ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এসেছিল বুলেট, লুটিয়ে পড়লেও মাতঙ্গিনী হাজরা তখনও ধরেছিলেন জাতীয় পতাকা

মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। গুলি এসে লাগল তাঁর পায়ে, হাতের শঙ্খ মাটিতে পড়ে গেল, পরের বুলেটের আঘাতে হাত নেমে এলো মাটিতে। তখনও তিনি বলছেন, “ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো।”

Parna Sengupta | Published : Aug 8, 2022 1:02 PM IST / Updated: Aug 09 2022, 09:15 AM IST

১৯৪২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। সেই জোয়ার এসে ধাক্কা দিয়েছিল বাংলার মাটিকেও। ক্ষণে ক্ষণে সেদিন শ্লোগান উঠেছিল “ইংরেজ ভারত ছাড়ো, করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে, বন্দেমাতরম।” তমলুক থানার আকাশ বাতাস কাঁপছিল সেদিন সত্তোরোর্ধ এক বৃদ্ধার গলার দাপটে। তবে ইংরেজদের কানে সে আওয়াজ সহ্য হয়নি। ছুটে এসেছিল তারা বন্দুক নিয়ে। অহিংস পথে আন্দোলন করা সেই দলটার ওপর নির্বিচারে চলেছিল গুলি। 

মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। গুলি এসে লাগল তাঁর পায়ে, হাতের শঙ্খ মাটিতে পড়ে গেল, পরের বুলেটের আঘাতে হাত নেমে এলো মাটিতে। তখনও তিনি বলছেন, “ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো।” পরের বুলেট এসে লাগল তাঁর কপালে। প্রাণহীন দেহ পড়ে গেল মাটিতে। কিন্তু জাতীয় পতাকা তখনো হাতের মুঠোতে ধরা। সেই মহিয়সী নারীর নাম মাতঙ্গিনী হাজরা। যাঁর অন্য নাম গান্ধী বুড়ি।

Latest Videos

১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর তমলুকের হোগলা গ্রামের মাইতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাতঙ্গিনী হাজরা। ঠাকুরদাস মাইতি ও ভগবতী মাইতির এক মাত্র মেয়ে ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় পড়েছিলেন মাতঙ্গিনী দেবী। অত্যন্ত দারিদ্র্যের কারণে প্রথাগত শিক্ষা লাভের সুযোগ তিনি খুব একটা পাননি। খুব অল্প বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। মাত্র ১৮ বছর বয়সী তিনি বিধবা হন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান।

উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মভিটেতে, ক্ষোভে ফুঁসছে হোগলা গ্রাম

এর পর থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন মাতঙ্গিনীদেবী। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রায় পরিত্যাজ্য হন তিনি। এসময় থেকেই সমাজের বিভিন্ন সেবামূলক কাজে তাঁর আকর্ষণ বাড়তে থাকে। একাধিকবার বসন্ত রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয় বাংলা জুড়ে। সে সময় বসন্ত রোগীদের সেবায় প্রাণপাত করেন তিনি। এই সময় কংগ্রেস নেতা গুণধর ভৌমিকের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি হয়। আস্থা বাড়তে থাকে কংগ্রেসে। এরপর ১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন সক্রিয়ভাবে।

মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। সে কারণে তাঁর অন্য নাম ছিল গান্ধী বুড়ি। সারা দেশ জুড়ে ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে, তিনি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। কাঁথি থেকে লবণ সত্যাগ্রহ শুরু হয়। তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে শুরু হয় পুলিশের অত্যাচার। মুক্তি পাবার পর আবার আন্দোলনে যোগদান তাঁর। তাই আবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। 

মোদীর ভাষণে মাতঙ্গিনী হাজরা অসমের বাসিন্দা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তৃণমূলের

বহরমপুরের কারাগারে ৬ মাস তিনি বন্দি ছিলেন। মুক্তি লাভের পর নিজের হাতে চরকা কেটে খাদির কাপড় বানানো শুরু করেন। জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তমলুক থানা দখলের সময় পুলিশের গুলিতে তাঁর প্রাণ যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেও দেশের পতাকাকে তিনি মাটিতে ফেলেননি। 

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

৮৭ দিন পার, কবে শেষ হবে তদন্ত! CBI দফতর অভিযানে মহিলারা | RG Kar Protest | RG Kar News Today
'এতদিন আমি মুখ খুলিনি, ফাঁসাচ্ছে, ডিপার্টমেন্ট বলেছে চুপ থাকতে' চিৎকার সঞ্জয়ের | Sanjay Roy RG Kar
পরকীয়া! নাকি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ! বোলপুরে TMC নেতার মৃত্যুতে রহস্য! গ্রেফতার ৫ | TMC News
'এরা সব লাইন দিয়ে জেলে যাবে, একটাও ভোট TMC-কে দেবেন না' রুদ্রমূর্তিতে শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
Live: আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে তৃণমূলকে তুলোধোনা বিজেপির, দেখুন সরাসরি