সংসদের উচ্চকক্ষ আর নিম্নকক্ষে পাস হয়েছে কৃষি-বিল। কিন্তু এখনও অসন্তোষ অব্যাহত গোটা দেশ জড়ে। দেশের অন্নদাতাদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও সরব হয়েছে। পঞ্জাব, হরিয়ানাসহ একাধিক রাজ্যে বিদ্রোহের সুর কিছুটা হলেও চড়া। কিন্তু এই বিল কৃষকদের স্বাধীনতা দেবে। এই বিল দেশের কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে বলে সওয়াল করেছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। তিনি আর বলেন, নতুন বিলগুলি ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন কৃষি নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। কারণ কৃষকরা প্রচুর পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করেন। তাঁরা যাতে সঠিক দাম পান তারজন্যই এই বিল। কৃষি বিল মাত্র দুপাতার, কোনও জটিলতা নেই তাই সিলেক কমিটিতে পাঠান হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বলেন এই বিল কৃষকদের উপযোগী। কারণ এই বিলগুলির ফলে ছোট কৃষকরাই সরাসরি তাঁদের তৈরি ফসল ইচ্ছেমত দামে বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু আগে তা হত না। কারণ আগে ছোট কৃষক বা ভাগচাষিরা মান্ডি পর্যন্ত আসতে পারতেন না। তাঁরা জমিতেই অনেক কম দামে ফসল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। আর সেই কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাভ পেতেন না। বিলগুলি পাশ হওয়ায় বড় চাষিরাও উপকৃত হবেন। কারণে উৎপন্ন ফসল নিয়ে তাঁদের আর ক্রেতার দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে না। তাতে পরিবহণ খরচ অনেকটাই বাঁচবে। আর ক্রেতারা এবার থেকে কৃষকদের কাছে যাবেন ফলস কিনতে। পাশাপাশি এতদিন সরকার যেভাবে ফসল কিনত আগামী দিনেও সেইভাবে ফলস কিনবে বলেও জানিয়েছেন নরেন্দ্র সিং তোমর। কৃষি পণ্যে নূন্যতম সহায়ক মূল্যও জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কৃষি বিল প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী সরাসরি নিশানা করেন কংগ্রেসকে। তিনি বলেন নির্বাচনী ইস্তেহারে কংগ্রেস এই বিলের কথা উল্লেখ করেছিল। অন্তঃরাজ্য বাণিজ্যে জোর দেওয়ার কথা বলেছিল।কিন্তু এখন কংগ্রেস উল্টো কথা বলছে। কৃষি বিল নিয়ে কংগ্রেস রাজনীতি করছে বলেও অভিযোগ তাঁর। কারণ কংগ্রেস এপিএমসি অ্যাক্ট বদলের কথাও বলেছে। এর পরই কংগ্রেস নেতাদের দিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা একবার বলুক যে তাঁরা নির্বাচনী ইস্তেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে আসছে। তারপরই কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ শুনবেন বা সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন তিনি। কংগ্রেস কৃষকদের দিগভ্রষ্ট করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। দেশে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা কমেছে। তাই কৃষকদের আঁকড়ে ধরেই বিক্ষোভে নেমে হারানো জমি ফিরে পেতে চাইছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কৃষি বিল নিয়ে তিনি আরও বলেন, এই বিল কৃষকদের নিরাপত্তা দেবে। এই বিলে জমির নিরাপত্তা দেবে। জমি নিয়ে কোনও চিক্তি করতে পারবে না ব্যবসায়ীরা। নতুন বিল অনুযায়ী কৃষক যে কোনও সময় ব্যবসায়ী বা কর্পোরেটদের সঙ্গে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চুক্তি থেকে ইচ্ছে মত বার হতে পারবে না। কৃষকদের চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিয়ে তবেই ছাড়া পাবে। তাঁর কথায় এই বিল ব্যবসায়ীদের গ্রামে যেতে বাধ্য করতে আর কৃষকদের সঙ্গে একটি সুস্থ সম্পর্ক তৈরি হবে। পাশাপাশি তিনি আরও বলেছেন কোনও সমস্যা হল এসডিএম তিরিশ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করবে। তিনি আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন খাদ্য় উৎপাদনে ভারত আত্মনির্ভর। ভারতের প্রয়োজনের তুলনায় ফাসল বেশি তৈরি হয়। তাই এই বিলে পাশ হলেও দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে না। বিরোধীরা রাজনীতি করার জন্যই এই বিলগুলি নিয়ে হৈহট্টগোল করছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।