একদিকে যখন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী তাঁকে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন বলে কটাক্ষ করছেন, অন্যদিকে নোবেল পাওয়া নিয়ে তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা। ভারতে পা দিয়েই এ নিয়ে মুখ খুললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপে নেতা, মন্ত্রীদের আক্রমণে কিছুটা হলেও হতাশ তিনি। পীযুষ গয়ালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তাঁর পেশাদারিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস যে ন্যায় প্রক্লপের কথা ঘোষণা করেছিল, তার রূপায়ণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদিও নির্বাচনে এই প্রকল্পে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কোনও সুফল ঘরে তুলতে পারেনি কংগ্রেস। সে কথা মনে করিয়ে দিয়েই রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল কটাক্ষ করে বলেন, নোবলজয়ী অর্থনীতিবিদের ভাবনাচিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে গোটা দেশ। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে বামপন্থী বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। একা রেলমন্ত্রী নন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করতে গিয়ে কুরুচিকরভাবে তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা। তিনি কটাক্ষ করে বলেছিলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে একজন বিদেশিনী থাকাটা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কোনও মাপকাঠি কি না।
ভারতে পা দিয়ে এই সমস্ত তির্যক মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অভিজিৎ বলেন, 'আমরা নোবেল পাই কারণ আমরা এক একজন পেশাদার। ফলে আমার নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসলে আমার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উনি। আমি অনেক রাজ্য সরকারের সঙ্গেই কাজ করেছি। তার মধ্যে বেশ কিছু রাজ্য বিজেপি দ্বারা শাসিত। নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাত সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে কাজ করেও দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমরা। পেশাদারিত্বের সঙ্গে কখনওই আমি দলীয় আনুগত্যকে গুলিয়ে ফেলিনি।
ন্যায় প্রকল্পে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি ছিল, দেশের সবথেকে গরিব কুড়ি শতাংশ পরিবারকে বার্ষিক ৭২ হাজার টাকা করে সাহায্য করা হবে। এই প্রসঙ্গ তুলে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আজকে যদি কংগ্রেসের বদলে বিজেপি-র পক্ষ থেকে আমার কাছে একটি নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে কত শতাংশ মানুষ আছেন তা জানতে চাওয়া হতো, তাহলে কি আমি তাঁদের সত্যিটা বলতাম না?সেক্ষেত্রেও আমি তাঁদেরকেও সঠিক তথ্যটাই একইরকম উৎসাহী হয়েই দিতাম। পেশাদার হিসেবে সবার সঙ্গেই সমান ব্যবহার করতে চাই আমি।'
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা তাঁকে যে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, তাতে যে তিনি কিছুটা হলেও হতাশ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।
নোবেল জয়ের পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করেছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের অর্থনীতি সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে বলেও মতপ্রকাশ করেন তিনি। এর পরেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হন বিজেপি-র নেতা, মন্ত্রীরা। তার পরেও অবশ্য ভারতের অর্থনীতি নিজের মন্তব্য থেকে সরে আসেননি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতে পা রেখেও তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি যে সঙ্কটে রয়েছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।