মোদীর বেলুড়-ভাষণ নিয়ে প্রবল বিতর্ক নেটদুনিয়ায়, প্রাক্তনীদের গণস্বাক্ষর

  • মোদির বেলুড়  বক্তৃতা  নিয়ে প্রবল বিতর্ক
  • বিতর্ক নেটদুনিয়ার ভেতর
  • রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনীরা ক্ষুব্ধ
  • নেটে গণস্বাক্ষর করে চিঠি কর্তৃপক্ষকে

Sabuj Calcutta | Published : Jan 12, 2020 6:50 AM IST

বেলুড় মঠে গিয়ে নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে সওয়াল করে যখন হাততালি কুড়োচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী, ঠিক তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রাক্তনীরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন জায়গায় এই বক্তব্য কি আদৌ মানানসই?  শুধু প্রাক্তনীরাই নন, বিষযটি নিয়ে ফেসবুকে নিজের ওয়ালে ক্ষোভ জানিয়েছেন নেটিজেনকেই।
কেউ লিখেছেন-- খুব মন খারাপ। যে প্রতিষ্ঠান আমাকে মানুষ, প্রকৃতি, সবাইকে ভালবাসতে শিখিয়েছে, সহনশীলতা শিখিয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র বেলুড়ে এই অতিথির কি খুব একটা দরকার ছিল?
মোদী বেলুড়ে আসার আগেই, প্রাক্তনীদের অনেকে ইমেল করেছেন মঠ কর্তৃপক্ষকে। একই বয়ানে। কার্যত নেটে গণস্বাক্ষর করে তাঁরা তা পাঠিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। সেই বয়ানে লেখা রয়েছে-- "আমি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র হিসেবে বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনের আগের দিন নরেন্দ্র মোদীর সফর বাতিল করুন। আমি বিশ্বাস করি, ঠাকুর রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ এবং মা সারদা দেবী কোনও অবস্থাতেই একজন গণহত্যাকারী এবং বিভাজনকারীকে সমর্থন করতেন না। শান্তি এবং সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে যে জায়গা তৈরি হয়েছিল, সেখানে এমন একজনকে ঢুকতে দেবেন না, যাঁর জন্যই জনগণের এত দুর্দশা।"
শুধু ইমেলই নয়, অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ফোনও করেছেন মঠ কর্তৃপক্ষকে। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন প্রাক্তনীরা, তেমনই রয়েছেন ভক্তরাও। বলতে গেলে, শনিবার থেকে মঠে মোদীর যাওয়া নিয়ে প্রবল বিরোধিতা শুরু হয়েছে। নেটিজেনদের কেউ কেউ লিখছেন-- ঠাকুর রামকৃষ্ণ বাঙালির ধর্মগুরু। নিখাদ নির্ভেজাল বাঙালি। দোষেগুণে মেশানো বাঙালি। বাঙালি হিন্দু হয়ে ইসলাম ধর্মের সাধনা করেছিলেন তিনি। এবং, লীলাপ্রসঙ্গ অনুসারে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তাঁর ইসলাম ধর্মের গুরু ছিলেন এক বাঙালি সুফি মুসলমান। তাঁর অন্য গুরুর মধ্যে একজন 'খোট্টা'। একজন নারী। একজন 'খোট্টা'র দেওযা শিশু রামের সাথে উনি খেলা করতেন।পুজো করতেন এক শূদ্র জমিদারের মন্দিরে। যীশুকে উনি গির্জায় দেখেছিলেন সেটা কলকাতায় সম্ভবত। একমাত্র গির্জা যেখানে তখন বাংলায় উপাসনা হত।যারা বাঙালিকে হিন্দুমুসলিমে ভাগ করতে চায়, তাদের পাণ্ডা বেলুড় মঠে আসছেন। যারা সারা দেশে এমন পুকুর রাখতে চায় না যেখান থেকে কেউ জল খাবে, আরেকজন পানি খাবে, আরেকজন ওয়াটার খাবে।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে অন্যতম, রামকৃষ্ণ মিশন নরেন্দ্রপুরের প্রাক্তনী ডা. জ্যোতির্ময় সমাজদারের কথাতেও উঠে এল এই সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা। এদিন প্রধানমন্ত্রী বেলুড়ে গিয়ে সিএএ নিয়ে কার্যত রাজনৈতিক ভাষণ দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বললেন, "রামকৃষ্ণ বলেছিলেন যত মত তত পথ, বিবেকানন্দ বলেছিলেন, বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর। মনে আছে আমাদের প্রার্থনার সময়ে আমরা দেখতাম সেখানে খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্মের প্রতীক থাকত সেখানে। এই সর্বধর্ম সমন্বয়ের জায়গায়  বিভাজনের রাজনীতি একেবারেই মানানসই নয়।" 

Share this article
click me!