জুন মাসে তা ছাপিয়ে গিয়ে আবেদন জমা পড়ে ৩৯ লক্ষ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর অবধি মোট 'ব্যাকগ্রাউন্ড চেক'-এর আবেদন জমা পড়েছে ২ কোটি ৮৮ লক্ষ। ২০১৯ সালে গোটা বছরের আবেদনের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮৪ লক্ষ।

 

28

পাশাপাশি, মার্কিন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি,  'ন্যাশনাল স্পোর্টস শ্যুটিং ফাউন্ডেশন' জানিয়েছে চলতি বছরের বন্দুক ক্রেতাদের ৪০ শতাংশই প্রথমবারের জন্য বন্দুক কিনেছেন। শেষবার এরকম বন্দুকের চাহিদা দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালে, অর্থাৎ এর আগের মার্কিন নির্বাচনের সময়। ওই বছর বন্দুক কেনার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের আবেদন জমা পড়েছিল ২ কোটি ৭৫ লক্ষ।

38

কিন্তু কেন এই বন্দুক কেনার আগ্রহ? বন্দুক ক্রেতাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এইবারের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে এসেছে ততই অশান্তির উপাদান পুঞ্জিভূত হয়েছে। এইবারের ভোটে গতবারের থেকেও ভোটাররা দুই মেরুতে ভাগ হয়ে রয়েছে। উভয়পক্ষেরই দাবি এটা অস্তিত্বরক্ষার লড়াই। রয়েছে 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার'-এর মতো বিক্ষোভ। কোভিড মহামারি নিয়ে আতঙ্ক। এই সবই একটু একটু করে ৩ নভেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। সামাজিক অস্থিরতা এবং মূল্যবোধের লড়াই অবিশ্বাস্য জায়গায় পৌঁছেছে। তাই ভোটকে কেন্দ্র করে যে কোনও সময় হিংস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বা ফলাফল ঘোষণার পর 'গৃহযুদ্ধ' লেগে যেতে পারে বলে শঙ্কিত।

48

তাদের শঙ্কা যে দারুণ অমূলক, তাও নয়। নভেম্বরের শুরুতেই মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ 'গার্হস্থ্য চরমপন্থী হিংসা' এখন সেই দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে চিহ্নিত করেছে। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুটি পদক্ষেপ বিরোধীদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। ওই বিতর্কসভায় তিনি স্পষ্টভাবে শেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি হবেন কিনা, সেই এমন প্রশ্নেরও স্পষ্ট কোনও জবাব দেননি ট্রাম্প। কাজেই ভোটে পরাজয় হলে তিনি 'ভোট জালিয়াতি'র অভিযোগ তুলতে পারেন বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

 

58

তাই এখন ভোটের মুখে শুধু ট্রাম্প ভক্তরাই নন, আপামর মার্কিনীরাই ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্দুক কিনছেন। সোশালিস্ট রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন, আফ্রিকান আমেরিকান গান অ্যাসোসিয়েশনের মতো বামপন্থী-সহ নতুন নতুন গোষ্ঠী-ও তৈরি হচ্ছে। তারা বলছেন, বন্দুক বহন করতে না চাইলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই অধিকারটি প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখতে চান। বিশেষ করে অপর পক্ষ যখন আইনের শাসনের বিশ্বাসী নয়, তখন এছাড়া কোনও উপায় নেই। দেশের শেষ পর্যন্ত কী হবে তা তাদের জানা নেই, আপাতত গৃহযুদ্ধ লাগলে পরিবার ও নিজেকে রক্ষা করার অধিকারটুকু তারা রক্ষা করতে চান।

 

68

শটগান এবং পিস্তলের মতো আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও সেগুলির জোগানে এখনও পর্যন্ত কোনও ঘাটতি নেই। তবে টান পড়েছে গোলাবারুদের সরবরাহে। জানা গিয়েছে আগে যে কার্তুজের ৫০ রাউন্ড পাওয়া যেত মাত্র ১৫ ডলারের বিনিময়ে, এখন সেই তাই ৪০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। বন্দুক ও কার্তুজের চাহিদা এমন অবিশ্বাস্য জায়গায় পৌঁছেছে যে গত শুক্রবার থেকে 'নাগরিক অশান্তি' হওয়ার আশঙ্কায় 'ওয়ালমার্ট' সংস্থা তাদের স্টোরগুলির তাক থেকে সব বন্দুক এবং গোলাবারুদ সরিয়ে দিয়েছে।

 

78

বস্তুত, মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতেই নাগরিকদের অস্ত্র রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। সংশোধনীটি আসার পর থেকে সেই দেশের ইতিহাসের অধিকাংশ সময়ই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে এই বন্দুক রাখার অধিকারের বিষয়টি। বন্দুক নিয়ন্ত্রণের সমর্থকদের বিরুদ্ধে বন্দুক রাখার অধিকারের সমর্থকদের সেই দ্বন্দ্ব এখনও চলছে। বর্তমান নির্বাচনেও এটি অন্যতম আলোচিত বিষয়। বিশেষ করে মার্কিন স্কুলগুলিতে বন্দুকবাজদের হামলা ক্রমে বাড়তে থাকায় এই সমস্যা এইবার একেবারে জ্বলন্ত ইস্যু। ডেমোক্র্যাট-দের মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন খোলাখুলি অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

88

তবে, এই ধরণের প্রতিশ্রুতি এই প্রথম কেউ দিলেন তা নয়। গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপন্থী ডেমোক্র্র্যাটরা বন্দুক নিয়ন্ত্রণের কথাই বলে এসেছেন। শেষ ডেমোক্র্যাট রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা-ও বন্দুকের উপর নানান নিয়ন্ত্রণ চাপিয়েছিলেন।কিন্তু, বারবারই দেখা গিয়েছে নিয়ন্ত্রণ-নিষেধাজ্ঞায়, বন্দুকের বিক্রি কমার বদলে আগের থেকে বেড়েছে। এইবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। তবে, শুধু বন্দুক নয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় সড় গোলমালের আশঙ্কায় আম মার্কিনীরা খাদ্যদ্রব্য থেকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও মজুত করছেন বলে খবর রয়েছে। গন্ডোগোলের ভয়ে অনেক বড় দোকানের কাচের জানলা দরজাই কার্ডবোর্ড দিয়ে ঢেকে দিতেও দেখা গিয়েছে।

 

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos