ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান- দেশের ৭৫তম মুক্তিবর্ষে ফিরে দেখা ক্ষুদিরাম বোসের আত্মত্যাগ

বোমা ছুঁড়েই পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল। রাতে ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি হেঁটে, ক্ষুদিরাম পরের দিন ভোরে ওয়াইনি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান যেখানে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

ইতিহাসের পাতায় রক্তাক্ষরে লেখা তাঁদের নাম। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন শেষ করতে কোনও দ্বিধাবোধ করেননি তাঁরা। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা সেইসব বীর সন্তানদের, যাদের আত্মত্যাগের কারণেই আজ ভারত স্বাধীন, মুক্ত। আজ ফিরে দেখা ১৮ বছরের ক্ষুদিরাম বোসের সংগ্রামের কথা। সাহসী দেশপ্রেমিকদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন ক্ষুদিরাম। বঙ্গভঙ্গের পর উঠে আসা তরুণ বিপ্লবীদের মধ্যে একটি বিশিষ্ট নাম।

ক্ষুদিরাম মেদিনীপুরের তহসিলদার ত্রৈলোক্য নাথ এবং লক্ষ্মী দেবীর একমাত্র পুত্র ছিলেন। ত্রৈলোক্যনাথ ও লক্ষ্মী দেবীর তিনি দুই ছেলের মৃত্যুর পর এবং তিন মেয়ের জন্মের পর জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষুদিরামের জীবন বাঁচানোর জন্য বিশেষ পুজো করেছিলেন তাঁর বাবা মা। কিন্তু ছেলের শৈশব কাটার আগেই বাবা-মা দুজনেই মারা যান। দিদির কাছে মানুষ হয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। সেই সময়ের বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন। অরবিন্দ ঘোষ এবং সিস্টার নিবেদিতার জ্বলন্ত বক্তৃতা তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। ক্ষুদিরাম অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন যেটি ব্রিটিশদের বল প্রয়োগে তাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

Latest Videos

কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সির বিচারক ডগলাস কিংসফোর্ড ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি ঘোর বিদ্বেষী ছিলেন। এমনকি ছোট বাচ্চাদেরও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য অত্যন্ত নৃশংস শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লবীরা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটা জেনে কিংসফোর্ডকে বিহারের মুজাফফরপুরে বদলি করা হয়। কিন্তু বোস এবং তার বন্ধু প্রফুল্ল চাকি কিংসফোর্ডকে পালাতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল। ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি মুজাফফরপুরে ইউরোপিয়ান ক্লাবের গেটে চুপিচুপি অপেক্ষা করছিলেন। কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রী সেখানে বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যা কাটাচ্ছিলেন। রাত ৮টার দিকে দুটি ঘোড়ার গাড়ি গেট দিয়ে বেরিয়ে আসে এবং বোস ও চাকি তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে। তবে বোমাগুলি ভুলবশত কিংসফোর্ড এবং তার স্ত্রীর গাড়িতে আঘাত করেনি বরং তাদের বন্ধুদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ মহিলা এবং তার মেয়েকে আঘাত করেছিল যারা নিহত হয়েছিল।

বোমা ছুঁড়েই পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল। রাতে ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি হেঁটে, ক্ষুদিরাম পরের দিন ভোরে ওয়াইনি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান যেখানে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পাটনার কাছে মোকামা রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশ ধরার চেষ্টা করলে প্রফুল্ল নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করে। ক্ষুদিরামের বিচার গোটা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এমনকি মহাত্মা গান্ধী যেমন বোসের সাহসিকতাকে সম্মান করেছিলেন, তার হিংসাত্মক কাজের নিন্দা করেছিলেন কিন্তু তিলক প্রকাশ্যে তাকে সমর্থন করেছিলেন। 

তার কম বয়সের কথা বিবেচনা করে তাকে মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার সে আবেদনে কর্ণপাত করেনি। ক্ষুদিরামকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রায় শুনে ক্ষুদিরাম হাসেন। তাকে যখন মুজফফরপুর জেলে আনা হয়, তখন গোটা শহর তাকে দেখতে যেন জেলের সামনে ভেঙে পড়েছিল। ১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট ক্ষুদিরামের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। 

আজ, সমষ্টিপুরের ওয়াইনি রেল স্টেশন যেখানে তাকে বন্দী করা হয়েছিল তার নাম ক্ষুদিরাম বোস পুসা স্টেশন। মুজাফফরপুর কারাগার যেখানে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেটি ক্ষুদিরাম বোস মেমোরিয়াল জেল নামে পরিচিত হয়েছে।

Share this article
click me!

Latest Videos

'Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন আনবো West Bengal-এ' Suvendu Adhikari- র চরম প্রতিশ্রুতি #shorts
Narendra Modi : বড়দিনের অনুষ্ঠানে মাতলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সকলকে জানালেন শুভেচ্ছা
২৬-এ Mamata Banerjee-কে বিদায়! মমতাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বানানোর শপথ Suvendu Adhikari-র
‘West Bengla-এ Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন দেবে BJP’ সনাতনী হিন্দুদের প্রতিশ্রুতি Suvendu Adhikari-র
'ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা' হিন্দুদের প্রতি সহানুভুতি, বাংলাদেশী জঙ্গিদের টার্গেট Suvendu Adhikari