জেএনইউ-তে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার নিন্দায় মুখর গোটা দেশ। গত রবিবার রাতে ক্যাম্পাসে ঢুকে মুখোশধারী গুন্ডাদের রড, লাঠি এবং হকিস্টিকের আঘাতে বেশ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপক গুরুতর আহত হন। গেটেই দঁড়িয়েছিল পুলিশ। ছিল নিরাপত্তারক্ষীরাও। পুলিশকে না ডাকার কারণে সমালোচিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মামিডালা জগদীশ কুমার। তবে, উপাচার্য সুরক্ষা দিতে না পারলেও সেই রাতে শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৯ হস্টেলকর্মী।
জানা গিয়েছে, সেই রাতে জেএনইউ-এর সবরমতি হস্টেলের ৯ জন কর্মী অন্তত ৩০ জন পড়ুয়াকে সেই বর্বরোচিত হামলার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। ১৯৮৫ সাল থেকেই এই হস্টেলের মেসে কাজ করেন রাধে শ্যাম। তিনি জানিয়েছেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ সেই মুখোশধারী রড-বাহিনীকে তিনি হস্টেলের দিকে আসতে দেখেছিলেন। তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে তিনি করিডোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেন ও মেসবাড়ির ভিতরে ঢুকে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
তাঁর চিৎকার শুনে, করিডরে ঘুরে বেড়ানো শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে মেসে ঢুকে পড়ে। তারপর রাধেশ্যাম এবং তাঁর সহকর্মীরা হস্টেলে ঢোকা-বেরনোর সমস্ত দরজা তালাবন্ধ করে দেন। সেখানে প্রায় ৩০ জন ছাত্রছাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন অন্য হস্টেলের। তাঁরা এসেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে। মেসের প্রবেশপথ গুলি তালাবদ্ধ করার পরও তাঁরা নিশ্চিন্ত হতে পারেননি। তাই শিক্ষার্থীদের তাঁরা চাল-ডাল রাখার স্টোররুমে লুকিয়ে রাখেন। তাতেই রডবাহিনী তাঁদের সন্ধান পায়নি।
অবশ্য তাঁরা রক্ষা পেলেও ভাগ্য সহায় ছিল না মেসে সহায়ক হিসাবে কাজ করা রাকেশ কুমার-এর। তিনি বিশেষভাবে সক্ষম। তাঁর দেহের বাঁদিকটা পুরোটাই পক্ষাঘাতগ্রস্থ। তাই তিনি দৌড়ে পালাতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের না পেয়ে মুখোশধারী গুন্ডাদের যাবতীয় আক্রোশ ঝরে পড়ে তাঁর উপরেই। তাদের কাপুরুষোচিত হামলার ফলে এখন তাঁর দুই পা ভরে গিয়েছে আঘাতের চিহ্নে।
হামলাকারীরা চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর গভীর রাতে রাধেশ্যাম ও তাঁর সহকর্মীরা অন্যান্য হস্টেল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের তাঁদের নিজ নিজ হস্টেলে পৌঁছে দেন। তারর আগে অবশ্য তাঁদের রাতের খাওয়ার আয়োজন সবরমতি হস্টেলেই করেন।
সবরমতি হস্টেলের সভাপতি মনিকা বিষ্ণোই-ও এই কর্মচারীদের বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সেই রাতে হস্টেলের ওয়ার্ডেন ছিলেন না শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য। কিন্তু এই নয় কর্মীই হস্টেলের বর্ম হয়ে উঠেছিলেন। মনিকা বলেছেন, এই কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ফেলে নিজেদের বাঁচাতে সহজেই পালাতে পারত, কিন্তু তাঁরা তা করেননি।