
Agni 5 Bunker Buster Missile : ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এখন ৭,৫০০ কেজি ওজনের বাঙ্কার বাস্টার ওয়ারহেড সহ একটি শক্তিশালী অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটি বিশ্বের ভূগর্ভস্থ যুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২০২৪ সালের ২২ জুন, আমেরিকা যখন ইরানের ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনায় B-2 বোমারু বিমান থেকে GBU-57/A বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তখন বিশ্বজুড়ে সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিরক্ষা কৌশলবিদরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গিরিশ লিঙ্গান্না বলেছেন, ভবিষ্যতে যুদ্ধ ভূপৃষ্ঠের উপরে নয়, বরং ভূগর্ভে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিআরডিও-র কৌশলগত পরিকল্পনা
এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে, DRDO অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রে ৭,৫০০ কেজি ওজনের বাঙ্কার বাস্টার ওয়ারহেড সংযুক্ত করার কাজ দ্রুততর করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৮০ থেকে ১০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।
১৭.৫ মিটার লম্বা এবং ২ মিটার চওড়া অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রটির নকশায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৫০,০০০ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি তিন-স্তরের কঠিন জ্বালানি দ্বারা চালিত। রিং লেজার জাইরো, অ্যাক্সিলেরোমিটার এবং ফ্লেক্স সিল থ্রাস্ট ভেক্টর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি উচ্চ নির্ভুলতার সঙ্গে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
বাঙ্কার বাস্টার ওয়ারহেডের ক্ষমতা
৭,৫০০ কেজি ওজনের এই ওয়ারহেডটি শক্তিশালী পাথর, কংক্রিট এবং ইস্পাত ভেদ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হচ্ছে। এটি ১০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ভেদ করতে সক্ষম। আমেরিকার GBU-57 ৬০ মিটার মাটি বা ১৮ মিটার শক্তিশালী কংক্রিট ভেদ করতে পারে। অগ্নি-৫ এর ভেদন ক্ষমতা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অগ্নি-৫-এ বাঙ্কার বাস্টিং ছাড়াও, এয়ারবার্স্ট প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি শত্রুপক্ষের বিমান ঘাঁটি এবং কমান্ড সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করতে সাহায্য করবে।
অগ্নি ৫ বাঙ্কার বাস্টার ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এবং কৌশলগত সক্ষমতা
পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে অগ্নি-৫ এর পাল্লা ৭,০০০ কিমি-র বেশি। তবে বাঙ্কার বাস্টার হিসেবে এর পাল্লা ২০০০ থেকে ২৫০০ কিমি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ভারী ওয়ারহেড বহন করতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের পরিবর্তে ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে বাঙ্কার বাস্টার পাঠানোর অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এটি ভারতীয় ভূখণ্ড থেকেই উৎক্ষেপণ করা যাবে। দ্বিতীয়ত, এটি ২৪ ম্যাক গতিতে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তৃতীয়ত, এটি রোড-মোবাইল ক্যানিস্টারের মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে উৎক্ষেপণ করা যাবে।
বিশ্বের বাঙ্কার বাস্টার অস্ত্রের প্রতিযোগিতা কেমন?
অগ্নি-৫ এর মাধ্যমে ভারত আমেরিকার GBU-57 এবং দক্ষিণ কোরিয়ার Hyunmoo-IV এর মতো ব্যবস্থার জবাব দিচ্ছে। বিমানের প্রয়োজন ছাড়াই মোবাইল লঞ্চার থেকে উৎক্ষেপণ করার সুবিধা হলো এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে মিশন দিব্যাস্ত্র-তে প্রদর্শিত MIRV (Multiple Independently Targetable Reentry Vehicle) প্রযুক্তি এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে সহায়তা করবে। একই প্রযুক্তি এখন একটি ভারী ওয়ারহেডকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
এটি ভারতের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার প্রতীক। ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় সুনির্দিষ্ট আক্রমণের মাধ্যমে ভারত প্রচলিত অস্ত্রের ক্ষেত্রেও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
অগ্নি-৫-এ ব্যবহৃত কার্বন কম্পোজিট ঢাল পুনঃপ্রবেশের সময় তাপ সহ্য করতে পারে। রিং লেজার জাইরোস্কোপ এবং অ্যাক্সিলেরোমিটার সমৃদ্ধ নেভিগেশন সিস্টেম উচ্চ নির্ভুলতা নিশ্চিত করে।
অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য রোড-মোবাইল, ক্যানিস্টারাইজড লঞ্চ সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। এটি শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে দ্রুত উৎক্ষেপণের সুবিধা দেয়।
অগ্নি-৬ নকশা করছে DRDO
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, DRDO ইতিমধ্যেই অগ্নি-৬ এর নকশার কাজ শুরু করেছে। ১২,০০০ কিমি পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১০টি MIRV বহন করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।